ঝিনাইদহে আ’লীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধসহ আহত ২
ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ শহরে এমপি ও মেয়র গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে সুমন (২৮) নামে কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক গুলিবিদ্ধ ও রাসেল নামে এক যুবলীগ কর্মী আহত হয়েছেন। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
গুলিবিদ্ধ সুমন কালীগঞ্জের শিবনগর গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে। আহত যুবলীগ কর্মী রাসেল নদীপাড়ার জামাল উদ্দীনের ছেলে।
জানা গেছে, আধিপত্য বিস্তার ও ২৭ লাখ টাকার ঠিকাদারী কাজের বিরোধ নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য পৌর মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান বিজুর সমর্থকদের মধ্যে এই পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটে। বর্তমানে কালীগঞ্জ শহরে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। মেয়রের বাড়িতে দু’দফা হামলার চেষ্টা করেছে এমপি গ্রুপ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছেন।
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন জানান, বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে লাঠিসোটা নিয়ে কালীগঞ্জ পৌরসভার শ্রীরামপুর বাকুলিয়া সড়কের একটি কাজ বন্ধ করতে যান এমপি গ্রুপের লোকজন। এ সময় মেয়রের উপস্থিতিতে তার লোকজন জোটবদ্ধ হয়ে এমপি গ্রুপের লোকজনকে ধাওয়া করে এবং যুবলীগ কর্মী রাসেলকে মারধর করে। তিনি আরো জানান, মঙ্গলবার রাসেলসহ তার অনুসারীরা এই সড়কের কাজ বন্ধ করে শ্রমিকদের মারধর করে। কাজ বন্ধ করে ঠিকাদারের উদ্দেশে তারা শাসিয়ে আসেন “এমপির সঙ্গে ঝামেলা মিটিয়ে কাজ করতে”। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, বুধবার যুবলীগ কর্মী রাসেল মারধর খাওয়ার পর এমপি গ্রুপের লোকজন জোটবদ্ধ হয়ে মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান বিজুর বাড়িতে হামলার চেষ্টা চালায়। এ সময় মেয়রের বাড়ি থেকে ছোড়া গুলিতে আহত হন ছাত্রলীগ নেতা সুমন। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ও পরে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. নাহিদুল ইসলাম জানান, ছাত্রলীগ নেতা সুমন হাতে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
এদিকে ছাত্রলীগ অভিযোগ করেছে মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান বিজু তার লাইসেন্স করা অস্ত্র দিয়ে গুলি চালিয়েছেন। গুলিতে আহত ছাড়াও মেয়রের লোকজনের পিটুনিতে ৭/৮ জন এমপি সমর্থক আহত হন।
তবে মেয়র জানান, কারো লক্ষ্য করে নয়, তিনি কেবল ফাঁকা গুলি ছুড়েছেন। তার গুলিতে কেউ আহত হননি।
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন জানান, বর্তমান পরিস্থিতি শান্ত। দুই গ্রুপের মধ্যে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। মেয়রের বাড়িতে দুই স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। মেয়র ও এমপি গ্রুপ মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। যে কোন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার বিকালে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌরসভার ২৭ লাখ টাকার একটি রাস্তার কাজ স্থানীয় সরকার দলীয় এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারের অনুসারীরা বন্ধ করে দেন। এমপির সঙ্গে ঝামেলা মিটিয়ে কাজ করতে বলেন তারা। এ বিষয়ে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল আজিম আনার জানান, জালিয়াতি ও টেন্ডার গোপন করে মেয়র রাস্তার কাজটি করছেন। মূল টেন্ডারের সঙ্গে এই রাস্তার নাম ছিল না। গোপনে টেন্ডার আহ্বান করা হয়। এ নিয়ে দলীয় লোকজন ক্ষুদ্ধ হয়।
তিনি অভিযোগ করেন, মেয়রের লোকজনই তার নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উপর হামলা করেছে।