পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমান হত্যা মামলায় তাদের একমাত্র মেয়ে ঐশী রহমানকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। মামলার অন্য আসামি ঐশীর বন্ধু আসাদুজ্জামান জনিকে দু বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অপর আসামি ঐশীর আরেক বন্ধু মিজানুর রহমান রনি খালাস পেয়েছেন। ওই মামলায় ঐশীদের বাসার গৃহকর্মী খাদিজা আক্তার সুমি অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তার বিচার চলছে শিশু আদালতে। ২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট রাজধানীর চামেলীবাগে ঘটেছিলো চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা। মাহফুজ-স্বপ্না দম্পতি হত্যাকাণ্ডে তাদের কিশোরী মেয়ের জড়িত থাকার ঘটনা সারাদেশে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছিলো। মাহফুজুর রহমান ও স্বপ্না রহমানের মৃতদেহ উদ্ধারের পরদিন রমনা থানায় গৃহকর্মী সুমিকে নিয়ে আত্মসমর্পণ করে ঐশী। পরে রনি ও জনিকে গ্রেফতার করা হয়। হত্যাকাণ্ডের পরদিন মাহফুজুর রহমানের ছোট ভাই থানায় হত্যামামলা দায়ের করেছিলেন। খুনের দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় ঐশী। পরে স্বীকারোক্তি প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়ে বলেছিলো, ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে তার স্বীকারোক্তি নেয়া হয়েছিলো। আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনকালেও নিজেকে নির্দোষ দাবি করে সে বলে, ঘটনার সময় সে বাসায় ছিলো না। বন্ধুর বাসায় হুইস্কি পান করে নেশাগ্রস্ত ছিলো।
মাহফুজুর রহমান ও স্বপ্না রহমান হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিলো। শহরের আধুনিক পরিবেশে বেড়ে ওঠা এক কিশোরী কী করে তার মা-বাবাকে হত্যা করতে পারে এটাই ছিলো সে সময়ের আলোচিত বিষয়। দেশে সামাজিক অবক্ষয়, পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন ঢিলে হয়ে যাওয়া, পারস্পরিক সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে অনুশাসনের বিষয়গুলো নতুন করে আবার সামনে চলে আসে। পরিবর্তিত সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে শিশু-কিশোরদের বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে মা-বাবার ভূমিকার বিষয়টিও ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়।
এ কথা ঠিক, আমরা একটি অস্থির সময়ের ভেতর দিয়ে চলেছি। আগেকার দিনের মূল্যবোধ এখন অচলপ্রায়। সামাজিক অনুশাসন প্রায় উঠে গেছে। ঢিলে হয়ে গেছে সামাজিক বন্ধনও। পারিবারিক সম্পর্কেও ফাটল ধরতে শুরু করেছে অনেক আগে থেকে। যৌথ পরিবার ভেঙে যাওয়া, মা-বাবার অনুশাসন না থাকার কারণে উঠতি বয়সী অনেকেই এখন অগোচরে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। যখন তা ধরা পড়ে তখন আর সংশোধনের কোনো পথ থাকে না।
মাহফুজুর-স্বপ্না দম্পতির হত্যাকাণ্ডে তাদের একমাত্র মেয়ের জড়িত থাকার অভিযোগ নিম্ন আদালতে প্রমাণিত হওয়ার ঘটনা আমাদের পুরো সমাজের জন্যই বড় ধরনের একটি সতর্কবার্তা। এখনো সময় আছে। সামাজিক ও পারিবারিক মূল্যবোধ তথা অনুশাসনগুলো ফিরিয়ে আনতে হবে। প্রায় ভেঙে যাওয়া সম্পর্ক নতুন করে গড়ে তুলতে হবে। সন্তানদের প্রতি দায়িত্ব পালনে যত্নশীল হতে হবে। দৃঢ় পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন অনেক অপরাধ রুখতে হবে।