স্টাফ রিপোর্টার: ভূমিকম্পে কেঁপে উঠলো সারাদেশ। শীতের ভোরে তখনো অনেকে ঘুমিয়ে। তীব্র কম্পনে আতঙ্কে অনেকেই জেগে ওঠেন। কী করবেন বুঝতে পারছেন না। কংক্রিটের বাড়িটি যেন দুলছে। ঘরের জিনিসপত্র থরথর করে কাঁপছে। সিলিং ফ্যান এপাশ থেকে ওপাশ করে দুলছে। গতকাল সোমবার বাংলাদেশ সময় ভোর ৫টা ৭ মিনিটে রাজধানীসহ সারাদেশ কেঁপে ওঠে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিলো ৬ দশমিক ৭। উত্পত্তিস্থল ছিলো মনিপুরের ইম্ফল। আতঙ্কে অনেকে হুড়মুড়িয়ে বাড়িঘর ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন। চিত্কার-চেঁচামেচিতে এক ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ভূমিকম্পে আতঙ্কিত হয়ে রাজধানীর জুরাইনে আতিকুর রহমান (২৩), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হলের প্রধান বাবুর্চি খলিলুর রহমান (৭০), লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার ঘোনাবাড়ি গ্রামের নূর ইসলাম (৫৫), জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার জাঙ্গালিয়া গ্রামের দর্জি সোনা মিয়া (৩৮), পঞ্চগড় সদর উপজেলার তাহমিনা বেগম (৫৫), সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে আবুল কাসেম (৪০) ও বগুড়ার নন্দীগ্রামের দুর্জয়পুর গ্রামের কৃষক আহমেদ আলী (৫০) মারা গেছেন। এরা সবাই আতঙ্কিত হওয়ার পর হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান বলে জানা গেছে। আতঙ্কিত হয়ে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অর্ধশত ব্যক্তি আহত হয়েছে।
ভারতের মনিপুর রাজ্যের ইম্ফলে ভূমিকম্পন স্থলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ভূমিকম্পে রাজ্যে শতাধিক বাড়ি ধসে যায়। এতে ৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছে শতাধিক। ভূমিকম্পের পরই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টুইটে লিখেন, আসামের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ করে রাজ্যের খবর নিয়েছি। রাজ্যের প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-বিদ্যা বিভাগের প্রাক্তন প্রধান হরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য জানান, ভোরের ভূমিকম্পের পর সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ একবার কেঁপে ওঠে গোটা উত্তর-পূর্ব ভারত। তবে তার মাত্রা ছিলো অনেক কম। মণিপুরে উদ্ধারকার্যে বিপর্যয় মোকাবেলা বাহিনীর দুইটি দলকে পাঠানো হয়েছে। আরও ১২ দলকে তৈরি রাখা আছে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। গোটা এলাকায় বিদ্যুত এবং টেলিফোন ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। রাস্তাঘাটসহ অনেক বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে।
রাজধানী ঢাকার বংশালের আগাসাদেক রোডের ছয় তলা বিশিষ্ট সুইপার কলোনি, কদমতলীতে একটি ৯ তলা ভবন ও পুরান ঢাকার মালিটোলায় একটি সাত তলা ভবন হেলে পড়ে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অফিস ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-বেরুনী হলের সম্প্রসারিত ভবন ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাওল হলের বিভিন্ন দেয়ালে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম, সিলেট, জয়পুরহাট ও নীলফামারীর সৈয়দপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বেশ কয়েকটি বাড়ি ও ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। ভূমিকম্পে সাভারের বাইপাইলে তিতাস গ্যাস লাইনে আগুন ধরলে ওই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে ফাঁয়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণ করে। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, উত্পত্তিস্থলে রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিলো ৬ দশমিক ৭। উত্পত্তিস্থল ভারতের মণিপুর রাজ্যের ইম্ফল থেকে ২৯ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে টামেংলং জেলার নোনি গ্রামে। এটি বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সীমান্ত সংলগ্ন এলাকা।
ঢাকার আবহাওয়া অধিদফতর থেকে জানানো হয়, রাজধানীর আগারগাঁওয়ের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকে ভূমিকম্পের উত্পত্তিস্থল ৩৫৩ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম বলেন, সিলেট সীমান্তে আসামের ডাউকি ফল্ট থেকে ১৩০ কিলোমিটার দূরবর্তী ইম্ফলে ভূকম্পনের সৃষ্টি। তিনি বলেন, সাধারণত মাটির ৭০-৮০ কিলোমিটার গভীর থেকে ভূকম্পন হয়। তবে সোমবারের কম্পন ছিলো মাটির ৩৫ কিলোমিটার গভীরে। ফলে একটু জোরে ধাক্কা লেগেছে।