স্টাফ রিপোর্টার: স্বল্প সময়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয়ভাবে প্রার্থী বাছাইয়ে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে। দলীয় গঠনতন্ত্র সংশোধনের পাশাপাশি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়াও। এ ছাড়া বিদ্রোহী প্রার্থী ঠেকানো এবং জোটগত প্রার্থী ভাগাভাগি করতেও হিমশিম খেতে হবে দু বড় দল- আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে। মামলার খড়গ মাথায় নিয়েই নির্বাচনী মাঠে নামতে হবে বিএনপিকে। দলীয় গঠনতন্ত্র সংশোধন করতে ডিসেম্বরের আগে কাউন্সিল করাও কঠিন হবে। দলীয়ভাবে জামায়াত প্রার্থী দিতে না পারলেও বিএনপির প্রতীক নিয়ে কিংবা স্বতন্ত্রভাবে তাদের নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। তা ছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর বাইরেও নাগরিক সমাজের ব্যানারে অনেকে প্রার্থী হতে পারেন। এটাও বড় দলগুলোকে বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে এক ধরনের চাপে ফেলতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা।
ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে ২৪৫ পৌরসভার নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এ ক্ষেত্রে ৪৫ দিন হাতে রেখে নভেম্বরের মাঝামাঝিতে তফসিল ঘোষণা করবে ইসি। রাজনৈতিক দলগুলোর হাতে প্রার্থী বাছাই করার সময় মিলছে মাত্র এক মাস। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকেও প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে হিমশিম খেতে হবে। দু দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতারা বলছেন, স্বল্প সময়ের মধ্যে গঠনতন্ত্র সংশোধন করে তৃণমূলের এ নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা কঠিন হয়ে যাবে। নেতা-কর্মীদের এক প্লাটফরমে নিয়ে আসা খুবই জটিল হয়ে পড়বে। তার পরও যথাযথ প্রক্রিয়ায় স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলই অংশগ্রহণে প্রস্তুত।
বিএনপিসূত্রে জানা যায়, দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এখনো দেশের বাইরে থাকায় কেন্দ্রীয় কোনো সিদ্ধান্ত পাচ্ছেন না মাঠ পর্যায়ের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। তবে তৃণমূলে একাধিক প্রার্থী নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে নেমেছেন। বিএনপি-প্রধানের সবুজ সংকেতের পরই প্রার্থীরা নির্বাচনী মাঠে নামবেন। মামলার বোঝা মাথায় নিয়েই ডিসেম্বরে ফের ভোটযুদ্ধে নামছেন বিএনপির তৃণমূল নেতারা।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, বিএনপি গণতন্ত্র ও নির্বাচনমুখী দল। গণতন্ত্র রক্ষায় সব ধরনের কর্মকাণ্ডেই অংশ নিচ্ছে বিএনপি। তবে আমাদের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশের বাইরে। তিনি দেশে ফিরলেই দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। স্বল্প সময়ের মধ্যে কাউন্সিলের মাধ্যমে গঠনতন্ত্র সংশোধন, প্রার্থিতা বাছাই করা কঠিন কাজ বলেও মনে করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, স্থানীয় সরকার আইন সংশোধন পাস হওয়ার পরে সাংগঠনিক বিষয়গুলো নিয়ে ওয়ার্কিং কমিটি অবশ্যই আলোচনা করবে। গঠনতন্ত্রে ছোটখাটো সংশোধন আনতে হলে তা অবশ্যই করা হবে। প্রয়োজনীয় সংশোধনী পরে কাউন্সিলে পাস করে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক কোনো জটিলতা হবে না। আইন পাস হওয়ার পর সাংগঠনিক বিষয়গুলো পরীক্ষা ও ব্যাখ্যা করা হবে। পৌর, ইউপিসহ সবার মনোনয়ন প্রক্রিয়াও সুস্পষ্ট করা হবে।
জানা যায়, মার্চে অনুষ্ঠিত হবে ৪ হাজার ৫০০ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। ৪৫ দিন হাতে রেখে জানুয়ারির শেষ দিকে তফসিল ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশন। দলীয়ভাবে বিশালসংখ্যক প্রার্থী বাছাই করতেও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে রাজনৈতিক দলগুলোকে। স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনে লড়তে তোড়জোড় চালালেও কেন্দ্রীয়ভাবে এখনো কোনো দলই মনোনয়ন নিয়ে কোনো কার্যক্রম শুরু করেনি।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়তে হবে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে হলে মনোনয়ন নিয়ে অসম প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হবে। এটা বন্ধ করাই রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন কমিশনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এ নির্বাচনের ফলে তৃণমূল পর্যায়েও কালো টাকার ছড়াছড়ি বাড়বে। ‘নন পলিটিক্যাল’ ভালো মানুষেরও নির্বাচনে আসার সম্ভাবনা কমে যাবে। নির্বাচন কমিশনকেও পক্ষপাতমুক্ত থাকতে কঠিন চ্যালেঞ্জে পড়তে হবে। বিশেষজ্ঞরা দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার পক্ষে মত দিলেও স্থানীয় সরকার কাঠামো পরিবর্তনের পরামর্শ দিয়েছেন। এ ছাড়া দলীয়ভাবে এ নির্বাচন হলেও নির্বাচনী সহিংসতা ও কারচুপি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও করেছেন অনেকেই। এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন পদ্ধতি ভালো বিষয়। তবে এর আগে স্থানীয় সরকার কাঠামোর পরিবর্তন দরকার। কারণ, বর্তমান কাঠামোয় স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো মেয়র/চেয়ারম্যাননির্ভর। প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ প্রয়োজন। এটি না করে দলীয়ভাবে নির্বাচন করলে মেয়র/চেয়ারম্যানদের হাতই শক্তিশালী হবে। এতে স্থানীয় সরকারের কোনো লাভ হবে না। সব ক্ষমতা এক-ব্যক্তিকেন্দ্রিক হবে।