স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আকন্দবাড়িয়ায় বাউল উৎসবের প্রধান আয়োজক জাকারিয়া হোসেন ওরফে জাকির খুনের ঘটনায় বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী গতকাল সোমবার সকালে সন্দেহভাজন দুজনকে ধরে পুলিশে দিয়েছে। সদর থানার পুলিশ তাদের এই খুনের মামলায় গ্রেফতার দেখিয়েছে। এ নিয়ে গ্রেফতারের সংখ্যা দাঁড়ালো তিন। গতকাল গ্রেফতার হওয়া দু ব্যক্তি হলেন আকন্দবাড়িয়া গ্রামের হঠাৎপাড়ার মৃত দুলাল মণ্ডলের ছেলে আনারুল হক ওরফে টেংরা (২৫) ও ক্লাবপাড়ার বাদল হোসেনের ছেলে রানা (৩০)। এর আগে রোববার মেহেরপুর সদর উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের দরবেশপুর গ্রাম থেকে এজাহারভুক্ত আসামি মুক্তার হোসেনকে (৩৫) গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের দাবি, গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বজলুর রহমান জানান, মুক্তারকে গতকাল চুয়াডাঙ্গার আমলি আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আজ মঙ্গলবার অন্য দুজনকে আদালতে হাজিরের পর ৩জনকে রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করা হবে।
জাকারিয়া খুনের পেছনে আকন্দবাড়িয়া গ্রামকেন্দ্রিক একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী জড়িত বলে জানিয়েছে নিহতের পরিবার, স্বজন ও পুলিশ। তাদের ভাষ্য, হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার ৩জনই ওই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সক্রিয় সদস্য, যাদের সামাজিক অনাচার ও অন্যায়ের ধারাবাহিক প্রতিবাদ করে আসছিলেন জাকারিয়া। গ্রামবাসীর ধারণা, পথের কাঁটা সরাতেই সন্ত্রাসীরা ওই খুনের ঘটনা ঘটায়।
জাকারিয়ার এক নিকট আত্মীয় বলেন, চার-পাঁচ মাস আগে ওই সন্ত্রাসীরা খাদিমপুর গ্রামের বেল্টু মিয়া নামে এক ব্যক্তির পানের বরজের উপকরণ (৫০টি নলাগাছ বা জীবনগাছ) জোর করে কেটে নেয়। ওই ঘটনার প্রতিবাদ জানান জাকারিয়া। এছাড়া গ্রামের মেয়েদের হয়রানির প্রতিবাদ করলে সন্ত্রাসীরা তাকে দেখে নেয়ার হুমকি দেয়।
গতকাল সরেজমিনে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে বাড়ি থেকে স্থানীয় গুচ্ছগ্রামে অনুষ্ঠিত বাউল উৎসবে যাওয়ার পথে সন্ত্রাসীরা জাকারিয়াকে খুন করে। ওই রাত থেকেই আনারুল ও রানা এবং তাদের দলনেতাসহ আরও কয়েকজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী আত্মগোপনে চলে যায়। এরপর থেকে গ্রামবাসী গ্রামে দিন-রাত পাহারা বসায়। গতকাল সকালে গ্রামে ঢুকলে আনারুলকে তার বাড়ি থেকে এবং রানাকে রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে পিটুনি দেয় গ্রামবাসী। খবর পেয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বজলুর রহমান আকন্দবাড়িয়ায় গেলে গ্রামবাসী ওই দুজনকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। এদিকে আনারুল ও রানাকে ধরে পুলিশে হস্তান্তর করার পর জাকারিয়ার পরিবারকে সন্ত্রাসীরা হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল সোমবার বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে দু দফা মুঠোফোনে কল করে জাকারিয়ার এক নিকট আত্মীয়কে হুমকি দেয়া হয় বলে তিনি জানিয়েছেন। চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি সাইফুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় সন্ত্রাসীরাই এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলে তথ্য আমরাও পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।