দাপুটে জয়ে শুরু বাংলাদেশের

স্টাফ রিপোর্টার: মাশরাফি বিন মুর্তজা চেয়েছিলেন জিম্বাবুয়ে সিরিজ জয় দিয়ে শুরু করতে। আর সাকিব আল হাসান চেয়েছিলেন দাপটের সাথে জিততে। চাওয়া পূরণ হয়েছে অধিনায়ক আর সহঅধিনায়ক দুজনেরই। আর এতে চতুর্থ শতক পাওয়া মুশফিকুর রহিম, ক্যারিয়ার সেরা ব্যাটিং করা সাব্বির রহমানের মতো অবদান রয়েছে তাদেরও। ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো পাঁচ উইকেট পেয়েছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিব। শেষের দিকে ঝড়ো ব্যাটিং করা অধিনায়ক মাশরাফি পেয়েছেন ২ উইকেট। প্রথম ওয়ানডেতে ১৪৫ রানের এ জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। আগামী সোমবার হবে দ্বিতীয় ওয়ানডে।
গতকাল শনিবার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৯ উইকেটে ২৭৩ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে ৩৬ ওভার ১ বলে ১২৮ রানে অলআউট হয়ে যায় জিম্বাবুয়ে। ফিল্ডিঙের সময় উইকেটরক্ষক ও উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান রিচমন্ড মুতুমবামি চোট পাওয়ায় ব্যাটিঙে নামার আগেই একটা বড় ধাক্কা খায় জিম্বাবুয়ে। চোটের জন্য সপ্তাহ খানেক মাঠের বাইরে থাকতে হবে মুতুমবামিকে। মুতুমবামির চোটে চামু চিবাবার সাথে ইনিংস উদ্বোধন করেন টেল এন্ডার ব্যাটসম্যান লুক জংউই। শুরুতে আঁটসাঁট বোলিং করা স্বাগতিকদের বিপক্ষে পাল্টা আক্রমণে দ্রুত রান তুলেন তিনি। দ্বিতীয় ওভারেই মাশরাফি আক্রমণে আনে বাঁহাতি স্পিনার আরাফাত সানিকে। তিনি না পারলেও আরেক বাঁহাতি স্পিনার সাকিব তিন ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে চালকের আসনে নিয়ে আসেন। অষ্টম ওভারে আক্রমণে আসা সাকিব আঘাত হানেন নিজের দ্বিতীয় ওভারেই। তার বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে লিটন দাসের চমৎকার ক্যাচে পরিণত হন চিবাবা। লং অফ থেকে অনেকটা দৌড়ে ক্যাচ ধরতে গিয়ে লং অন থেকে ছুটে আসা নাসির হোসেনের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন লিটন। তবুও হাত থেকে বল ছাড়েননি তিনি।
প্রস্তুতি ম্যাচে ৯৫ রানের ভালো একটি ইনিংস খেলা ক্রেইগ আরভিন সাকিবের দ্বিতীয় শিকার। উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড অফে নাসিরের ক্যাচে পরিণত হন আরভিন। এক বছর পর দেশের হয়ে ওয়ানডে খেলা পেসার আল আমিন হোসেন ফেরান জংউইকে। মুশফিকের গ্লাভসবন্দি হয়ে শেষ হয় তার ৩৯ রানের ইনিংসটি। অতিথিদের আরেক ব্যাটিং ভরসা শন উইলিয়ামসকে বোল্ড করে জিম্বাবুয়ের বিপদ আরও বাড়ান সাকিব। অনেক দেরিতে বোলিংয়ে আসা মাশরাফি পরপর দু ওভারে ফিরিয়ে দেন সিকান্দার রাজা ও ম্যালকম ওয়ালারকে। মুশফিকের গ্লাভসবন্দি হন রাজা আর ঠিক মতো কাট করতে না পেরে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে নাসিরের ক্যাচে পরিণত হন ওয়ালার। রাজা ওয়ানডেতে দেশের হয়ে মাশরাফির দুইশতম শিকার। নিজের নবম ওভারে আবার আঘাত হানেন সাকিব। গ্রায়েম ক্রেমারকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন তিনি। শেষ ওভারে এসে টিনাশে পানিয়াঙ্গারাকে বোল্ড করে এক অতৃপ্তি ঘোচান সাকিব। এই প্রথম ওয়ানডেতে পাঁচ উইকেট পেলেন তিনি। পরের ওভারে চিগুম্বুরাকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে বাংলাদেশকে বড় জয় এনে দেন নাসির। ৪৭ রানে ৫ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সেরা বোলার সাকিব। মাশরাফি দুই উইকেট নেন ১৩ রানে। এর আগে চোটের জন্য সৌম্য সরকারের অনুপস্থিতিতে তামিম ইকবালের সাথে ইনিংস উদ্বোধন করেন লিটন। তবে ভালো করতে পারেননি, দ্বিতীয় ওভারে জংউইয়ের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে পয়েন্টে ক্রেমারের ক্যাচে পরিণত হন এই তরুণ। ভালো করতে পারেননি টপ অর্ডারের আরেক ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহও। পানিয়াঙ্গারার ভেতরে আসা একটি বলে বোল্ড হয়ে যান তিনি।
নিজেকে গুটিয়ে রাখা তামিম ইকবালকে সাথে নিয়ে প্রতিরোধ গড়েন নবম ওভারে ক্রিজে আসা মুশফিক। তাদের ৭০ রানের জুটিতে ২৪তম ওভারে একশ স্পর্শ করে বাংলাদেশের সংগ্রহ। দলকে শতরানে পৌঁছে দিয়ে ধৈর্য্য হারিয়ে ফিরে যান তামিম। রাজার বলে এগিয়ে এসে লং অন দিয়ে সীমানা ছাড়া করতে গিয়ে জংউইয়ের হাতে ক্যাচ দেন এ বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ৬৮ বলে খেলা তামিমের ৪০ রানের ইনিংসটি গড়া ৩টি চার ও দুটি ছক্কায়। শুরু থেকেই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন সাকিব। কিন্তু বেশিক্ষণ টেকেননি বিশ্বের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডারও। রাজার বলে চার হাঁকানোর পরের বলেই এগিয়ে এসে খেলতে চেয়েছিলেন সাকিব, কিন্তু দলের বিপদ বাড়িয়ে স্টাম্পড হয়ে যান তিনি।
২৮তম ওভারে ১২৩ রানে চার উইকেট হারানো বাংলাদেশ তাকিয়ে ছিলো টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকের দিকে। দলকে বিপদ থেকে টেনে তোলা নতুন কিছু নয় তার জন্য। হতাশ করেননি এবারও। তরুণ সাব্বিরকে নিয়ে দলকে ঠিকই লড়াইয়ের পুঁজি এনে দিয়েছেন তিনি। শুরুতে নিজেকে একটু গুটিয়ে রাখলেও সময় গড়ানোর সাথে সাথে জিম্বাবুয়ের বোলারদের ওপর চড়াও হন সাব্বির। শতকের কাছে গিয়ে মুশফিক নিজেকে একটু গুটিয়ে নিলেও তার কোনো প্রভাব পড়তে দেননি তিনি। তরুণ সঙ্গীর রানের গতি বাড়ানোর ফাঁকেই ৪৬তম ওভারে নিজের রান তিন অঙ্কে নিয়ে যান মুশফিক।
ওয়ানডেতে এটি মুশফিকের চতুর্থ আর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় শতক। চলতি বছর এ নিয়ে দ্বিতীয়বার শতক পেলেন তিনি। এর আগে গত এপ্রিলে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১০৬ রানের চমৎকার এক ইনিংস খেলেছিলেন এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান। সাব্বিরের রান আউটে ভাঙে তার সাথে মুশফিকের ১১৯ রানের চমৎকার জুটিটি। ১৮ দশমিক ৫ বল স্থায়ী এ জুটি গড়ার পথেই নিজের আগের সর্বোচ্চ ৫৩ রানকে ছাড়িয়ে যান সাব্বির। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় অর্ধশতক পাওয়া এই তরুণ ফেরেন ৫৭ রানে। তার ৫৮ বলের ইনিংসটি সাজানো ৪টি চার ও দুটি ছক্কায়। চলতি বছর খুব একটা ব্যাটিঙের সুযোগ না পাওয়া নাসির এগিয়ে এসে সীমানা ছাড়া করতে গিয়ে টাউরাই মুজারাবানির বলে চিবাবার হাতে ধরা পড়েন তিনি। নাসিরের বিদায়ের পর তুমুল করতালির মধ্যে ক্রিজে আসেন মাশরাফি। প্রস্তুতি ম্যাচে মুশফিকের সাথে খেলার সময় রান আউট হয়েছিলেন মাশরাফি। এবার এক রান নিতে গিয়ে রান আউট হয়েছেন মুশফিক। ১০৯ বলে খেলা তার ১০৭ রানের চমৎকার ইনিংসটি ৯টি চার ও একটি ছক্কা সমৃদ্ধ। ছয় বলের মধ্যে সাব্বির-নাসির-মুশফিকের বিদায়ের শেষের দিকে হঠাৎ করেই চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। তবে মাশরাফি ও আরাফাত দলের সংগ্রহ পৌনে তিনশ’ রানের কাছাকাছি নিয়ে যান। শেষ ওভারে ফিরে যাওয়ার আগে ৯ বলে ১৪ রান করেন অধিনায়ক। শেষ বলে রান আউট হওয়া আরাফাত করেন ১৫ রান। জিম্বাবুয়ের রাজা ও মুজারাবানি দুটি করে উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৭৩/৯ (তামিম ৪০, লিটন ০, মাহমুদউল্লাহ ৯, মুশফিক ১০৭, সাকিব ১৬, সাব্বির ৫৭, নাসির ০, মাশরাফি ১৪, আরাফাত ১৫, আল আমিন ০*; পানিয়াঙ্গারা ১০-০-৩৮-১, জংউই ৮-১-৪৫-১, মুজারাবানি ১০-০-৬৪-২, ক্রেমার ১০-০-৪৫-০, উইলিয়ামস ৫-০-৩২-০, রাজা ৭-০-৪৭-২)
জিম্বাবুয়ে: ৩৬.১ ওভারে ১২৮ (চিবাবা ৯, জংউই ৩৯, আরভিন ২, উইলিয়ামস ৮, চিগুম্বুরা ৪১, রাজা ৩, ওয়ালার ১, ক্রেমার ১৫, পানিয়াঙ্গারা ৫, মুজরাবানি ০*, মুতুমবামি অনু; মুস্তাফিজ ৬-০-২৭-০, আরাফাত ৭-২-১৯-০, সাকিব ১০-০-৪৭-৫, আল আমিন ৫-০-১৫-১, মাশরাফি ৬-০-১৩-২, নাসির ২.১-০-৬-১)
ফল: বাংলাদেশ ১৪৫ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা: মুশফিকুর রহিম