অনুশোচনা মানবিক গুণ। অনুশোচনা থেকে দায়বোধ জাগতে পারে। জিহাদ ও নীরব দুজনেই খেলতে গিয়ে পড়ে মারা গেছে। ওদের সুহালে বেড়ে ওঠার পরিবেশ না দিতে পারার দায় এড়াতে পারে না সমাজ। ব্যর্থতা সকলের।
খেলতে গিয়ে মৃত্যুর খাদে পড়ে লাশ হয়েছে। কাঁদিয়েছে দেশবাসীকে। দায়িত্বশীলদের তথা যাদের কারণে ওই দু শিশুসহ অসংখ্য শিশুকে ওভাবে ঝরে যেতে হচ্ছে তাদের মধ্যে কি ন্যূনতম অনুশোচনা জেগেছে? সাফ জবাব- ‘না’। শিশু জিহাদের মৃত্যুর অনেকদিন পর একইভাবে খেলতে গিয়ে ম্যানহোলে পড়ে মরতে হলো শিশু নীরবকে। জিহাদের মৃত্যু যদি দায়িত্বশীলদের একটু কর্তব্যপরায়ণ করতো তা হলে নিশ্চয় নীরবকে ওভাবে ম্যানহোলে পড়ে ঝরতে হতো না।
একটি করে ঘটনা ঘটে, একে অন্যের ওপর দায় চাপিয়ে নিজেকে রক্ষার অজুহাত খাড়া করার যেন প্রতিযোগিতা চলে। অনুশোচনার বদলে এসব ঘটনাপ্রবাহ অনেকটাই গা সওয়া হয়ে গেছে। তা না হলে যেখানে সেখানে বৈদ্যুতিক তার, খোলা ম্যানহোল, পুরনো আলগা কুয়ো, অরক্ষিত বড় পাইপ কেন থাকে? ঘটনা ঘটলে ওটা আমাদের নয়, ওদের বলে দায় এড়ানোর রেওয়াজে আড়াল হয়ে যায় মৃত্যুকূপগুলোর মুখ। আর তাতে পড়ে প্রাণ হারায় ফুটফুটে শিশু।
রাজধানীর অধিকাংশ সড়কের এদিক-ওদিক একটু হাঁটাচলা করলেই অকাতরে খোলা ম্যানহোল অথবা রাস্তার পাশে উন্মুক্ত নালা অথবা নালার ওপরের ফুটপাতের স্ল্যাব না থাকার প্রমাণ মিলবে। চুয়াডাঙ্গাতে? আছে, কলেজ রোর্ডের পাশের বড় ড্রেনের বেশ কিছু স্থান রয়েছে যা মৃত্যুকূপের মতোই। ভাগ্যিস এখনও কারো প্রাণ কাড়েনি। তবে উঠতি বয়সীকে খোড়া করেছে বলে তথ্য আছে। ঢাকার ঘটনাপ্রবাহ চুয়াডাঙ্গাকে সতর্ক হওয়ারই আগাম ইঙ্গিত নয়কি?
আমরা আমজনতাও সব দোষের ঊর্ধ্বে। আমরা যাবতীয় দুর্ভোগের শিকার এবং জীবনটা বেশি আমাদেরই যায়। কিন্তু আমাদেরও কি হুঁশ ফেরে? ওই নালার আশপাশে যেসব পরিবারের বাস, নালার খোলা মুখে ঢাকনা বা প্রতিবন্ধক তো তারাও দিয়ে রাখতে পারতেন। খুব বেশি তো খরচ হয় না। হয়তো তারা ভেবেছেন, এটা তাদের দায়িত্ব নয়। যা করার সরকার করবে, এটা নির্জীব দায়িত্বহীন মানসিকতা। খেসারতের পরও দায়িত্ববোধ জাগে না।
শুধু সরকারি দায়িত্বশীলদের দিকে তাকিয়ে দায় এড়ানো বা উদাসীনতার চেয়ে নিজের এলাকা নিরাপদ করার কাজে আন্তরিক হওয়া দরকার। আমজনতার দেয়া করের টাকায় মাসে মাসে মাইনে নেয়া কর্তাদেরও কতর্ব্যপরায়ণতা কাম্য।