গাংনীর গাড়াডোবে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ করে ভিডিও ধারণ : কলেজছাত্র আটক : মূল হোতা পলাতক

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনী উপজেলার গাড়াডোব গ্রামের সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছে একই গ্রামের শুভ হোসেন নামের এক কলেজছাত্র। গত বুধবার দিনগত রাতে ওই ছাত্রীকে বাড়ি থেকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে বন্ধুদের সহযোগিতায় ধর্ষণ করে তার ভিডিও ধারণ করে শুভ। রাতেই ধর্ষণের শিকার ছাত্রীকে উদ্ধারের পাশাপাশি শুভর সহযোগী একই গ্রামের বাবুল আক্তারকে (২০) আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার ধর্ষণের শিকার ছাত্রীর ডাক্তারি পরীক্ষা ও আদালতে জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। শুভসহ তার কয়েকজন বন্ধুর নামে থানায় মামলা দায়ের করেছেন স্কুলছাত্রীর পিতা। স্কুলছাত্রী ও তার পরিবার জানায়, স্কুলছাত্রীকে পথে চলাফেরার সময় প্রায়ই উত্ত্যক্ত করতো একই গ্রামের আনারুল ইসলামের ছেলে বাঁশবাড়িয়া বিএম কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র শুভ হোসেন। মাঝেমধ্যে প্রেম নিবেদনও করতো। কোনো কিছুতেই পাত্তা দিচ্ছিলো না স্কুলছাত্রী। কিন্তু শুভ তার পিছু ছাড়েনি। সম্প্রতি তাকে আবারো প্রেম নিবেদন করে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। বিষয়টির জোর প্রতিবাদ করে ওই স্কুলছাত্রী। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে ওঠে বখাটে শুভ। পরিকল্পনা করে বুধবার রাত সাড়ে আটটার দিকে ছাত্রীর বাড়ির পাশে অবস্থান নেয় শুভ ও তার কয়েজন বন্ধু। এ সময় স্কুলছাত্রী টিউবওয়েলে পানি সংগ্রহে আসলে তার মুখ বেঁধে বাড়ির পার্শ্ববর্তী জনৈক জয়নালের ইটভাটায় নিয়ে যায়। একই গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে সজল হোসেন, আনিছুর রহমানের ছেলে সাগর হোসেন, আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে সেলিম রেজা ও বাবুল আক্তারের সহযোগিতায় স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ করে শুভ হোসেন। ধর্ষণের ভিডিও মোবাইলে ধারণ করা হয়। এক পর্যায়ে স্কুলছাত্রী অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাকে বাড়ির কাছাকাছি বাঁশবাগানে ফেলে পালিয়ে যায় তারা। এদিকে দীর্ঘ সময় ধরে স্কুলছাত্রীর কোনো খোঁজ না মেলায় পরিবারের লোকজন চিন্তিত হয়ে পড়েন। তার পাড়া প্রতিবেশীদের কাছে সন্ধান নেন। এক পর্যায়ে বাঁশবাগান থেকে তাকে উদ্ধার করে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক গাড়াডোব গ্রামে অভিযানে নামে র‌্যাব-৬ গাংনী ক্যাম্পের একটি দল। অভিযানে বাবুল আক্তারকে আটক করে থানায় সোপর্দ করে র‌্যাব।

রাতেই ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রীর পিতা বাদী হয়ে শুভ ও তার বন্ধু সজল, সাগর, সেলিম ও বাবুলের নামে গাংনী থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় গতকাল বাবুলকে মেহেরপুর আদালতে সোপর্দ করা হলে বিজ্ঞ আদালতের আদেশে তাকে জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানান গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আকরাম হোসেন।

তিনি আরো জানান, গতকালই মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রীর ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়। পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত মিলেছে। এছাড়াও আদালতে বিজ্ঞ বিচারকের কাছে জবানবন্দি দিয়েছে স্কুলছাত্রী। স্কুলছাত্রীর পিতা জানান, তিনি আর কিছুই চান না। তিনি শুধু সুবিচার চান। শুভসহ তার বন্ধুরা মিলে তার মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে। এটি তিনি কোনোভাবেই ক্ষমা করতে পারবেন না। তাই খুব দ্রুত তাদেরকে গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি দাড় করানোর দাবি করেন তিনি। গাংনী থানার ওসি আরো জানান, অভিযুক্ত ধর্ষক শুভ ও তার সহযোগীরা যেখানেই আত্মগোপন করুক না কেন তাদেরকে খুঁজে বের করা হবে।