স্টাফ রিপোর্টার: প্রতিবন্ধীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে তাদের পাশে দাঁড়াতে বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রতিবন্ধী দিবসের অনুষ্ঠানে তিনি এই আহ্বান জানান। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস পালন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি সবাইকে আবেদন করবো যে, প্রতিবন্ধীরা আমাদের সংসার, সমাজ, দেশের একটা অংশ। তাদেরকে অবহেলা নয়, তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল ও সংবেদনশীল হতে হবে। তারাও যে আমাদের দেশের মূল স্রোতের সেটা সব সময় মনে রাখতে হবে। আর বিশেষ করে, সমাজের যারা বিত্তবান ব্যক্তি আছেন, তারা প্রতিবন্ধীদের সুরক্ষায় ও সহযোগিতায় এগিয়ে আসবেন- সেই আহ্বান আমি জানাচ্ছি। তিনি বলেন, সরকার বর্তমানে ৬ লাখ প্রতিবন্ধীকে মাসিক ৫শ টাকা হারে ভাতা দিচ্ছে। একই সাথে ৬০ হাজার প্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রীকে শিক্ষা উপবৃত্তি দেয়া হচ্ছে। প্রতিবন্ধীদের মাসিক ভাতার পরিমাণ আরো বাড়ানো হবে। প্রতিবন্ধীদের আরও উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যবসায়ী সম্প্রদায়, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, করপোরেট সেক্টর, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তাদেরকেও আমরা আহ্বান জানাবো যে, তারাও যেন প্রতিবন্ধীদের চাকরি দেন, কাজ দেন, তাদের যেন সুযোগ দেন। তাদের মেধা যেন কাজে লাগে সে উদ্যোগ যেন তারা নেন। শেখ হাসিনা জানান, তিনি নববর্ষ বা ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য যে কার্ড ছাপান সেখানে সেটা প্রতিবন্ধীদের আঁকা ছবি দিয়ে তৈরি করা হয়। এবারের প্রতিবন্ধী দিবসের প্রতিপাদ্য ‘একীভূতকরণ: সক্ষমতার ভিত্তিতে সকল প্রতিবন্ধী মানুষের ক্ষমতায়ন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী প্রতিবন্ধীদের চিকিত্সায় মোবাইল থেরাপি ভ্যান ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন এবং প্রতিবন্ধীদের মধ্যে পরিচয়পত্র বিতরণ করেন।
এদিকে ‘একীভূত সক্ষমতার ভিত্তিতে সকল প্রতিবন্ধী মানুষের ক্ষমতায়ন’ প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে চুয়াডাঙ্গায় ২৪তম আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস ও ১৭তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে ৱ্যালি ও আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসন, সমাজসেবা অধিদফতর ও এনজিও সমূহের আয়োজনে দিবসটি উপলক্ষে জেলা প্রশাসক কার্যালয় চত্বর থেকে বর্ণাঢ্য ৱ্যালি বের করা হয়। ৱ্যালিতে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। পরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে সংক্ষিপ্ত আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আনজুমান আরার সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুস। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা সমাজকল্যাণ পরিষদের সহসভাপতি মুন্সি আলমগীর হান্নান। জেলা সমন্বিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রমের রিসোর্স শিক্ষক মনোজ কান্তি রায়ের সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন জেলা তথ্য অফিসার আবু বক্কর সিদ্দিক, জেলা সমাজসেবা অফিসার আব্দুল্লাহ আল সামি, ওজোপাডিকো লিমিটেডের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুক্ত গীন, সহকারী কমিশনার মুসফিকুল আলম হালিম, টুকটুক তালুকদার, দামুড়হুদা প্রতিবন্ধী বন্ধন সংস্থার সভাপতি আলী হোসেন, জেলা ব্র্যাক প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর আলম, প্রত্যাশা সামাজিক উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক বিল্লাল হোসেন, চুয়াডাঙ্গা ইমপ্যাক্ট ফাউন্ডেশনের কোঅর্ডিনেশন ম্যানেজার মিজানুর রহমান প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন হাসপাতাল সমাজসেবা অফিসার আবু নাসির।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুস বলেন, জাতিসংঘ ঘোষিত এ দিবসটি ১৯৯২ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালন করা হচ্ছে। বন্ধিতা বিষয়ে সচেতনতার প্রসার এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মর্যাদা সমুন্নতকরণ, অধিকার সুরক্ষা এবং উন্নতি সাধন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতিবছর দিবসটি পালন করা হয়। এছাড়া রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক জীবনসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সম্পৃক্ত করার সুফল সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। বর্তমান সময়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য একীভূত সমাজ নির্মাণে এবং একীভূত শিক্ষা বাস্তবায়নে সবাই কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মূল ধারায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে এর কোনো বিকল্প নেই। তাই সব ধরনের প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিবন্ধীবান্ধব করা হচ্ছে। বক্তব্য রাখেন জেলা সমাজকল্যাণ পরিষদের সহসভাপতি মুন্সি আলমগীর হান্নান, জেলা ব্র্যাক প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর আলম, চুয়াডাঙ্গা ইমপ্যাক্ট ফাউন্ডেশনের কোঅর্ডিনেশন ম্যানেজার মিজানুর রহমান, দামুড়হুদা প্রতিবন্ধী বন্ধন সংস্থার সভাপতি আলী হোসেন, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কার্যক্রমের শিক্ষার্থী আব্দুল করিম প্রমুখ। বক্তব্যে অতিথিবৃন্দ সকল প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট দফতরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান। ব্র্যাক ২০০৩ সাল থেকে একীভূত শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে এবং পাশাপাশি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা ও উপকরণ দিয়ে সহযোগিতা করছে। এ বছর প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে ৯টি হুইল চেয়ার বিতরণ করা হয়েছে বলে জানান জেলা ব্র্যাক প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর আলম।
চুয়াডাঙ্গা পুরাতন পাবলিক লাইব্রেরির প্রত্যাশার প্রকল্প অফিসে একীভুক্তকরণ সক্ষমতার ভিত্তিতে সকল প্রতিবন্ধী ক্ষমতায়নে আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস ও জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে ৱ্যালি ও আলোচনাসভা শেষে প্রতিবন্ধীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ, সহায়ক উপকরন ও সনদপত্র বিতরণ করা হয়। বিকেল ৩টার দিকে প্রত্যাশা সামাজিক উন্নয়ন সংস্থার আয়োজনে ডিআরআরএ ও এসএলএফ নেদারল্যান্ডমস’র সহযোগিতায় প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে ৱ্যালি শেষে আলোচনাসভায় প্রত্যাশা সামাজিক উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক বিল্লাল হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন যুব উন্নয়ন অধিদফতরের উপপরিচালক জাহিদুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা খাইরুল ইসলাম, সেলফ হেলপ গ্রুপের সভাপতি আলী হোসেন, প্রতিবন্ধীর অভিভাবক শারমিন খাতুন, প্রত্যাশার সমন্বয়কারী সাইদুর রহমান প্রমুখ। আলোচনা শেষে ৬০ জন প্রতিবন্ধীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ, ৩ জন প্রতিবন্ধীর মাঝে সহায়ক উপকরণ হেয়ারিং এইড ও ৩০ জন প্রশিক্ষার্থী প্রতিবন্ধীদেও মাঝে সনদপত্র বিতরণ করেছে।
ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দামুড়হুদার কার্পাসডাঙ্গা আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস পালন করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় কারিতাস আলো ঘর প্রকল্পের উদ্দ্যোগে কানাইডাঙ্গা শিশু শিক্ষা কেন্দ্রে এক আলোচনাসভা ও পুরষ্কার বিতরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায়সভায় সভাপতিত্ব করেন ব্যবসায়ী মজিবর রহমান। উপস্থিত ছিলেন মাঠ কর্মকর্তা মাহবুব সরকার, ইউপি সদস্য সুলতান মল্লিক, অলক সরকার ও মিন্টু মণ্ডল।
ভেড়ামারা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস পালিত হয়েছে। গতকাল সকালে দিবসটি উপলক্ষে ভেড়ামারা উপজেলার বাহাদুরপুর প্রতিবন্ধী কল্যাণ সংস্থার আয়োজনে ৱ্যালি, আলোচনাসভা ও প্রতিবন্ধীদের মাঝে হুইল চেয়ার, ক্র্যাচ ও কম্বল বিতরণ করা হয়। বাহাদুরপুর প্রতিবন্ধী কল্যাণ সংস্থার সম্মিলিত প্রাইমারি স্কুল প্রাঙ্গণে আয়োজিত আলোচনাসভায় প্রতিবন্ধী কল্যাণ সংস্থার সাধারণ সম্পাদক খাইরুল ইসলাম রিক্তার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাহাদুরপুর প্রতিবন্ধী কল্যাণ সংস্থার সভাপতি মনি ও মনোমহন গ্রুপের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম মনি। বক্তব্য রাখেন প্রতিষ্ঠানের পরিচালক আলিফ সোলাইমানসহ স্থানীয় জন প্রতিনিধিরা। এ সময় প্রতিবন্ধীদের মাঝে ৫টি হুইল, ৫টি ক্র্যাচ চেয়ারসহ ২০০টি কম্বল বিতরণ করা হয়।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, জেলা প্রশাসন ও জেলা সমাজসেবা অধিদফতর মেহেরপুরের যৌথ উদ্যোগে আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, ৱ্যালি ও আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় মেহেরপুর সদর উপজেলা পরিষদের সামনে থেকে একটি ৱ্যালি বের হয়। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) খায়রুল হাসানের নেতৃত্বে ৱ্যালিটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে জেলা সমাজসেবা অধিদফতরের উপপরিচালক আবু বকর সিদ্দিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনাসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) খায়রুল হাসান। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. শাহীনুজ্জামান, সহকারী কমিশনার দেলওয়ার হোসেন, শহর সমাজসেবা কর্মকর্তা তৌফিকুর রহমান প্রমুখ। এর আগে সকাল ৯ টায় সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।