গাংনী প্রতিনিধি: নিঃসন্তান নুহু মিয়া ও রেহেনা খাতুন দম্পতির ঘর আলো করেছিলো শিশু সাগর। দু বছর বয়স থেকেই পিতৃমাতৃ স্নেহে সাগরকে কোলেপিঠে করে বড় করছিলেন তারা। সন্তানের অভাব পূরণ করেছিলো সাগর। পালিত বাবা-মায়ের সাথে আপন ছেলের মতোই সম্পর্ক ছিলো সাগরের। কেউ কখনো বুঝতে পারেনি সাগর তাদের আপন ছেলে নয়। এভাবে সুখের ছয়টি বছর পার করে নুহু-রেহেনা দম্পতির বুক খালি করে অবশেষে সাগর চলে গেলো না ফেরার দেশে। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় পালিত পিতার বাড়ির রান্নাঘর থেকে সাগরের লাশ উদ্ধার করা হয়। ছাগলের রশিতে ফাঁস লাগিয়ে তার মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করছেন পরিবার ও প্রতিবেশীরা। ফাঁসি ফাঁসি খেলার ছলে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে জানান তারা। সাগর হোসেন (৮) মেহেরপুর গাংনী উপজেলার আমতৈল গ্রামের দিনমজুর নুহু মিয়ার পালিত ছেলে এবং স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিনের মতো বিকেলে খেলা করছিলো সাগর। এর এক পর্যায়ে নিজ বাড়ির রান্নাঘরে ছাগলের রশির সাথে গলায় ফাঁস দেয়। কিন্তু জোরাজুরি করে ফাঁস ছাড়াতে না পেরে তার মৃত্যু হয়। বিষয়টি কেউ না দেখলেও সাগরকে খুঁজতে গিয়ে তার বাড়ির লোকজন মৃত অবস্থায় দেখতে পায়। এ ঘটনায় নুহু মিয়া ও তার স্ত্রী রেহেনা খাতুন এখন পাগলপ্রায়।
বছয় ছয়েক আগে সাগরকে দস্তক নেন নিঃসন্তান দম্পতি নুহু ও রেহেনা। সাগরের পিতা গাংনী উপজেলার কোদাইলকাটি গ্রামের হ্যাবল মিয়া স্ত্রী সন্তান ফেলে অন্যত্র চলে যায়। মা গাংনীর একটি ক্লিনিকে আয়ার কাজ করেন। সন্তান-সন্ততি নিয়ে সমস্যায় পড়ায় নুহু মিয়াকে ছেলের দত্তক দেন তারা। এদিকে গতরাতে এ সংবাদ লেখার সময় পর্যন্ত সাগরের পিতা-মাতা ঘটনাস্থলে পৌঁছায়নি। তার মাকে খবর দেয়া সম্ভব হলেও পিতার অবস্থান নিশ্চিত না হওয়ায় সংবাদ দেয়া যায়নি বলে জানান নুহুর পরিবার। এদিকে সাগরের লাশ ময়নাতদন্তের উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ।
গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আকরাম হোসেন জানান, এ বিষয়ে গাংনী থানায় অপমৃত্যু মামলা করা হবে। লাশের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারকে ফেরত দেয়া হবে। তবে লাশ কোন পরিবার গ্রহণ করবে তা এখনো পুলিশে জানানো হয়নি। সাগরের পিতা-মাতা গ্রহণ করবেন নাকি নুহু মিয়ার পরিবার গ্রহণ করবেন সে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে সাগরের পিতা-মাতার কাছ থেকে।