শিশু শেখ সামিউল আলম রাজন হত্যার প্রধান আসামি কামরুল ইসলামকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। গত ৮ জুলাই সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের জালালাবাদ থানা এলাকার কুমারগাঁওয়ে খুঁটিতে বেঁধে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নির্মমভাবে খুন করা হয়েছিলো শিশু রাজনকে। মামলার প্রধান আসামি কামরুলকে সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরত আনা বাংলাদেশ পুলিশের একটি বড় সাফল্য- তা বলাই বাহুল্য। সৌদি আরবের সাথে বাংলাদেশের বন্দিবিনিময় চুক্তি না থাকায় কামরুলকে দেশে ফিরিয়ে আনা দুরূহ ছিলো বৈকি! কামরুলও এমনটি ভেবে হত্যাকাণ্ডের পর কতিপয় পুলিশের সহায়তায় দ্রুত সৌদি আরব পালিয়ে যায়। বন্দিবিনিময় চুক্তি না থাকার পরও আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ সদর দফতর ও সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের মাধ্যমে কামরুল ইসলামকে দেশে ফেরত আনায় এ দুষ্কৃতকারীর বিচারের পথ সুগম হয়েছে। অন্যদিকে এ হত্যাকাণ্ডের পরপরই খুলনায় আরেক শিশু রাকিবকে নৃশংস প্রক্রিয়ায় খুনের সাথে জড়িতদের বিচারকার্য চলছে। জাতীয় দলের একজন ক্রিকেটার ও তার স্ত্রীকে শিশু গৃহকর্মী নির্যাতনের দায়ে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়া গাইবান্ধায় শিশু সৌরভ মিয়ার দু পায়ে গুলি করার দায়ে সরকারদলীয় একজন সংসদ সদস্য বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। এ সবই আমাদের আশান্বিত করে। তবে আশা জাগানিয়া এসব খবরের পাশাপাশি নরসিংদীর পলাশে চোর সন্দেহে নাছির নামে ১২ বছরের এক কিশোরের ওপর রাতভর শারীরিক নির্যাতন করার সংবাদ যখন আমরা পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হতে দেখি; যখন দেখি, ভুল করে মোবাইলফোনে মিসড কল দেয়ার অপরাধে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে এক শিশু শিক্ষার্থীকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের নির্দেশে লাঠিপেটাসহ গলায় জুতার মালা পরিয়ে অমানুষিক শাস্তি দেয়া হয়েছে, তখন আমরা বাস্তবিকই অসহায় বোধ করি। কেবল গ্রেফতার বা বিচার প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাওয়া নয়, দেশ থেকে শিশু নির্যাতনের ভয়াবহতা রোধ করতে হলে শিশু নির্যাতনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান জরুরি।
১৯৮৯ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ শিশু অধিকার বিষয়ক একটি সনদ পাস করে এবং ১৯৯০ সালের ২ সেপ্টেম্বর এ সনদ আন্তর্জাতিক আইন হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। বাংলাদেশের সংবিধান ও শিশু অধিকার সনদের মধ্যে সমন্বয় বিধানের জন্য ১৯৯৪ সালে জাতীয় শিশুনীতি প্রণয়ন ও অনুমোদন করা হয়েছে। সংবিধানের ১৪নং ধারায় শিশু নির্যাতন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ১৫নং ধারায় শিশুদের সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। ১৮নং ধারায় বলা হয়েছে, শিশুদের সব সুযোগ-সুবিধা প্রদানে রাষ্ট্র বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এছাড়াও শিশুদের স্বার্থরক্ষা ও বিকাশের জন্য দেশে ২৫টি বিশেষ আইন ও অধ্যাদেশ রয়েছে। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে, দেশের হাজার হাজার শিশুর জীবন থেকে কেবল সাংবিধানিক অধিকার নয়, ন্যূনতম মানবিক অধিকারও নির্বাসিত। এ অবস্থার অবসান ঘটাতে হলে শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে সরকারকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।