সাইবার অভিযানে ধরা পড়েছে ২৩ সংগঠন

স্টাফ রিপোর্টার: ফেসবুকসহ বেশ কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সাময়িকভাবে বন্ধ রেখে সরকার নাশকতাকারী চিহ্নিত করার এক ফাঁদ পাতে। আর সেই ফাঁদে ইতোমধ্যে ধরা পড়েছে ২৩টি সংগঠনের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী। যারা সরকারের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ভিন্ন পদ্ধতিতে এসব সাইবার সাইট ব্যবহার করছে। যেখানে তারা রক্তপাতের মাধ্যমে অনেক ভিআইপি ব্যক্তিসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে হত্যা পরিকল্পনার তথ্য আদান-প্রদান করে। তবে আশার কথা, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রযুক্তিগত সক্ষমতা সাম্প্রতিক সময়ে বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা বিশ্বমানের সাইবার পেট্রোলিংয়ের সক্ষমতা অর্জন করেছে। এ কাজে দেশের কয়েকজন সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষকও বিশেষ অবদান রেখেছেন। এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল শুক্রবার বলেন, উন্নত বিশ্বের মতোই এখন বাংলাদেশ প্রযুক্তি জানা অপরাধীদের সহজেই শনাক্ত করতে পারবে। অল্প সময়ের জন্য ফেসবুক বন্ধ করে অনেক তথ্য আমরা জানার চেষ্টা করেছি। ফলে অপরাধী ধরার মতো অনেক তথ্য আমাদের হাতে এসেছে। তিনি বলেন, অপরাধীরা মনে করছিল যে তারা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে আড়ালে চলে যাবে। কিন্তু আমাদের সাইবার প্রতিরোধ টিম ও গোয়েন্দারা তাদের চেয়েও কৌশলী। অপরাধীদের সব তথ্যই এখন আমাদের হাতে। তারা কিভাবে নাশকতা বা বিশৃঙ্খলার ছক তৈরি করেছে সবকিছুই জেনে গেছি। তিনি জানান, উন্নত বিশ্বেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ রেখে সাইবার পেট্রোলিং করে থাকে। আমরাও সে ধরনের পেট্রোলিং করেছি। আর এর সফলতার অংশ হিসেবে অপরাধীদের মুখোশ ক্রমেই উন্মোচন করা হবে।
জানা গেছে, এ চক্রটি ঢাকায় ও রংপুরে দুই বিদেশি নাগরিক হত্যা, তাজিয়া মিছিলে হামলা, পুলিশের ওপর একাধিক আক্রমণের ঘটনাসহ বিভিন্ন নাশকতার বিষয়েও এসব সামাজিক মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান করে। তবে তারা সবচেয়ে বেশি তথ্য আদান-প্রদান করে ফেসবুকে। এ ক্ষেত্রে বিকল্প উপায়ে প্রক্সি সার্ভারের মাধ্যমে ফেসবুক ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু তাদের এসব কর্মকাণ্ড সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর নজর এড়াতে পারেনি। সব তথ্যই গেটওয়ে পার হওয়ার সময় ধরা পড়ে। সূত্র বলছে, এসব নাশকতা পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের ২৩টি সংগঠনের নাম পাওয়া গেছে। যারা নিজেদের আড়াল করতে সময়ে সময়ে ভিন্ন ভিন্ন নাম ধারণ করে। এটা তাদের পুরনো কৌশল। আসলে এদের মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে জামায়াত-শিবির। আর তাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে তাদের ছায়া টিমের সদস্য এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, এমনকি নামকরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও। এছাড়া কোচিং সেন্টার, ফ্রিল্যান্সিং ও কর্পোরেট হাউজে চাকরি করার পাশাপাশি তাদের ডেডিকেটেড সদস্যরা নানা কৌশলে এসব সাইবার অপরাধে নিজেদের সম্পৃক্ত করছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সাইবার নিরাপত্তায় নিয়োজিত সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে উন্নত বিশ্বের মতোই বাংলাদেশে সাইবার পেট্রোলিং বাড়ানো হয়েছে। কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক বন্ধ থাকায় সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো মনিটরিং করে চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য উদ্ধার করেছে। যেসব সংগঠনের নাম পাওয়া গেছে এরা মূলত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকেন্দ্রিক প্রচার ও প্রপাগান্ডা চালিয়ে থাকে। বিদেশিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে এরা এ কৌশল গ্রহণ করেছে। এসব সংগঠনের তথ্য পর্যালোচনা করতে গিয়ে পাওয়া তথ্যগুলো খতিয়ে দেখছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
জানা গেছে, দেশে অরাজকতা সৃষ্টি, রাজনৈতিক অস্থিরতার কূটকৌশল, বিভিন্ন স্থানে আরও টার্গেট কিলিং, ভিভিআইপি ও ভিআইপিদের হত্যার ষড়যন্ত্রের তথ্য পাওয়া গেছে সাইবার পেট্রোলিংয়ের মাধ্যমে। একই সাথে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্য ও প্রধানমন্ত্রীর কয়েকজন উপদেষ্টাকে নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক ছবি সংযুক্ত করে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানোর চেষ্টা করছিলো। এছাড়া মোবাইলফোনে সরকার কড়াকড়ি আরোপ করায় ফেসবুককে নিরাপদ শলা-পরামর্শের মাধ্যম হিসেবে নেয়া হয়েছিলো। এ মাধ্যমে তারা শিয়া সম্প্রদায় ছাড়াও হিন্দু, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজনের ওপর হামলা করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। গত সপ্তাহে দুই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ায় এরা আরও মরিয়া হয়ে ওঠে। তবে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো যৌথভাবে সাইবার পেট্রোলিংয়ের মাধ্যমে তাদের সাইবার ক্রাইমসংক্রান্ত নানা তথ্য উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
সূত্র জানায়, সামাজিক মাধ্যমকেন্দ্রিক সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো হচ্ছে- আল মুজাহিদীন, হামজা, ভয়েস অব ইসলামী জিহাদ, আনসার আল ইসলাম-১, আনসার আল ইসলাম-২, আনসার আল ইসলাম-৭, আনসার আল ইসলাম-১৩, আনসার উল ইসলাম, আত তামকীন, দাওলাতুল ইসলাম, খিলাফতের সৈনিক, কথিত ইসলামিক স্টেট, মৌমাছি মৌমাছি, সাদাপাতা, জিহাদী জন, নাইক্ষ্যংছড়িবাসী, বান্দরবানবাসী, রক্তাক্ত প্রান্তর, কোরআনের আলো সংসদে জ্বালো, সত্যের পথের সৈনিক, জেরুজালেম ও ইত্তেহাদুল মুজাহিদীন। এদের মধ্যে মৌমাছি মৌমাছি ও সাদাপাতার সাথে সংশ্লিষ্ট দুজনকে একটি গোয়েন্দা সংস্থা জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। অনলাইনভিত্তিক এ সংগঠনগুলো সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক, ব্লগ ও টুইটে সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও যুদ্ধাপরাধীর পক্ষে নানা প্রচারণা চালিয়ে আসছে। তারা ভাইবার, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমেও নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করছে।