দেশের প্রচলিত আইনে বিচার করতে হবে প্রতিটি অপরাধের

অবশেষে তীব্র সমালোচিত সরকারদলীয় সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। এর আগে হাইকোর্ট তার জামিন আবেদন নাকচ করে ১৮ অক্টোবরের মধ্যে গাইবান্ধা চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এতে তার গ্রেফতার নিয়ে অস্পষ্টতা তৈরি হয়েছিলো। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ আত্মসমর্পণের নির্দেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন জানায়। গত বুধবার আপিল বিভাগের অবকাশকালীন চেম্বার বিচারপতি আত্মসমর্পণের আদেশ স্থগিত করলে সেদিন রাতেই গ্রেফতার করা হয় লিটনকে।

সংসদ সদস্য লিটন নিঃসন্দেহে একজন অপরাধী, একই সাথে তিনি সংসদীয় রাজনীতির এক বড় কলঙ্কও বটে। তিনি মদ্যপ অবস্থায় ৯ বছর বয়সী এক শিশুকে গুলি করেছেন, যে শিশু এখনও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। একজন সংসদ সদস্য এতোটা অপ্রকৃতিস্থ হয়ে উঠতে পারেন, ভাবা যায় না। এমপি লিটনকে যদি আইনের আওতায় না আনা হতো, তাহলে দেশে আইনের শাসনের বিষয়টি চরম বিতর্কের মধ্যে পড়তো, সন্দেহ নেই। বলাই বাহুল্য, জাতীয় সংসদের একজন সদস্য কোনোভাবেই আইনের ঊর্ধ্বে থাকতে পারেন না। লিটনের বিরুদ্ধে দু-দুটি মামলা দায়েরের পরও তাকে গ্রেফতার করতে এতো বিলম্ব কেনো হলো, সেটাই বরং বড় প্রশ্ন। অবশ্য তাকে যে শেষ পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে, তা জনমনে স্বস্তি এনে দিয়েছে। তার নির্বাচনী এলাকার মানুষও নিশ্চয়ই এ গ্রেফতারে খুশি হয়েছে।

শুধু গ্রেফতার নয়, লিটনের বিচার প্রক্রিয়াও হতে হবে সুষ্ঠু এবং দ্রুতই শেষ করতে হবে এ বিচার। তিনি তার প্রাপ্য শাস্তি না পেলে অন্যান্য সংসদ সদস্যের মনে এ ধারণা জন্মাবে যে, অন্যায় করলেও তারা পার পেয়ে যাবেন। অপরদিকে টাঙ্গাইল-৩ আসনের সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা ফারুক আহম্মেদ হত্যামামলায় অভিযুক্ত হওয়ার পর থেকে দীর্ঘদিন পলাতক রয়েছেন। ভাবতে অবাক লাগে, জনগণের একজন প্রতিনিধি পলাতক জীবনযাপন করেন। আমরা চাই সংসদ সদস্য রানাকেও খুঁজে বের করবে পুলিশ। দাঁড় করাতে হবে তাকে বিচারের কাঠগড়ায়।

বর্তমান সরকার অনেক সাফল্যের দাবিদার নিশ্চয়ই। প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক পুরস্কারও পাচ্ছেন। কিন্তু সরকারের সাফল্যগুলো ম্লান হয়ে যাচ্ছে সরকারদলীয় লোকজনের কীর্তিকলাপে। সরকারদলীয় যারা সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করছেন, তাদের মধ্যে যেমন আছেন সংসদ সদস্য, তেমনি রয়েছেন আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ-ছাত্রলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগ ইত্যাদি অঙ্গসংগঠনের অনেক নেতাকর্মী। চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি-দখলবাজিসহ নানা অপরাধ করে বেড়াচ্ছেন তারা। এদের বৃহৎ অংশই থেকে যাচ্ছেন আইনের বাইরে। মিডিয়ায় তাদের কুকীর্তি প্রকাশিত হয়ে চলেছে নিয়মিত। আমরা কদাচিৎ দেখতে পাই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে আখেরে সরকার বিপজ্জনক জায়গায় চলে যাবে। সরকারের উচ্চমহল, বিশেষত প্রধানমন্ত্রীকে সরকারি দলের নেতাকর্মীদের প্রতিটি অন্যায়-অপরাধকে গুরুত্বের সাথে আমলে নিতে হবে। দেশের প্রচলিত আইনে বিচার করতে হবে প্রতিটি অপরাধের। এটা শুধু আইনের শাসনের সাথে যুক্ত প্রশ্ন নয়, সরকারের টিকে থাকার প্রশ্নও রয়েছে এতে।

Leave a comment