দু ছেলেকে বঞ্চিত করা চলবে না স্লোগানে সোচ্চার প্রতিবেশী

কামরুজ্জামান বেল্টু: যতোটা নজর পিতার সম্পদ সম্পত্তির দিকে, তার সামান্যটুকুও যদি বিছানায় পড়ে থাকা পিতার দিকে পড়তো তাহলে হয়তো কষ্টটা কিছুটা হলেও কমতো। চুয়াডাঙ্গা জেলা দোকান মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আছির উদ্দীন আশু মিয়ার ৭ কন্যাকে ইঙ্গিত করে প্রতিবেশীদের অনেকেই এ মন্তব্য করে বলেছেন, সত্যিই ভাগ্যের নির্মম পরিহাস।
চুয়াডাঙ্গার বহুল পরিচিত বিত্তশালী আশু মিয়া কর্মজীবনে বহু সম্পদ সম্পত্তি গড়লেও জীবনের পড়ন্ত বিকেলে ভোগ দূরাস্ত, মেয়েদের ভাগাভাগির ধরনে তিনি পড়েছেন সমালোচনার মুখে। সুস্থ থাকতে যদি সম্পদ সম্পত্তিগুলো বিলি বণ্টন করে দিতেন তা হলে হয়তো এতোটা জটিলতা দেখা দিতো না। ছেলে-মেয়েদের মামলায়ও জড়াতে হতো না। সে হিসেবে তিনি ব্যবসায়ী জীবনে সফল হলেও সংসার জীবনের শেষ প্রান্তে এসে চরম ব্যর্থই। এ মন্তব্য মহল্লাবাসীর।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের মাঝেরপাড়ার বাসিন্দা আছির উদ্দীন আশু মিয়া বড়বাজার পুরাতন গলির একজন সফল ব্যবসায়ী। তিনি দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন ছাড়াও শিল্প বণিক সমিতিরও নেতৃত্ব দিয়েছেন। প্রায় ৫ বছর ধরে শয্যাগত। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ রোগে আক্রান্ত। বর্তমানে নিজ বাড়িতেই শয্যাগত। তার দু ছেলে ৭ মেয়ে। মেয়েরা সকলেই বিবাহিতা। দু ছেলের মধ্যে বড় ছেলে রনি ওরফে বিপ্লব বিয়ে করলেও স্ত্রী বেশিদিন সংসার করেনি। মানসিক কষ্টে ভুগে অনেকটাই অপকৃতস্থ। আর ছোট ছেলে রুহুল আমিন জেড? সেই সামলাচ্ছিলো পিতার ব্যবসা। পিতার অসুস্থতার সুযোগে এক বোনের বাড়িতে নিয়ে জমি লিখে নেয়ার অভিযোগে ৭ বোনের বিরুদ্ধে মামলাও করেছিলো সে। মামলা বিচারাধীন। এরই মাঝে গত শুক্রবার রাতে অসুস্থ পিতা আছির উদ্দীন আশু মিয়াকে ওষুধ সেবন করিয়ে স্ত্রীকে চিকিৎসকের নিকট নেয়ার পথে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়। রাতেই মারা যায় জেড। পরদিন শোকার্ত বাড়িতে ঘটে নানা নাটকীয় ঘটনা। পিতার জমিজমা নিয়ে সৃষ্ট বিরোধের জের ধরে সদ্য মৃত জেডের স্ত্রীকে কটূক্তিসহ সম্পদ সম্পত্তির হিস্যা নিয়ে মেয়ে ও কয়েক জামাইয়ের নানা মন্তব্যে স্থানীয়রা ফুঁসে ওঠে। রুহুল আমিন জেডের জানাজা শেষ হতে না হতে স্থানীয়রা পিটিয়ে আহত করেন আশু মিয়ার এক জামাই মুক্ত হাজিকে। আরও কয়েকজনকে মারপিটের শিকার হতে হয়। রুহুল আমিন জেডের দাফন সম্পন্ন করা হয়। গতকাল সোমবার বাদ আছর ছিলো তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া মাহফিল। এদিনও শোকার্ত বাড়িতে উত্তেজনার কমতি ছিলো না। কেন? ওই সম্পত্তি।
গতকাল সরেজমনি ওই বাড়িতে গেলে আছির উদ্দীন আশু মিয়ার মেয়ে ইতিসহ শোকার্ত বাড়িতে অবস্থানরত মেয়েরা অভিন্ন ভাষায় বলেন, আমরা আমার মাকে নিয়ে যেতে চাই। অথচ নিতে দিচ্ছে না। আমাদের বন্দি করে রাখা হয়েছে। অবশ্য বন্দির তেমন আলামত পাওয়া না গেলেও সাংবাদিক এসেছে খবর পেয়ে প্রতিবেশী নারীদের ভিড় জমে যায় চোখের পলকে। তাতেই স্পষ্ট বোঝা যায়, আছির উদ্দীন আশু মিয়ার বাড়ির দিকে প্রতিবেশীদের সজাগ নজরদারি বিদ্যমান। প্রতিবেশীদের অনেকেই ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, আছির উদ্দীন আশু মিয়ার বড় ছেলে বিপ্লব বর্তমানে বিকারগ্রস্ত। বিয়ে করলেও বউ থাকেনি। ছোট ছেলে রুহুল আমিন জেড বিয়ে করে সংসার চালাচ্ছিলো। অসুস্থ পিতাকে দেখছিলো। মাত্র ৪০ বছর বয়সেই মারা গেলো। সন্তান হয়নি। ফলে ওর স্ত্রী রেশমা খাতুন এখন অনেকটাই অসহায়। অথচ ওকে ফাঁকি দেয়াই শুধু নয়, অসুস্থ পিতা আশু মিয়াকে ফেলে রেখেই মেয়েরা ওদের মাকে নিয়ে সরে যেতে চায়। এ কারণেই কেউ কেউ বাধা দিয়ে বলেছে, একবার অসুস্থ পিতাকে আলমডাঙ্গার মেয়ের বাড়িতে নিয়ে জমিগুলো সব বোনরা লিখে নিলো, এবার মাকে নিয়ে কী করে কে জানে? সব কিছু এখনই হোক প্রকাশ্যে। গত শুক্রবার মারা যাওয়া রুহুল আমিন জেডের স্ত্রী অবশ্য সম্পদ সম্পত্তি পাওয়া না পাওয়ার বিষয়ে তেমন আগ্রহ প্রকাশ করেনি। অসুস্থ শ্বশুরকে সেবা করায় ব্যস্ত থাকতে দেখা গিয়েছে তাকে। আছির উদ্দীন আশু মিয়ার বাড়িতে ঘটনা প্রবাহের নিষ্পত্তি ঘটানোর লক্ষ্যে পৌর মেয়রের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন অনেকে।