স্টাফ রেপর্টোর: ইতালির নাগরিক সিজারে তাভেল্লা ও জাপানের নাগরিক কুনিও হোশি হত্যাকাণ্ডের পেছনে বড় ধরনের আর্থিক লেনদেন হয়েছে। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও মালয়েশিয়ায় বসবাসরত বিএনপি ও জামায়াতপন্থী কয়েকজন প্রবাসী ব্যাপক অর্থ ঢেলেছেন। হত্যাকাণ্ডের পেছনে অন্তত ১০ কোটি টাকার তহবিল ব্যবহার করা হয়েছে। এ প্রবাসীদের সাথে হত্যাকাণ্ডে জড়িত কথিত ‘বড় ভাইদের’ সুসম্পর্ক রয়েছে। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতেই প্রবাসীদের কাজে লাগিয়েছেন বড় ভাইয়েরা। তদন্তে নেমে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এসব তথ্য পেয়েছে। সন্দেহভাজন কয়েকজনের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর দাবি, দু বিদেশিকে হত্যার জন্য অন্তত সাতজন প্রবাসী অর্থ দিয়ে বড় ভাইদের সহায়তা করেছেন বলে তদন্ত সংস্থাগুলো নিশ্চিত হয়েছে। তারা বিএনপি ও জামায়াতের মতাদর্শে বিশ্বাসী। তাদের মধ্যে চারজনের পরিচয়ও জানা গেছে। তারা হলেন জুলহাস মোল্লা, রহিম উল্লাহ চৌধুরী, মোহাম্মদ একলাস আলী ও বরকত উল্লাহ পাটোয়ারী। যুক্তরাজ্যপ্রবাসী জুলহাস মোল্লার বাড়ি বগুড়া। আরেক যুক্তরাজ্যপ্রবাসী রহিম উল্লাহ চৌধুরীর বাড়ি সিলেটে। বাকি দুজনের মধ্যে একলাস আলী মালয়েশিয়াপ্রবাসী ও বরকত উল্লাহ পাটোয়ারী আমেরিকাপ্রবাসী।
ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, “দুই বিদেশি হত্যাকাণ্ডে ব্যাপক আর্থিক লেনদেন হয়েছে। বিদেশ থেকেও অর্থ এসেছে বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। কিছু প্রবাসীর কর্মকাণ্ড আমরা আমলে নিয়েছি। সন্দেহজনক ‘বড় ভাইদের’ আটক করার চেষ্টা চলছে। যারা অর্থ দিয়ে সহায়তা করেছেন, তাদের ছাড় দেয়ার প্রশ্নই আসে না।
দু বিদেশি হত্যার সন্দেহভাজন পরিকল্পনাকারী হিসেবে যে দু ‘বড় ভাইয়ের’ নাম আলোচিত হচ্ছে তাদের মধ্যে বিএনপি নেতা এম এ কাইয়ুম ও হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের ব্যাংক হিসাবে এক বছর ধরে অস্বাভাবিক হারে লেনদেন হয়েছে বলে গোয়েন্দারা নিশ্চিত হয়েছেন। ইতোমধ্যে দুজনের অবস্থান সম্পর্কেও নিশ্চিত হয়েছেন গোয়েন্দারা। তারা বলছেন, সোহেল দেশেই অবস্থান করছেন। আর কাইয়ুমের সর্বশেষ অবস্থান ছিলো মালয়েশিয়ায়।
দলীয় ও পারিবারিক সূত্রও দাবি করছে, গত এপ্রিল থেকেই কাইয়ুম মালয়েশিয়ায় রয়েছেন। একটি ইংরেজি দৈনিকের কাছেও কাইয়ুম দাবি করেছেন, তিনি মালয়েশিয়াতেই আছেন। এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে তিনি দেশ ছেড়েছেন। দু বিদেশি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সরকার তাকে বলির পাঠা বানাতে চাচ্ছে।
গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও বাড্ডার সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার এম এ কাইয়ুম এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ও ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিক হারে লেনদেন হয়েছে বলে গোয়েন্দারা নিশ্চিত হয়েছেন। আর পুলিশকে হাত করেই কাইয়ুম দেশের বাইরে চলে যান। এ ক্ষেত্রেও মোটা অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে। সম্প্রতি পুলিশ ও র্যাব নিশ্চিত হয়েছে, মালয়েশিয়া এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে করেই তিনি দেশ ছেড়েছেন। অন্যদিকে কুনিও হত্যা মামলার অন্যতম আসামি হুমায়ুন কবির হীরার জবানবন্দিতেও উঠে এসেছে যে সোহেলের নির্দেশেই ওই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। সোহেল দেশের ভেতরেই গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন।
তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, দু হত্যাকাণ্ডে গ্রেফতার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ, আলামত সংগ্রহ এবং প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে সন্দেহজনক বড় ভাইদের বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হয়েছে। দু বিদেশি হত্যাকাণ্ডের পেছনে কী পরিমাণ টাকা লেনদেন হয়েছে তাও খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা। তাভেল্লা হত্যা মামলায় তিন আসামিকে আট দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যাকাণ্ডের জন্য টাকার চুক্তি হয়েছিলো- এমন কথা স্বীকার করলেও টাকার পরিমাণ নিয়ে ভিন্ন তথ্য দিচ্ছে।