আমারটাই শ্রেষ্ঠ, অন্যেরটা নয়, এরকম বিশ্বাস লালনকারীদের কি সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বের অনুসারী বলা যায়? নিজেরটা ভালো হলে ভালোটাই তো মেলে ধরে অন্যদের আকৃষ্ট করে নিজের পক্ষে আনা যায়। তা না করে হিংসাত্মক হয়ে নিজেকে বা নিজের পক্ষকে ছোট করার আড়ালে কি ষড়যন্ত্র নয়?
সারাবিশ্বেই সম্প্রদায় নিয়ে কেমন যেন বিশৃঙ্খলা। কাঠগড়ায় ইসলাম ধর্ম। অথচ এ ধর্ম শান্তির কথা বলে, সম্প্রীতির কথা বলে। তা হলে কেন জঙ্গি তকমা নিয়ে অধিকাংশ অনুসারীকে নোয়াতে হচ্ছে মাথা? আমাদের দেশেও একের পর এক হামলার ঘটনা ঘটছে। যে হামলার জন্য ধর্মান্ধতাকেই শুধু দায়ী করা হচ্ছে না, ইসলামকেই যেন খাটো হতে হচ্ছে। অথচ যারা হামলা চালাচ্ছে, হচ্ছে আত্মঘাতী তারা ইসলাম ধর্মাবলম্বী সকলের প্রতিনিধি নন।
মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশে শিয়া-সুন্নি বিরোধ বিদ্যমান। মাঝে মাঝে তার নগ্ন বহির্প্রকাশ ঘটে। বিশ্ব সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী- ইসলামিক স্টেট নামের আন্দোলনকারীরা মূলত সুন্নি। ফ্রান্সে হামলাসহ বহু হামলারই দায় স্বীকার করেছে এরা। গত পবিত্র মহররমের তাজিয়া মিছিলের পূর্বে পুরান ঢাকায় সিয়া মসজিদের নিকট হামলারও দায় স্বীকার করা হয় বলে পত্র-পত্রিকায় সংবাদ আকারে প্রকাশিত হয়। সর্বশেষ গত পরশু বগুড়ার পল্লিতে এক সিয়া মসজিদে মাগরিবের নামাজের সময় হামলা হয়েছে। মুয়াজ্জিন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কয়েকজন। সিয়া মসজিদে এ হামলাও সমর্থন যোগ্য? যে বা যারা এ হামলার সাথে জড়িত তাদেরকে ধিক্কার জানানো বিবেকবান সকলেরই নৈতিক দায়িত্ব। কেননা, ইসলাম ধর্মতো বটেই অধিকাংশ ধর্মেই শান্তির কথা বলে। তাছাড়া ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়িও তো বারণ। তা হলে হিংসা হানাহানি কেন?
সকল ধর্মালম্বীকেই ধর্মীয় প্রকৃত অনুশাসন সম্পর্কে জানা উচিত। জেনে শুনে বুঝে ধর্মপালনের গুরুত্ব গতানুগতিকতার চেয়ে অবশ্যই অনেক বেশি। আর প্রকৃত ধর্মীয় জ্ঞানে জ্ঞানান্বিত হলে আর যাই হোক অন্ধত্বে আত্মঘাতী হতে উদ্বুদ্ধ করার কেউ বা কোনো গোষ্ঠী সুযোগ পাবে না। আঘাতের পর আঘাত? প্রতিরোধ আর প্রতিহিংসা কি এক? আন্তর্জাতিক চক্রান্তে আঘাতের উদাহরণ অনেক হলেও অন্যের উসকানিতে কোনো ধর্মাবলম্বীর আত্মঘাতী হওয়ার কারণেই যে জঙ্গি তকমা তা বলাই বাহুল্য।
সচেতনতার আলো সর্বত্রে ছড়াতে পারলে চক্রান্তকারী শনাক্তকরণ যেমন সহজ, তেমনই জেনে বুঝে ধর্ম পালন ও নিজের ধর্মের উজ্জ্বলতা মেলে ধরতে পারলে সুফল মিলতে বাধ্য। নিজের ধর্ম পালনের যখন স্বাধীনতা চাইবো, তখন অন্যের ধর্ম পালনের অধিকার ক্ষুণ্ন করবো কেন?