গাংনী প্রতিনিধি: ঢোল আর লাঠির তালে নাচানাচি। বুক ভরে শ্বাস নিয়ে একটু ফুলে উঠে অপর পক্ষকে ভয় দেখানোর গর্জন। বড় বড় চোখ, যাকে বলে- শানিত দৃষ্টি, চোখ রাঙানি। উভয়েরই আত্মরক্ষার কৌশল অবলম্বনের চেষ্টা। টান টান উত্তেজনা। এ খেলার নামই লাঠিখেলা। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী এ খেলাটি কালক্রমে বিলুপ্তির পথে। এরপরও চিড় ধরেনি এ খেলার জনপ্রিয়তায়। তারই প্রমাণ মিলেছে মেহেরপুরের গাংনীতে তিন দিনব্যাপি লাঠিখেলা প্রতিযোগিতায়।
বিভিন্ন জেলা থেকে আসা লাঠিয়ালরা তাদের শারীরিক কসরত দেখিয়ে মন কেড়েছেন দর্শকদের। ইংরেজদের আগ্রাসন থেকে ভূসম্পত্তি ও রাজত্ব রক্ষায় সে সময় থেকেই অনেক রাজা-বাদশা ও জমিদররা গড়ে তোলেন লাঠিয়াল বাহিনী। প্রশিক্ষিত সে লাঠিয়াল জওয়ানদের কৃতিত্ব ছড়িয়ে পড়ে গোটা ভারত উপমহাদেশ জুড়ে। পরবর্তীতে ডাকাতের হাত থেকে বাড়ির জানমাল রক্ষায় লাঠির কসরত রপ্ত করেন অনেকেই। যা জনপ্রিয় খেলায় পরিণত হয়।
এক সময় গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলা হিসেবে লাঠি খেলার বেশ কদর সৃষ্টি হলেও দিনে দিনে তা বিলুপ্তির পথে। গাংনীর মিষ্টিপাড়ার রেজাউল ইসলামের উদ্যোগে গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয় লাঠিখেলা প্রতিযোগিতা। দর্শকরা যেন ফিরে গিয়েছিলেন শৈশবে। মেহেরপুর জেলা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গার ১২টি লাঠিয়াল দল লাঠি খেলায় অংশগ্রহণ করে দর্শকদের আনন্দ দেন। লাঠির কলাকৌশল দিয়ে প্রতিপক্ষের আঘাত থেকে নিজেকে রক্ষা করা এবং পরিবারকে কীভাবে রক্ষা করতে হয় তা প্রদর্শন করেন নবীন-প্রবীণ লাঠিয়ালরা। সেই সাথে ঢোলের তালে তালে নেচে গেয়ে আনন্দ উপভোগ করেন হাজারো লাঠিখেলাপ্রেমী দর্শক। প্রতিযোগিতায় গাংনীর সহড়াতলা দল চ্যাম্পিয়ন, চরগোয়াল গ্রাম রানারআপ, কুষ্টিয়ার বিল বোয়ালিয়া লাঠিয়াল দল দ্বিতীয় রানারআপ এবং গাংনীর বেতবাড়িয়া দল তৃতীয় রানারআপ হওয়ার গৌরব অর্জন করে।
গাংনীর খাদিজা-আশরাফ ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজক রেজাউল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বিজয়ী ও রানারআপ দলের খেলোয়াড়দের হাতে একটি করে খাসি ছাগল তুলে দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেক। বিশেষ অতিথি হিসেবে পুরস্কার বিতরণ করেন যুবলীগ নেতা খাদিজা-আশরাফ ফাউন্ডেশনের পরিচালক আশরাফুল ইসলাম আশরাফ ভেন্ডার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কৃষকলীগ নেতা ফজলুল হক, বিশিষ্ট সমাজসেবক বশির আহম্মেদ, যুবলীগ নেতা আনারুল ইসলাম বাবু, মিজানুর রহমান হাসু ও মহিলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ।