শীত আসন্ন। চলছে শরতের বিদায় পর্ব। গ্রামবাংলায় ভোরে শীতের আমেজের পাশাপাশি কুয়াশা দেখা যাচ্ছে। এমন আবহাওয়ার মাঝেও বিদ্যুত বিড়ম্বনা কেন? বিদ্যুত বিতরণে নিযুক্তরা লোডশেডিং শব্দটি বলতে নারাজ। ত্রুটির কারণে মাঝে মাঝে বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ রাখতে হবে বলে দাবি। অথচ গ্রামবাংলার গ্রাহক সাধারণকে প্রতিদিনই ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুতহীন থাকতে হচ্ছে।
বিদ্যুত উৎপাদন শুধু বৃদ্ধি নয়, এ ক্ষেত্রে রেকর্ড গড়ার প্রচারণার বিপরীতে অপর্যাপ্ত বিদ্যুত সরবরাহ জনজীবনে দুর্ভোগের কারণ হচ্ছে। এ দিকে, বিদ্যুত সরবরাহে নিয়োজিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বক্তব্য হলো, পল্লী বিদ্যুতের লাইন ও যন্ত্রপাতি পুরোনো, নিম্নমানের এবং কম ধারণক্ষমতাসম্পন্ন। এ কারণে বিদ্যুত বিভ্রাট বেশি হচ্ছে। বিশেষ করে, দেশের দক্ষণি-পশ্চিমাঞ্চলে দিনরাত লোডশেডিং ঘটছে। দিনে গড়ে দু-তিন ঘণ্টা ধরে বিদ্যুত না থাকা যেন সাধারণ ব্যাপার। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলেরা দাবি করছেন, এটা লোডশেডিং নয়, বিদ্যুত বিভ্রাট। সঞ্চালন লাইনের ত্রুটি এবং গ্রিড ফেল করার দরুন এটা হচ্ছে।
বিদ্যুত ব্যাতীত আধুনিক যুগে জীবনযাত্রা অচল। এখন একটি দেশের উন্নতি ও জাতির অগ্রগতি বিদ্যুত ছাড়া কল্পনাও করা যায় না। উন্নয়নশীল বাংলাদেশের জন্য কথাটা আরো বেশি সত্য। এদিকে সরকার ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্যে ঘোষণা দিয়ে নানা ধরনের উদ্যোগ, কর্মসূচি ও পরিকল্পনা গ্রহণ করছে। কিন্তু ব্যাপক প্রচারণা ও প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও দেশের মানুষের বিদ্যুতবিড়ম্বনা বন্ধ হয়নি। সার্বিকভাবে এর মাত্রা কিছুটা কমলেও বহু এলাকায় লোডশেডিং এবং সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার মারাত্মক ত্রুটি যেন নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কর্তৃপক্ষ বিশেষ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিদ্যুতসঙ্কট নিরসনের পদক্ষেপ না নিলে ডিজিটাল দেশের স্বপ্ন পূরণ হবে না।
দেশের সার্বিক চাহিদা মোতাবেক বিদ্যুত উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণের সুব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে, পল্লি অঞ্চলের গণমানুষের কৃষিকাজ সমেত জীবনযাত্রা নির্বিঘ্ন করার ওপর জোর দিতে হবে। বিদ্যুত সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারলে পল্লিতেও ক্ষুদ্র শিল্প গড়ে তুলতে আন্তরিক হবেন অঞ্চলভিত্তিক বিনিয়োগকারীরা। মনে রাখতে হবে আধুনিক বিজ্ঞান যুগে বিদ্যুতের আসা-যাওয়া উন্নয়নে অন্যতম অন্তরায়।