স্টাফ রিপোর্টার: ‘শান্ত চুয়াডাঙ্গাকে অশান্ত করতে কিছু বিপথগামী একের পর এক অঘটন ঘটাচ্ছে, আর পুলিশ সুপার তাদেরই লাই দিয়ে পরিস্থিতিটাকে উত্তপ্ত করে তুলছে। তারই অংশ গত বৃহস্পতিবার রাতে চুয়াডাঙ্গা শহীদ হাসান চত্বরে গুলি, লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল নিক্ষেপ। পুলিশ গুলি ছুড়েছে শুনে পরিস্থিতি আরো ভয়ঙ্কর হতে পারে ভেবেই দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। থানায় এসপিকে প্রশ্ন করি- গুলি কেন? কার অর্ডারে গুলি করা হলো? এসপি রশিদুল হাসান সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি। বলেছেন, তদন্ত করে দেখছি।’
গতকাল শুক্রবার বিকেল ৪টায় চুয়াডাঙ্গা কবরী রোডস্থ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের পুনর্নির্বাচিত সভাপতি জাতীয় সংসদের হু্ইপ বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন উপরোক্ত বক্তব্য দিয়ে বলেন, গণমানুষের জন্যই রাজনীতি করি। জনগণের প্রতি, চুয়াডাঙ্গার প্রতি দায়বদ্ধতা অনেক। সেই দায়বদ্ধতা থেকেই এমপি হওয়ার পর সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি চুয়াডাঙ্গাকে শান্ত রাখার। রাজনৈতিক সম্প্রীতিও গড়ে তুলেছি। জামায়াত বাদে সকল দলের সাথেই সম্পর্ক রয়েছে। এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর আমি অবশ্যই সকলের এমপি। সকলকেই ভালো রাখা আমার নৈতিক দায়িত্বেরই অংশ। আমি যখন এরকম ভেবে শান্ত রাখার চেষ্টায় ব্যস্ত, তখন একটি চক্রকে লাই দিয়ে চুয়াডাঙ্গাকে অশান্ত করে তুলেছে।
গতপরশু রাত সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ঘটে যাওয়া ঘটনাবলীর প্রেক্ষিতেই সংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। অবশ্য সাংবাদিক সম্মেলন সাংবাদিকদের সাথে হুইপের চা চক্রে রূপ নেয়। হুইপ ছেলুন জোয়ার্দ্দার এমপি বলেন, ছাত্রলীগের দু জনকে পুলিশ সাতগাড়ি থেকে তুলে নিয়ে আসার পর তার সাথীরা খোঁজ নিতে থানায় যায়। থানার ওসি যখন দুজনকে ধরার কথা অস্বীকার করে তখনই ছাত্রলীগের ছেলেরা চৌরাস্তার মোড়ে সমবেত হয়ে স্লোগান দেয়। ওরা ওদের সতীর্থের খোঁজ না পেয়ে ঢাকার সুত্রাপুর থানার সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে পারে ভেবেই চৌরাস্তায় অবস্থান নেয়। অথচ পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে, গুলি ছোড়ে। এটা শোনার পর একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমার যা করার তাই করেছি। দ্রুত পরিস্থিতি শান্ত করতেই ছুটে গিয়ে প্রশ্ন তুলেছি কেন গুলি? কেন শান্ত চুয়াডাঙ্গাকে অশান্ত করতে পুলিশের উসকানি?
তিনি বলেন, আমি আগেই বলেছিলাম। বিপথগামী ব্যক্তিদের সামলান। ক্ষতি হয়ে যাবে। প্রাণহানি হতে পারে। এসপি শোনেননি বলেই ডিঙ্গেদহের যুবলীগ কর্মী আজিজুলকে খুন হতে হয়েছে। সেই খুন মামলার আসামিদের কেন ধরা হচ্ছে না প্রশ্ন তুলে বলেছি, ওদের ধরে আইনে সোপর্দ করুন। শান্ত চুয়াডাঙ্গাকে শান্ত রাখতে সহায়তা করুন। সেটা শোনেননি। কাউন্সিলের দিন যারা বোমা ফাটালো, পোষ্টার ফেস্টুন তোরণ ছিড়লো তাদের ধরা হলো না। হরিজনপাড়ায় হামলাকারীরা পার পেয়ে গেলো। বোমাবাজ ধরে পুলিশে দেয়ার পরও ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব কেন? খুন মামলার আসামিদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে না ধরলে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় কর্মসূচি হাতে নেয়া হবে।
হুইপ ছেলুন জোয়ার্দ্দার বলেন, ঘটনা শুনে প্রথমে ফোন করেছিলাম। এসপিকে সাত সাতবার ফোন করেও না পেয়ে বাধ্য হয়েই থানায় গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করি। দ্রুত ঘটনাস্থলে না গেলে ক্ষতি হতে পারতো। হয়নি। তাছাড়া আমি তো থানায় কোনো আসামিকে ছাড়াতে যাইনি, থানায় আমাকে দেখে পুলিশ গ্রেফতারকৃতদের ছেড়ে দিতে চায়। আমি তা নেবো কেন? যখনই শুনেছি মামলার আসামি, তখনই বলেছি, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রয়েছে। আদালত থেকে আইনগতভাবেই মুক্ত করে আনা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের পুনর্নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাদুল ইসলাম আজাদ। উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন, আওয়ামী লীগ নেতা মুন্সি আলমগীর হান্নান, খুস্তার জামিলসহ অনেকে। চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, প্রবীণ সাংবাদিক কামরুল আরেফিন, আজাদ মালিতাসহ স্থানীয় পত্র-পত্রিকার সম্পাদক ও সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পরশু রাতে ঘটনার প্রেক্ষিতে বলা হয়, খুন মামলার আসামিদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করা না হলে জেলা আওয়ামী লীগ প্রয়োজনীয় কর্মসূচি হাতে নেবে। এসপি অফিস বা থানা ঘেরাও কর্মসূচি দেয়া হয়নি। আসমানের বরাত দিয়ে যে তথ্য পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে তা সঠিক নয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিকদের অনেকেই বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। জেলা আওয়ামী লীগের মুখপাত্র হিসেবে এক বা দুজনকে দায়িত্ব দেয়ারও অনুরোধ জানানো হয়। ৭ বার ফোন না ধরার কারণে পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবকিছুই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সবই হবে।