কামরুল ইসলামকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত

স্টাফ রিপোর্টার: সিলেটে শিশু সামিউল আলম রাজনকে পিটিয়ে হত্যার প্রধান আসামি কামরুল ইসলামকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কামরুলকে সিলেটের মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করার পর বিচারক আনোয়ারুল হক এ আদেশ দেন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার বিকালে কামরুলকে নিয়ে সৌদি আরব থেকে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায় পুলিশের ৩ সদস্যের টিম। এরপর রাতেই তাকে ঢাকা থেকে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) কার্যালয়ে নেয়া হয়। সেখান থেকে নেয়া হয় কোতোয়ালি থানা কার্যালয়ে।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের এসি (প্রসিকিউশন) আবদুল আহাদ বলেন, কামরুলের বিরুদ্ধে আদালতের ওয়ারেন্ট ছিলো। আদালত তাকে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন। কামরুলকে সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরিয়ে আনায় সন্তোষ প্রকাশ করেন আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত রাজনের বাবা শেখ আজিজুর রহমান। তিনি বলেন, কামরুলকে কারা সৌদি আরব যেতে সহায়তা করেছে এবং কিভাবে সে সৌদি আরবে গেল তা তার মুখে শুনতে চাই। যারা তাকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে তাদের বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে শাস্তি চাই।

রাজনের বাবা বলেন, কামরুলকে ফিরিয়ে আনায় একটা অগ্রগতি হয়েছে, এতে আমি খুশি কিন্তু তার ফাঁসি না হওয়া পর্যন্ত আমাদের মন শান্তি পাবে না। আমার সন্তানের আত্মাও শান্তি পাবে না। প্রতিপক্ষের আইনজীবীদের প্রচারণায় উদ্বিগ্ন শেখ আজিজুর রহমান বলেন, তারা রাজন গণপিটুনিতে নিহত হয়েছে বলে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছেন। হাইকোর্টে গেলে এসব মামলা দুর্বল হয়ে যাবে বলেও তারা বলাবলি করছে। সেই জায়গায় আমার আশংকা কাটেনি।

প্রায় সব আসামি গ্রেফতার হওয়ায় দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, সাক্ষ্য-প্রমাণ সব এখন আদালতের হাতে, আসামিরা কারাগারে। তাই দ্রুত বিচার শেষ করে আমার ছেলের খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হোক। ৮ জুলাই সিলেট সদর উপজেলার কুমারগাঁওয়ে চুরির অপরাধে পিটিয়ে হত্যা করা হয় পার্শ্ববর্তী কান্দিগাঁও ইউনিয়নের বাদেআলি গ্রামের শেখ আজিজুর আলমের বড় ছেলে রাজনকে। এরপর রাজনকে নির্যাতনের ২৮ মিনিটের ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয় নির্যাতনকারীরাই। সেই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর তোলপাড় শুরু হয় সারা দেশে। এরই মধ্যে সৌদি আরব পালিয়ে যায় প্রধান আসামি কামরুল ইসলাম। ১৩ জুলাই রিয়াদে প্রবাসী বাংলাদেশীরা তাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। কামরুল ছাড়াও রাজন হত্যা মামলার বাকি আসামিরা হচ্ছে- মুহিদ আলম, আলী হায়দার, শামীম আহমদ, পাভেল আহমদ, ময়না চৌকিদার, রুহুল আমিন, তাজউদ্দিন আহমদ বাদল, দুলাল আহমদ, নুর মিয়া, ফিরোজ মিয়া, আছমত উল্লাহ ও আয়াজ আলী। সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতে রাজন হত্যাকাণ্ডের বিচার কাজ চলছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৩৫ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। এর আগে ১৬ আগস্ট ১৩ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিলেট মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক সুরঞ্জিত তালুকদার। এরপর ২২ সেপ্টেম্বর আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ১ অক্টোবর থেকে শুরু হয় সাক্ষ্যগ্রহণ। আসামিদের মধ্যে ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পলাতক দুজন হলেন- কামরুলের ভাই সদর উপজেলার শেখপাড়ার বাসিন্দা শামীম আহমদ ও পাভেল আহমদ।

Leave a comment