দীপন হত্যা তদন্তে অগ্রগতি নেই : দু নৃশংস ঘটনায় পৃথক মামলা

স্টাফ রিপোর্টার: রাজধানীর শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটে জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনকে হত্যা এবং লালমাটিয়ায় শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর কার্যালয়ে প্রকাশক আহমেদুর রশীদ চৌধুরী টুটুলসহ লেখক, ব্লগার তারেক রহিম ও রণদীপম বসুকে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় পৃথক দুইটি মামলা হয়েছে। গত রোববার দুপুরে নিহত দীপনের স্ত্রী ডা. রাজিয়া রহমান এবং আহত টুটুল বাদী হয়ে শাহবাগ ও মোহাম্মদপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। দু প্রকাশকই একইভাবে হামলায় নিহত বিজ্ঞান মনষ্ক লেখক অভিজিত রায়ের বন্ধু ও তার বইয়ের প্রকাশক ছিলেন। শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর কার্যালয়ে হামলায় আহত তিনজন এখনো ঢাকা মেডিকেলে চিকিত্সাধীন রয়েছেন।
এদিকে এ নৃশংস ঘটনার পর তিনদিন পার হলেও এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাউকে আটক বা গ্রেফতার করতে পারেনি। তদন্তে উল্লেখ করার মতো কোনো অগ্রগতিও হয়নি। অন্যদিকে এ দু হামলায় আল কায়দার ভারতীয় উপ-মহাদেশের শাখা আনসার আল ইসলাম-৪ ঘটনার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেয়ার পর থেকে এ চক্রের মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে তদন্তকারীরা। অন্য ঘটনার সাথে এটিকে মিলিয়ে নিয়ে এগুনোর চেষ্টা চলছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কার্যালয় দীপন হত্যার ঘটনায় মামলা দায়েরের আগে অভিযোগপত্র তৈরিতে ছেলের স্ত্রীকে সহায়তা করেন বাবা অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক। সেখান থেকে বেরিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি মামলা করছি না। মামলা করেছে আমার ছেলের বউ। আমি তাকে সাহায্য করছি। এর আগেও বেশকিছু হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। সেগুলোর চার্জশিট এখনো দেয়া হয়নি। তাই প্রচলিত ব্যবস্থার উপর আমার আস্থা নেই।
মামলার বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন বিভাগের উপকমিশনার মুনতাসিরুল ইসলাম বলেন, শাহবাগে জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনের স্ত্রী ডা. রাজিয়া রহমান বাদী হয়ে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে শাহবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। সেখানে আসামিদের অজ্ঞাত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এদিকে লালমাটিয়ায় শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে হত্যার চেষ্টায় ওই প্রকাশনীর প্রকাশক আহমেদুর রশীদ চৌধুরী টুটুল বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। সেখানেও আসামিদের অজ্ঞাত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ঘটনায় তদন্তের বিষয়ে তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের পরপরই মামলা না হলেও পুলিশ ঘটনার দিন থেকেই তদন্ত শুরু করে। পাশাপাশি এ ঘটনার সাথে জড়িতের সম্পর্কে খোঁজ-খবর ও তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু হয়। আমরা এখন ঘটনা সম্পর্কে, ঘটনায় যারা অংশগ্রহণ করেছে তাদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে তাদের শনাক্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার জানান, বিচারহীনতার সংস্কৃতি প্রচলিত থাকায় দেশে একের পর এক ব্লগার-লেখক-প্রকাশক ও বিদেশি নাগরিক হত্যার ঘটনা সংগঠিত হচ্ছে। লেখক অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ হত্যার ১১ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও বিচার হয়নি। ২০১৩ সালে দুজন মুক্তমনাকে হত্যা করা হয়েছে, ২০১৫ সালে আরো চারজন। এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় যারা ধরা পড়ছে তাদেরও কোনো দৃশ্যমান শাস্তি হয়নি। এমনকি তদন্ত প্রতিবেদনও জমা দেয় না পুলিশ। এসব ঘটনায় আমরা ক্ষুব্ধ, হতাশ, কিন্তু তারপরও আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে, এর নেতৃত্বে থাকবে তরুণরাই।
গতকাল দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ‘শিক্ষক-শিক্ষার্থী-লেখক-নাগরিকবৃন্দ’ এর ব্যানারে এক মানববন্ধনে এসব কথা বলেছেন দেশের বিশিষ্টজনরা। হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে গতকাল উত্তাল ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাসে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিলসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। মানববন্ধনে বক্তব্য দেন বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসির মামুন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মেসবাহ কামাল, অধ্যাপক রফিকউল্লাহ খান, অধ্যাপক আকতার কামাল, অধ্যাপক জিনাত হুদা, সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুত্ফা, ড. ফাহমিদুল হক, গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার প্রমুখ।