দক্ষ জনশক্তি গড়তে দ্রুত দরকার বাস্তবমুখি পদক্ষেপ

প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করা হচ্ছে। ২০১০ সালে গৃহীত জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১৮ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন হওয়ার কথা। অবশ্য এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে যতোটা তৎপরতা দরকার, তা তেমনটা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। অবশ্যই জাতীয় এ শিক্ষানীতি জাতির জন্য কল্যাণকর হবে। আরো কল্যাণকর হতে পারে যদি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে সকাল-বিকেল দুভাগে ভাগ করে একভাগে প্রাথমিক শিক্ষা অপরভাগে কারিগরি শিক্ষাসহ বিদেশি ভাষা শিক্ষার ব্যবস্থা করা যেতো। কেননা, জনসংখ্যা বিস্ফোরণের দেশে প্রবাসে শ্রম বিকানো অর্থই দেশের সুন্দর ভবিষ্যত গঠনে সহায়ক হতে যাচ্ছে। দক্ষতা বাড়াতে পারলে শুধু আয়ই বাড়বে না, উজ্জ্বল হবে ভাবমুর্তিও।

২০১৮ সালের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও সিদ্ধান্ত গ্রহণের পাঁচ বছর ইতোমধ্যেই গত হয়েছে। অথচ এটা কিভাবে করা হবে সে বিষয়ে কিছুই জানে না প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এতবড় একটি কাজ করার ব্যাপারে তেমন কোনো প্রস্তুতি নেই তাদের। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাঁচ বছর হয়ে গেলেও এ বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বা রূপরেখা তৈরি করতে পারেনি মন্ত্রণালয়। কারিকুলাম প্রণয়নেও কোনো অগ্রগতি নেই। দু-একজন কর্মকর্তা এ বিষয়ে যে মতামত দিয়েছেন তাতে মনে হয়েছে, জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের চেয়ে সার্টিফিকেট দেয়াটাকেই তারা বেশি গুরুত্বের সাথে দেখছেন। এই যখন প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দশা, তখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামোকে কাজে লাগিয়ে কারিগরি শিক্ষাসহ বিদেশি ভাষা শিক্ষাদানের কর্মসূচি হাতে নেয়ার প্রস্তাব পাগলের প্রলাপ মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক। এরপরও বিষয়টি অতীব গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, দেশে জনসংখ্যা বিস্ফোরণ রোধে কাগজে-কলমে যতোটা সফল বাস্তবে অতোটা নয়। যেহেতু জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে ভীত হওয়ার চেয়ে জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তর করাই কল্যাণকর, সেহেতু শিশুকালেই প্রাথমিক শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষাসহ বিদেশি ভাষা শিক্ষাদানে গুরুত্ব দেয়া অতীব গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখা দরকার, দেশের জনশক্তি প্রবাসে সস্তায় বিকানোর অন্যতম কারণ দক্ষতাসহ বিদেশি ভাষাজ্ঞানে দুর্বলতা।

জাতীয় শিক্ষানীতি যখন প্রণয়ন করা হয় তখনই তা বাস্তবায়নে কী কী করতে হবে, কতোটা সময় লাগবে, এর জন্য কতোটা অর্থ ও লোকবল লাগবে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। কাজগুলো কিভাবে করা হবে তাও নির্ধারণ করা হয় সে সময়। পাঁচ বছর পার। অর্থনৈতিক সামর্থ্যের দোহাই দিয়ে যেমন এ শিক্ষানীতিকে মাঠে মারা উচিত হবে না, তেমনই ভোকেশনাল, কারিগরি শিক্ষা প্রাথমিকের বাইরে রাখা কতোটা দূরদর্শি হবে তা এখনই ভেবে দেখতে হবে। শুধু বিদেশে শ্রম বিকানো নয়, দেশেও ছোট-বড় কলকারখানা গড়ে তুলে কর্মসংস্থানের জোগান দেয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা জরুরি। কালবিলম্ব মানে হবে প্রজম্মের কাঠগড়ায় নিজেদের খাটো করা।

Leave a comment