লাল্টুর স্বীকারোক্তি : সৎ চাচা শরিফুলের চক্রান্তে হত্যা হয়েছে কিশোর সলক

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: এজাহার দায়েরের ২ দিনের মধ্যে কাবিলনগরের কিশোর সলোকের হত্যারহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। পুলিশের হাতে আটক কাবিলনগর গ্রামের লাল্টু নিজেকে সলোক হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলে গতপরশু আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। দু দফা বৈঠক করে হত্যা পরিকল্পনা নির্ধারণ করা হয়। তিওরবিলা গ্রামের চাঁদাবাজ গ্যাংগ্রুপ প্রধান ফারুক ও নিহত সলোকের সৎ চাচা শরিফুল কিলিংমিশন পরিচালনা করেন।

জানা গেছে, আলমডাঙ্গা উপজেলার কাবিলনগর গ্রামের কিশোর সলোক হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি একই গ্রামের মৃত মহির উদ্দীনের ছেলে লাল্টুকে (৫৫) গত ৯ অক্টোবর আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গতপরশু তাকে সংশ্লিষ্ট মামলায় আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালতে ১৬৪ ধারায় সে নিজেকে হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। সলোকের বাপের সাথে তার সৎ বাপ আশির উদ্দীন ও সৎ ভাই শরিফুলের দীর্ঘদিনের বিরোধ চলে আসছিলো। আর এ বিরোধের বলি হতে হলো নিরীহ কিশোর সলোকের। আদালতে জবানবন্দি দিতে গিয়ে লাল্টু অকপটে স্বীকার করেছে যে, গত কোরবানি ঈদের ৪/৫ দিন পূর্বের ঘটনা। সলোকের সৎ চাচা শরিফুল এলাকার চাঁদাবাজ-অপহরণকারী গ্যাংগ্রুপের নেতা তিওরবিলা গ্রামের ফারুকের সাথে তার বাড়ির সামনে ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে গল্প করছে। বিষয়টি দেখে এক সময়ের আন্ডার ওয়ার্ল্ডের সাথে সম্পৃক্ত লাল্টুর মনে খটকা লাগে। সে শরিফুলকে জিজ্ঞেস করে-তোমরা কী বিষয়ে আলাপ করছো? এ প্রশ্নের উত্তরে শরিফুল জানায়- ফারুকের সাথে সে কাঠের ব্যবসা করবো। সে কারণে দুজন একটু আলাপ করছি। এরপর শরিফুল চলে গেলে ফারুক তাকে জানায়- শরিফুল ব্যবসার জন্য তাকে ৫০ হাজার টাকা দেবে। ওই টাকা কাল নিয়ে এসে আমাকে দিয়ো। পরের দিন লাল্টু শরিফুলের নিকট থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে ফারুককে দেয়। এ ঘটনার পরের দিন সন্ধ্যায় তিওরবিলা স্কুলের মাঠে তাদের আবার বৈঠক হয় কীভাবে সলোককে হত্যা করা হবে সে বিষয়ে। সে মিটিঙে লাল্টু, শরিফুল, ফারুক, শফি, কালুসহ আরও অজ্ঞাত দু জন উপস্থিত ছিলো। বৈঠকে শরিফুল সকলকে জানায়- সলোকের বাপ ঢাকায় গরু বিক্রি করতে গেছে। ফিরে আসুক। ঈদের পর মারা হবে। সে সময় সলোককে অপহরণ করে টাকাও নেয়া যাবে, আবার দুনিয়া থেকে সলোককে সরিয়েও দেয়া যাবে। ঈদের পরে আবার আরেক দফা বৈঠক করে হত্যাকারীরা।

সে সময় কাবিলনগরের কিশোর-যুবক ও বয়সী কতিপয় ব্যক্তি ঢাকায় চাকরি করতে যাচ্ছিলো। সে দলে যোগ দিয়ে সলোকেরও প্রচণ্ড ইচ্ছে ছিলো ঢাকায় যাওয়ার। কিন্তু তার ইছা পূরণে বাঁধ সাধেন পিতা সামসুল ইসলাম। সলোকের হার্নিয়া ছিলো। সে কারণে অপারেশন না করিয়ে তিনি ছেলেকে ঢাকা পাঠাতে চাননি। বিষয়টি সৎ চাচা ঘাতক শরিফুল জানতো। এটাকেই সে টোপ হিসেবে ব্যবহার করে। বৈঠকে শরিফুলের সিদ্ধান্ত অনুসারে গত ৩ অক্টোবর সন্ধ্যায় একই গ্রামের কালু সলোকের মোবাইলে রিং দিয়ে নিজেকে কাবিলনগরের ইদ্রিসের ছোট ছেলে যার ঢাকায় কাজ করতে যাওয়ার কথা ছিলো, তার পরিচয় দিয়ে বলে- যদি ঢাকায় যেতে চাস তো দ্রুত আমার সাথে দেখা কর। এ কথা শোনার পর সলোক বাপের কথার তোয়াক্কা না করেই ছুটে যায় ইদিসের বাড়িতে। ইদ্রিসের বাড়ি গিয়ে তার ছোট ছেলেকে না পেয়ে তাদের বাড়িতেই সে বসে ছিলো। এরই মধ্যে কিলিংমিশনের অপর সদস্য কালু সলোকের মোবাইলফোনে রিং দিয়ে নিজেকে ইদ্রিসের ছোট ছেলে পরিচয় দিয়ে খাসকররা বাজারে যেতে বলে। তার কথা অনুযায়ী সলোক খাসকররা বাজারের উদ্দেশে রওনা হয়। পথিমধ্যে তালুককররার মাঠের মধ্যে পৌঁছুলে ফারুক, কালু, শফিক, সমীর তাকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। তারা সলোককে নবীননগরের দিকে নিয়ে চলে। সে সময় লাল্টু কাবিলনগর গ্রামের এক দোকান থেকে পান কিনতে যায়। লাল্টুর সাথে সেখানে কথা হয় শরিফুলের। শরিফুল লাল্টুকে ডেকে নিয়ে তালুককররার দিকে নিয়ে যায়। যেতে যেতে শরিফুল ফারুকের নিকট রিং করে খবর কী জিজ্ঞেস করে। অপর দিক থেকে ফারুক জানায়- হাতে পেয়েছি সমস্যা নেই। এরপর লাল্টু তার মাছ ধরার বাঁধে চলে যায়। পরের দিন রোববার রাতে কালু সলোকের মোবাইলফোনসেট তাদের খড়ের গাদায় রেখে আসে। যাতে সলোকের ফোনে রিং দিয়ে ফারুক ও শরিফুল চাঁদার টাকা দাবি করতে পারে। আর বাকি কাজ ফারুক গং করেছে বলে উল্লেখ করেছে। সোমবার লাল্টু কালুর সাথে দেখা করে খবর জানতে চাইলে কালু তাকে জানিয়েছিলো- শেষ করে দেয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, আলমডাঙ্গা উপজেলার খাসকররা ইউনিয়নের কাবিলনগর মাঠপাড়ার দরিদ্র কৃষক শামসুল হকের একমাত্র ছেলে কিশোর সলোক হোসেন (১৭)। গত ৩ অক্টোবর শনিবার সন্ধ্যায় মোবাইলফোনে ডেকে নিয়ে তাকে অপহরণ করা হয়। অপহরণের পরদিন রোববার আলমডাঙ্গা থানায় জিডি করে তার পিতা। সোমবার বাড়ির পাশের পোয়ালগাদার কাছে পাওয়া যায় অপহৃত কিশোর সলোক হোসেনের মোবাইলফোন। ওই মোবাইলফোনে অজ্ঞাত স্থান থেকে অজ্ঞাত পরিচয়ের ব্যক্তি অপহৃত সলোকের মুক্তির জন্য ১০ লাখ ও পরে আড়াই লাখ টাকা দাবি করা হয়। গত বুধবার বিকেলেও মুক্তিপণের টাকা দাবি করে বলা হয়, টাকা দিলেই সলোককে ছেড়ে দেয়া হবে। অথচ এর একদিন পর গত বৃহস্পতিবার নবগঙ্গা থেকে উদ্ধার করা হলো অপহৃত কিশোরের অর্ধগলিত লাশ। এ ঘটনায় নিহত সলোকের পিতা বাদী হয়ে আলমডাঙ্গা থানায় তার সৎ ভাই ও সৎ চাচাসহ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে একটি এজাহার দায়ের করেন। এদিকে হত্যামামলা দায়েরের মাত্র দু দিন পার হতে না হতে ঘাতকচক্রের ১ সদস্য আটকসহ হত্যারহস্য উদঘাটন করায় আলমডাঙ্গা থানার ওসি আতিয়ার রহমান ও তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোহাব্বত আলীকে সাধুবাদ জানিয়েছে এলাকাবাসী।

solok hotta mamlar asami  lalto