স্টাফ রিপোর্টার: ২৩৪ পৌরসভায় আগামীকাল অনুষ্ঠেয় নির্বাচনকে সামনে রেখে গত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে মেয়র ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থীদের টানা ২০ দিনের প্রচার-প্রচারণা। এবারের নির্বাচনের বিশেষত্ব হচ্ছে পৌর মেয়র পদে রাজনৈতিক দলগুলো সরাসরি তাদের দলীয় প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যেমন এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে, তেমনি অংশ নিচ্ছে বিএনপিও। সেই সুবাদে সংশ্লিষ্ট পৌরসভাগুলোতে দীর্ঘদিন পর ঝুলছে নৌকা আর ধানের শীষ প্রতীক সম্বলিত মেয়র প্রার্থীদের পোস্টার। অবশ্য কাউন্সিলর পদে নির্বাচন অরাজনৈতিকভাবেই হচ্ছে।
গত ২০ দিনের প্রচার-প্রচারণা চলাকালে বিভিন্ন এলাকায় ঘটেছে সংঘর্ষ, সহিংসতা। এই পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে যেসব এলাকায় রাজনৈতিক দলগুলোর বিদ্রোহী প্রার্থী আছে ও যেখানে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা রয়েছে সেসব এলাকায় বিশেষ গুরুত্ব দিতে মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছে ইসি। ভোটের আগের রাতকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ইতোমধ্যেই মাঠপর্যায়ে সতর্ক বার্তা পাঠানো হয়েছে। নির্বাচন কেন্দ্রিক সহিংসতা রুখতে নানা পদক্ষেপও নেয়ার কথা জানিয়েছেন ইসির শীর্ষ কর্তারা।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ গতকাল রাতে কার্যালয় ত্যাগের সময় সাংবাদিকদের বলেন, পৌর নির্বাচনে ভোটারদের কোনো শঙ্কা নেই। পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তিনি নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানান। নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ বলেন, সহিংসতার শঙ্কা থাকলেও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে ইসি কঠোর অবস্থানে রয়েছে। ভোটের আগের রাতকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে মাঠ প্রশাসনকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। সকল বহিরাগতদের অবস্থান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তিনি বলেন, কোথাও গোলযোগের খবর পাওয়া গেলে তাত্ক্ষণিক ভোটকেন্দ্র বন্ধ করে দেয়া হবে। এ ব্যাপারে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া রয়েছে।
ইসির সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যে ব্যালট পেপার রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কার্যালয়ে পৌঁছেছে। ভোটের আগের রাতে কেন্দ্রে কেন্দ্রে তা পৌঁছে যাবে। মেয়র পদে রাজনৈতিকভাবে অনুষ্ঠেয় এ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ২৩৩, বিএনপির ২২৩, জাতীয় পার্টি-জাপার ৭৪, জাতীয় পার্টি-জেপির ৬ জনসহ ২০টি রাজনৈতিক দলের ৬৫৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া স্বতন্ত্র ২৮৫ জন নির্বাচন করছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ-বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। নির্বাচনে পিরোজপুর সদর, জামালপুরের মাদারগঞ্জ, গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া, ফেনী সদর, পরশুরাম, নোয়াখালীর চাটখিল ও চাঁদপুর উত্তর মতলবের ছেংগারচরে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
পর্যবেক্ষণে চার কমিশনার: নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পর্যলোচনার জন্য ৪জন নির্বাচন কমিশনারকে বিভাগওয়ারী দায়িত্ব বন্টন করা হয়েছে। এর মধ্যে নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল মোবারক (ঢাকা), মোহাম্মদ আবু হাফিজ (রাজশাহী-রংপুর), ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. জাবেদ আলী (খুলনা-বরিশাল) ও মো. শাহ নেওয়াজ (চট্টগ্রাম-সিলেট) দায়িত্ব দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগে গতকাল সোমবার সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জের সংসদ সদস্য আমজাদ হোসেন মিলনকে সতর্ক করে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সাথে রায়গঞ্জের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. আবদুল্লাহ আল পাঠানের প্রার্থিতা কেন বাতিল করা হবে না-তা জানতে চেয়ে কারণ দর্শানো নোটিশ পাঠানো হয়েছে। এখনো পর্যন্ত যেসব এমপি নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করছেন তাদেরকে মৌখিকভাবে কমিশন এলাকা ছাড়তে বলেছে।
সাত সদস্যের মনিটরিং সেল: নির্বাচনে ভোটের দিন পর্যবেক্ষণ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তদারকির জন্য সাত সদস্যের মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে। সেলের নেতৃত্বে রয়েছেন জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনু বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহউদ্দিন। অন্য সদস্যরা হলেন-স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা, একজন পুলিশ সুপার (এসপি), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), ৱ্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (ৱ্যাব), আনসার-ভিডিপির মেজর পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সহকারী পুলিশ সুপার অথবা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পর্যায়ের কর্মকর্তা।
বিএনপির অভিযোগ গতানুগতিক: পৌরসভা নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে বিএনপির অভিযোগ গতানুগতিক বলে মনে করছে কমিশন। নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো নির্বাচনের সময় এ ধরনের অভিযোগ করে থাকে। তবে বিএনপির অভিযোগগুলো তারা গুরুত্বের সাথে খতিয়ে দেখেছেন। অভিযোগের সত্যতা পেলে কমিশন ব্যবস্থা নিয়েছে।
আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত ৭৪ হাজার সদস্য: নির্বাচনে মোবাইল ফোর্স হিসেবে পর্যাপ্ত সংখ্যক ৱ্যাব, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত থাকবে ৭৪ হাজার পুলিশ-আনসার-ভিডিপির সদস্য। প্রতি সাধারণ কেন্দ্রের নিরাপত্তায় কমপক্ষে ৫ জন পুলিশ (অস্ত্রসহ), অঙ্গীভূত আনসার একজন (অস্ত্রসহ), অঙ্গীভূত এপিসি (অস্ত্রসহ), অঙ্গীভূত আনসার-ভিডিপি ১২ জন (নারী-৬, পুরুষ-৬)। পার্বত্য এলাকা, দ্বীপাঞ্চল ও হাওর এলাকায় শুধু পুলিশের সংখ্যা বেড়ে দুজন হবে। নির্বাচন কমিশনের ভাষায় গুরুত্বপূর্ণ (ঝূঁকিপূর্ণ) কেন্দ্রে অস্ত্রধারী পুলিশের সংখ্যা একজন বৃদ্ধি করে ৬ জনসহ মোট ২০ সদস্যের নিরাপত্তা দল থাকবে।
সিইসির ব্রিফিং: পৌরসভা নির্বাচনে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এবং নির্বাচন নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ। তিনি বলেছেন, প্রয়োজনের তুলনায় বেশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করেছি। আশা করছি কোনো সমস্যা হবে না। গতকাল সোমবার রাত পৌনে ৯টায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে নিজ কার্যালয় থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। আমরা আগেই বলেছি সব ধরনের প্রস্তুতি আমরা নিয়ে রেখেছি। ইতোমধ্যে নির্বাচনের সব সরঞ্জাম জেলায় জেলায় পৌঁছে গেছে। ভোটের আগেই কেন্দ্রে কেন্দ্রে সেগুলো পৌঁছানো হবে। সিইসি বলেন, ‘সব জায়গায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এবার প্রচুর বিজিবি মোতায়েন করেছি। আরও কম মোতায়েনের কথা ছিলো। কিন্তু পরিস্থিতি বিবেচনা করে তা বাড়িয়েছি। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে অধিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও তিনি নিশ্চিত করেন।