দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের সাফল্যকে আশাজাগানিয়া বলে অভিহিত করা যায়। জাতিসংঘের সহস্রাব্দ লক্ষ্যমাত্রার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও দ্রুতগতিতে দারিদ্র্যের হার কমছে বাংলাদেশে। চলতি বছর বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার দাঁড়িয়েছে ২৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ। দারিদ্র্য হ্রাসের দিক থেকে বাংলাদেশের সাফল্য প্রতিবেশী দেশ ও পৃথিবীর বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি ভারতের চেয়েও বেশি। জাতিসংঘ মানব উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যবহৃত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দারিদ্র্য হ্রাস করে অর্থনৈতিকভাবে শক্ত অবস্থানে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশের সামনে গোল্ডেন অপরচুনিটি’ অপেক্ষা করছে। এ জন্য বাংলাদেশের জিডিপি ৬.৫ থেকে বাড়িয়ে ৭ বা তার বেশিতে নিয়ে যেতে হবে। একই সাথে তারা রাজনৈতিক পরিস্থিতি সুসংহতকরণ এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরিরও পরামর্শ দিয়েছে। একটি দারিদ্র্যমুক্ত স্বদেশ প্রতিষ্ঠা ছিলো মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নকল্প। স্বাধীনতার পর ধ্বংসস্তূপ থেকে যাত্রা শুরু করলেও নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ তার মুক্তিযুদ্ধকালীন স্বপ্নকল্প থেকে কখনো বিস্মৃত হয়নি। ফলে ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে রূপকথার ফিনিক্স পাখির মতো উড়াল দেয়ার সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশের পক্ষে। জাতিসংঘের সহস্রাব্দ লক্ষ্যমাত্রা সম্পর্কিত প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০০১-১০ মেয়াদে বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমেছে দেড় কোটি। তার আগের দশকে এ সংখ্যা ছিলো মাত্র ২৩ লাখ। ২০১০ সালের পরও এক্ষেত্রে অর্জিত হয়েছে দৃষ্টিগ্রাহ্য সাফল্য। দারিদ্র্যমোচনে বাংলাদেশের সাফল্য প্রতিবেশী দেশ ভারতের চেয়ে প্রায় তিনগুণ হলেও স্বীকার করতেই হবে দেশের প্রায় এক-চতুর্থাংশ মানুষ এখনো দারিদ্র্যের অভিশাপে ভুগছে। এর একটা উল্লেখযোগ্য অংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। গত চার দশকেরও বেশি সময়ে দারিদ্র্যমোচনে দৃষ্টিগ্রাহ্য সাফল্য সত্ত্বেও এতে আত্মপ্রসাদের কিছু নেই। দেশের এক-চতুর্থাংশ মানুষকে এ অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে হলে বাংলাদেশকে এক্ষেত্রে জোর কদমে এগিয়ে যেতে হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘ বিশ্বকে দারিদ্র্যমুক্ত করার লক্ষ্য ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশ এর আগেই দারিদ্র্যমুক্ত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এ লক্ষ্য অর্জনে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হয় এমন টেকসই ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টির ইতিবাচক পরিবেশ গড়ে তোলাও সরকারের কর্তব্য বলে বিবেচিত হওয়া উচিত। এটিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেও নিতে হবে।