দামুড়হুদার বড়দুধপাতিলায় আর্সেনিকমুক্ত পানি সরবরাহ প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন

বখতিয়ার হোসেন বকুল/হানিফ মণ্ডল: ইউরোপিয়ন ইউনিয়ন, উপজেলা প্রশাসন, গ্রামবাসী, ইউনিয়ন পরিষদ, ও ব্যক্তিগত অর্থায়নে দুর্গম ও পিছিয়ে পড়া সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন অধিকার নিশ্চিত করণের অঙ্গীকারে চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদা উপজেলার বড়দুধপাতিলা গ্রামে ৪০ লাখ ৪২ হাজার ৭শ টাকা ব্যয়ে নির্মিত আর্সেনিকমুক্ত নিরাপদ পানি সরবরাহ করতে পাইপলাইন প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুর ১২টার দিকে ফলক উম্মোচন ও সুইচ টিপে পানি সরবরাহের মাধ্যমে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজগার টগর প্রধান অতিথি হিসেবে ওই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

উদ্বোধন শেষে হাউলী ইউনিয়ন পরিষদ ও এনজিও সংস্থা রিসোর আয়োজনে প্রকল্প হস্তান্তর ও গণমাধ্যমের সাথে মুক্ত আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। হাউলী ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী শাহ মিন্টুর সভাপতিত্বে আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগার টগর। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুস, দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল আলম ঝন্টু, এনজিও ফোরামের প্রকল্প সমন্বয়কারী শামসুদ্দিন মোহাম্মদ রফি, রিসোর নির্বাহী পরিচালক জাহিদুল ইসলাম, পানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আসাদুজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান আলী।

উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান, এনজিও ফোরামের প্রধান ফিল্ড অপারেশন অফিসার জিয়াউল হক, জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক হাজি সহিদুল ইসলাম, কার্পাসডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম, কুড়ুলগাছি ইউপি চেয়ারম্যান সরফরাজ উদ্দিন, দামুড়হুদা সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, হাউলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ খোকন, আ.লীগ নেতা শহিদ লতিফ মিল্টন, ইমতিয়াজ হোসেন, ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম, যুবলীগ নেতা ফয়সাল মেহমুদসহ সাংবাদিক, বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

ইউরোপিয়ন ইউনিয়ন, উপজেলা প্রশাসন, গ্রামবাসী, ইউনিয়ন পরিষদ, জমিদাতা কৃষক আজিবার রহমান, এনজিও সংস্থা রিসোসহ এ কাজে সম্পৃক্ত সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন ও সাধুবাদ জানিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমপি আলী আজগার টগর বলেন, এ গ্রামে ১৯৯২ সালে প্রথম আর্সেনিকোসিস রোগ শনাক্ত হয়। এ পর্যন্ত ২৭ জন নারী-পুরুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়ে জীবন দিয়েছেন। পঙ্গুত্ববরণ করেছেন অনেকেই। নীরব ঘাতক এ রোগে আক্রান্ত হয়ে এ গ্রামের আর যেন কোনো মানুষের প্রাণহানি না হয় সে ব্যবস্থাই করা হয়েছে। তিনি পাইপলাইন পানি সরবরাহের প্রধান ঘরের চারপাশ পাঁচিল নির্মাণের জন্য ১ মেট্রিক টন টেষ্টরিলিফ চাল বরাদ্দের ঘোষণা দেন এবং বিদ্যুত বিলের পরিমাণ কমাতে লাইনটি যাতে সেবামূলক হিসেবে গণ্য হয় সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলাপ করে ব্যবস্থা গ্রহণেরও পাশাপাশি এ গ্রামের প্রধান রাস্তাটি পাকাকরণের প্রতিশ্রুতি দেন।

বিশেষ অতিথি জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুস বলেন, আর্সেনিকে আক্রান্ত এ গ্রামের কয়েকজন রোগীর হাতে স্পট দেখেছি। পাইপলাইন প্রকল্পে সোলার প্যানেল বিষয়ে তিনি ভুক্তভোগী গ্রামবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেন আপনারা কোথায় বসাবেন সেই স্থানটি নির্ধারণ করবেন, আমি সোলার প্যানেল দেয়ার সার্বিক ব্যবস্থা নেবো। আলোচনা শেষে রিসো ও এনজিও ফোরামের প্রতিনিধিবৃন্দ প্রধান অতিথির মাধ্যমে হাউলী ইউপি চেয়ারম্যান ও পাইপলাইন পানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনা কমিটির হাতে প্রকল্পের চাবি ও ফাইল তুলে দেন। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন এনজিও ফোরামের আঞ্চলিক পরিচালক মনিরুল ইসলাম।

ইউরোপিয়ন ইউনিয়নের অর্থায়নে এনজিও ফোরামের সহযোগিতায় রিসোর বাস্তবায়নে এ প্রকল্পের আওতায় পাইপলাইনের জন্য নির্মিত ওভারহেড ট্যাংঙ্কের পানি ধারণ ক্ষমতা ৩০ হাজার লিটার। গ্রামের প্রতিটি পড়ায় পাইপলাইন বসিয়ে ৬৩টি কমিউনিটি স্ট্যান্ডপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। প্রত্যেকটি কমিউনিটি স্ট্যান্ডপোস্ট থেকে ৫ থেকে ১০টি পরিবার পানি সংগ্রহ করবে। এছাড়া ২০টি পারিবারিক সংযোগ দেয়া হয়েছে। যার মাধ্যমে বড়দুধপাতিলা গ্রামের ৫৯০টি পরিবারের ২ হাজার ৮৮৫ জন মানুষ প্রাথমিকভাবে এ আর্সেনিকমুক্ত নিরাপদ পানি সরবরাহের আওতায় আসবে। ভূগর্ভস্থ পাথরের স্তরভেদ করে ৪৮০ ফুট গভীর থেকে পানি তোলা হচ্ছে। ল্যাব টেস্টের রিপোট অনুযায়ী এই পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা রয়েছে ০.০২৫ মিলিগ্রাম প্রতি লিটার এবং আয়রনের মাত্রা রয়েছে ০.০৫ মিলিগ্রাম। যা সহনীয় মাত্রার চেয়ে অনেক কম এবং নিরাপদ। পাইপলাইন পানি সরবরাহ প্রকল্পের সর্বমোট নির্মাণ ব্যয় হয়েছে ৪০ লাখ ৪২ হাজার ৭শ টাকা। যার মধ্যে কমিউনিটির অনুদান ১ লাখ ১০ হাজার টাকা, মুহাম্মদ আব্দুর রশিদের ব্যক্তিগত অনুদান ৪০ হাজার টাকা, উপজেলা প্রশাসনের অনুদান ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা, ইউনিয়ন পরিষদের অনুদান ২০ হাজার টাকা এবং প্রকল্প থেকে ব্যয় ৩৭ লাখ ২২ হাজার ৭৮০ টাকা। প্রকল্পের জন্য ১ দশমিক ৮ শতক জমি দান করেছেন গ্রামের কৃষক আজিবর রহমান।