লিওনেল মেসিকে ছাড়াই তো ভালো খেলে বার্সেলোনা! প্রায় দুমাস মাঠের বাইরে ছিলেন চোটের কারণে। মেসিহীন বার্সেলোনার জিততে তাতে কোনো সমস্যাই হয়নি। পরশু মৌসুমের সবচেয়ে বড় পরীক্ষাতেও আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড মাঠে এসেছেন ৫৭ মিনিটে। তার আগেই বার্সেলোনা ৩-০তে এগিয়ে। ম্যাচ তো ততক্ষণে শেষ!
লাস পালমাস ম্যাচে নবম মিনিটে চোট পেয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন। দুমাস পর ফিরলেন। ইভান রাকিতিচের বদলি হয়ে। প্রায় ৯৭৫ মিনিট পর মাঠে নামলেন মেসি। এ সময়টাতে তাঁর অভাব কতটা অনুভব করেছে বার্সেলোনা? শুরুতে অভাবটা বোঝা যাচ্ছিল বটে। তবে সত্যিটা হলো, পরে মেসির অভাব একটুও বুঝতে দেননি নেইমার-সুয়ারেজ। যাতে নেইমারের অবদানটাই বেশি।
শুরুর দিকে অবশ্য মনে হচ্ছিল, মেসিকে ছাড়া বার্সা ঠিক ‘বার্সা’ হয়ে থাকতে পারবে না। মেসিহীন প্রথম ম্যাচটা ছিল চ্যাম্পিয়নস লিগে বেয়ার লেভারকুসেনের সঙ্গে। তাতে জয় এলেও ঘাম ঝরাতে হয়েছে বেশ। এর তিন দিন পর তো লিগে বার্সা হেরেই গেল সেভিয়ার কাছে। কিন্তু তারপর থেকেই সব কীভাবে পাল্টে গেল। শুধু কোপা ডেল রেতে দ্বিতীয় সারির দল নামিয়ে ম্যাড়ম্যাড়ে একটা ড্র। এ ছাড়া বার্সা জিতেছে বাকি সব ম্যাচেই। শুধু জিতেছে বলে নয়, জিতেছে রোমাঞ্চ ছড়িয়েই।
শুধুই কী জয়! প্রতিপক্ষকে রীতিমতো উড়িয়ে দিয়েছে বার্সেলোনা। মেসিকে ছাড়া মোট ১০ ম্যাচ খেলেছে বার্সা (লাস পালমাস ধরে), তাতে গোল করেছে ২২টি। আর বার্সাকে এভাবে উড়িয়ে নেওয়ার দায়িত্বটা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিয়েছিলেন নেইমার ও সুয়ারেজ। এ সময়ে ২৩ গোলের ২০টিই তো এই দুজনের! দুজনেই করেছেন ১০টি করে গোল, আবার দুজন মিলে অ্যাসিস্টও করেছেন ১০টি। পরশুও মেসি মাঠে আসার আগেই এ দুজনের সঙ্গে ইনিয়েস্তার গোলে ম্যাচটা ততক্ষণে পকেটে পুরে নিয়েছে বার্সা।
দল জিতেছে, খেলছিলও ভালো। সঙ্গে মাঠে অবাধ স্বাধীনতার সুযোগ নিয়ে নেইমার-সুয়ারেজও পুরো বিশ্বকে যেন নতুন করে চেনাচ্ছিলেন নিজেদের।
কিন্তু আসলেই কি মেসি আর বার্সার প্রাণভোমরা নেই? নেইমার-সুয়ারেজ আলো কেড়ে নিয়েছেন ঠিকই, তবে যে ব্যাপারটি চোখ এড়িয়ে যায় তা হলো, মেসিহীন এই সময়টাতে বার্সাকে জিতিয়েছে মূলত লুইস এনরিকের কৌশল! আক্রমণে মেসিকে পাচ্ছেন না জেনে এনরিকে চলে গেলেন ‘প্রতি-আক্রমণে’র কৌশলে। একটু ভাবুন তো, এই কয় ম্যাচে মাঝমাঠে কতটা বল দখলে রেখেছে বার্সা? খুব বেশি কী? বরং সবচেয়ে পরিচিত দৃশ্য যেটি ছিল—প্রতিপক্ষ আক্রমণে এলে বল কেড়ে নিয়ে লম্বা পাসে মাঠের অন্য প্রান্তে নেইমার-সুয়ারেজের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া। অথবা মাঝমাঠ থেকে দু-তিনটি পাসে দুজনের পায়ে বল দিয়ে দেওয়া।
এতে দুটো সুবিধা হয়েছে। এক. নেইমার-সুয়ারেজরা অনেক জায়গা পেয়েছেন। দেখা গেল, তাঁদের পায়ে যখন বল গেল, তখন সামনে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড় আছেন দু-তিনজন। আর দ্বিতীয় সুবিধাটা হচ্ছে, রক্ষণ অনেক শক্তিশালী হয়েছে এতে। সর্বশেষ ছয় ম্যাচে যে মাত্র ১টি গোল হজম করেছে বার্সেলোনা। অবশ্য, তাতে পিকে-মাচেরানোদের ফর্মে ফেরার অবদানও অনেক।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, মেসি না থেকেই যদি ভালো কিছু হয়, তবে মেসির দরকার কী? এর উত্তরে প্রথমেই বলতে হচ্ছে, চারবারের বিশ্বসেরা খেলোয়াড়ের ‘প্রয়োজনীয়তা’ নিয়ে প্রশ্ন তোলা রীতিমতো অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। আর ফুটবলীয় বিশ্লেষণ থেকেও মেসির প্রয়োজনীয়তা তো কম নয়। কালকের ম্যাচেই দেখুন, মাঝমাঠের কাছাকাছি থেকে রিয়াল বক্সের বাঁ দিকে জর্ডি আলবার দিকে বাড়ানো মেসির লবটিই তো বার্সার চতুর্থ গোলের ভিত্তি গড়ে দিয়েছে। এর আগে একই রকম জায়গা থেকে রিয়াল বক্সে সুয়ারেজের কাছে বাড়ানো লবটাও তো গোলের সুযোগ তৈরি করেছিল।
এখানেই মেসির মাহাত্ম্য। বল পায়ে সম্মোহনী দৌড়ের পর একক প্রচেষ্টায় গোল করা তো তাঁর কাছে ডাল-ভাত। গত মৌসুমে কোপা দেল রে-তে করা ওই গোলগুলোর জন্য যেমন তাঁকে দরকার, তেমনি প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারদের নিজের দিকে টেনে এনে ফাঁকায় দাঁড়ানো সুয়ারেজ-নেইমারকে লব বা থ্রু-গুলোর জন্যও তো মেসিকে চাই বার্সার। কিংবা পিছিয়ে পড়েও অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের মতো ম্যাচগুলোতে জেতার জন্য তাঁকে চাই বার্সার।
সবচেয়ে বড় কথা, ৫৭ মিনিটে মেসি নামা মাত্রই মানসিকভাবে তখনই ম্যাচ হেরে গিয়েছিল রিয়াল!