স্টাফ রিপোর্টার: রাজধানীর দারুস সালাম থানার কর্মরত সহকারী উপ পরিদর্শক (এএসআই) মো. ইব্রাহিম মোল্লা সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে নিহত হবার পর তার নিজ এলাকা বাগেরহাটে কচুয়া উপজেলার পালপাড়া গ্রামের চলছে শোকের মাতম। বৃদ্ধবাবা আব্দুস সত্তার মোল্লার ৫ কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের মধ্যে ইব্রাহিম মোল্লা ছিলেন পঞ্চম। একমাত্র আয়ক্ষম পুত্র সন্তানকে হারিয়ে তিনি নির্বাক হয়ে গেছেন। ইব্রাহিমের মা আছিয়া বেগম ঘরে প্রলাপ বকে চলছেন। ভাইয়ের অকাল মৃত্যুর সংবাদ শুনে গ্রামের বাড়িতে ছুটে এসেছেন বড় ৪ বোন জাহানারা, আনোয়ারা, মনোয়ারা ও হোসনেয়ারা বেগম। ভাইয়ের এমন মৃত্যু কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারছেন না বিধবা বড়বোন জাহানারা বেগম। তার একটাই কথা, ইব্রাহিম ছিলো আমাদের পরিবারের প্রদীপের মতো। বৃদ্ধ বাবা মাসহ অসহায় বোনদের ওই আগলে রাখত। ওর ছোট্ট ছোট্ট ছেলে মেয়ে ওগো কি হবে, ওরা কীভাবে বাচবে, ওগো কেডা মানুষ করবে’এমন’ আহাজারি তার। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে পালপাড়া এলাকার এক প্রতিবেশির মাধ্যমে ইব্রাহিম নিহত হবার খবর পান তার বৃদ্ধ বাবা আব্দুস সত্তার। শুক্রবার সকালে কচুয়ার সোলারকোলা ইউনিয়নের পালপাড়া গ্রামের আবাল বৃদ্ধ সবাই ছুটছে মোল্লা বাড়িতে। প্রতিবেশিরা ইব্রাহিমের বাড়িতে গিয়ে তার মা বোনদের সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করছেন। বাবা আব্দুস সত্তার মোল্লা ছেলের ছবি নিয়ে ঘরের বারান্দায় বসে অঝোরো ছোখের পানি ফেলছেন। এক সময়ের কঠোর প্ররিশ্রমী কৃষক আব্দুস সত্তারের ছোখে মুখে শুধু হতাশার ছাফ। ঢাকায় অবস্থানরত ছোট মেয়ে পেয়ারা বেগমকে মাঝে মধ্যে মোবাইল করে তার আদরের ধন ইব্রাহিম কখন বাড়িতে আসবে তার খোঁজ নিচ্ছেন।
পালপাড়া এলাকার ছোট বড় সকলের কাছেই ইব্রাহিম ছিল গর্বের ব্যক্তি । তাদের এ ছোট গ্রামের ইব্রাহিমের মতো সদালাপি পরোপকারী নিরঅংকরী যুবক দেখা মেলা ভার। গত কোরবানির ঈদে স্ত্রী খায়রুন্নেছা বেগম, ৬ বছরের কন্যা জান্নাতি ও ২০ মাসের পুত্র সন্তান মোহাম্মদকে নিয়ে ইব্রাহিম বাগেরহাটের নিজ গ্রামে এসেছিলেন। প্রিয় বাবা মা ও বোনদের নিয়ে একসাথে আনন্দে কেটেছে তাদের ঈদ। বন্ধু বান্ধবদের নিয়ে গ্রামের কল্যানে করেছেন কাজ। সেই ইব্রাহিম এখন নেই এমন কথা ভাবতে পারছেন না ইব্রাহিমের বন্ধু প্রতিবেশি বড় ভাই ‘মাহফুজা বেগম মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের’ শিক্ষক শীল গৌতম কুমার। নিহত ইব্রাহিমের সেজ বোন মনোয়ারা বেগম জানান, ঢাকায় দারুস সালাম থানার কাছেই ৪৮/৩ বর্ধবাড়ি এলাকার ৫ তলায় গত দেড় বছর ধরে ভাড়া বাড়িতে বসবাস করে আসছে। বড় মেয়ে জান্নাতিকে এবার স্কুলে দিয়েছে। কনস্টবল পদে পুলিশে যোগদানের পর বিভিন্ন থানায় কর্মরত থাকাকালীন সময়ে সাহসিকতা ও সততার জন্য ইব্রাহিম পরবর্তীতে এলিট ফোর্স র্যাবে কিছুদিন কাজ করেছে। দক্ষতা ও সততার কারনে পরবর্তীতে এএসআই হতে পেরেছে তার ভাই ইব্রাহিম। পুলিশে চাকরির পাশাপাশি গ্রামের উন্নয়নে অসহায় মানুষের পাশে থেকে সামাজিক কর্মকান্ডেও তার ছিল সত্ব:স্ফূর্ত অংশগ্রহন। মনোয়ারা জানান, ইব্রাহিম নিহত হবার খবর পেয়ে তার ছোট বোন পিয়ারা ও বোন জামাই জামাল এখন ঢাকায় রয়েছেন। বেলা ১১ টায় ইব্রাহিমের লাশের ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হয়। সেখানে বোনসহ ঢাকায় বসবাসকারী ইব্রাহিমের স্ত্রী খায়রুন্নেছা বেগম তার সন্তানসহ পরিবারের অন্য লোকজন সেখানে ছিলো বলে তিনি জানান। ইব্রাহিম মোল্লার বাবা আব্দুস সত্তার জানান, তিনি তার একমাত্র ছেলের উপর নির্ভরশীল ছিলেন। জনগনের নিরাপত্তা দিতে গিয়ে কর্মরত অবস্থায় তার ছেলে খুন হয়েছে। তিনি সরকারের কাছে খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পাশাপাশি ইব্রাহিমের ৬ বছরের কন্যা ও ২০ মাসের পুত্র সন্তানকে লেখাপড়াসহ সার্বিক দায়িত্ব নিতে অনুরোধ জানান।