আজ রোববার জাতীয় সংসদ প্রাঙ্গণে আগামীকাল সোমবার গুলশান মসজিদে নামাজে জানাজা শেষে ঢাকায় দাফন
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য পাকিস্তান আমলের এমএনএ মিঞা মোহাম্মদ মনসুর আলী ইন্তেকাল করেছেন ( ইন্না…. রাজেউন)। গতকাল শনিবার ভোর পৌনে ৫টার দিকে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আগামীকাল সোমবার বাদ জোহর গুলশান মসজিদে শেষ দফা নামাজে জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে দাফন কাজ সম্পন্ন করার প্রাথমিক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আজ রোববার বাদ জোহর জাতীয় সংসদ প্রাঙ্গণে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। গতরাতে মরদহে ইউনাইটেড হাসপাতালেই বিশেষ ব্যবস্থায় রাখাছিলো। মরহুমে বড় ছেলে মিঞা মনজুর আহম্মেদ ডিউক এ তথ্য জানিয়ে বেলেছেন, দু ভাই দেশের বাইরে থাকায় সোমবার দাফনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এদিকে চুয়াডাঙ্গা রাহেলা খাতুন গার্লস একাডেমি মরহুমের প্রতি সম্মান জানাতে একদিনের ছুটি ঘোষণা করেছে।
চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার বড় গাংনীর মরহুম মিঞা জসিম উদ্দীনের ৮ সন্তানের মধ্যে মিঞা মোহাম্মদ মনসুর আলী ছিলেন ৬ষ্ঠ। ১৯৩০ সালের ১ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৮৫ বছর। তিনি দু মেয়ে, তিন ছেলে ও স্ত্রীসহ বহুগুণগ্রাহী রেখে গেছেন। মিঞা মো. মনসুর আলী ২০০৯ সালে খুলনাস্থ বাড়িতে মস্তিষ্ক রক্তক্ষরণ রোগে আক্রান্ত হন। চিকিৎসা নিয়ে বেশ সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি। ঢাকার বাসায় বসবাস করতে থাকেন। গত ২১ আগস্ট তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল ভোরে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। তার দু ছেলে মিঞা নিয়াজ আহম্মেদ মনসুর ও মিঞা বকতিয়ার আহম্মেদ মনসুর কানাডা প্রবাসী। দু ভাই গতকালই দেশের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। আজ রাত ৮টা নাগদ দেশে পৌছুবেন বলে আশা করছেন তার নিকজনেরা।
জানা গেছে, মিঞা মোহাম্মদ মনসুর আলী ১৯৬৫ সালে মুসলিম লীগ প্রার্থী হিসেবে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, কোটচাঁদপুর ও মহেশপুর এলাকার মেম্বার অব ন্যাশনার অ্যসেম্বলি (এমএনএ) নির্বাচিত হন। স্বাধীনতার পর ১৯৭৯ সালে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে কুষ্টিয়া-৭ আসন ( চুয়াডাঙ্গা) সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেন। চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি দীর্ঘদিন। পারিবারিকসূত্র এসব তথ্য জানিয়ে বলেছে, ছাত্রজীবন থেকেই মিঞা মো. মনসুর আলী রাজনীতি শুরু করেন। তিনি চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার মুন্সিগঞ্জ একাডেমিতে লেখাপড়া শুরু করে অবিভক্ত বাংলার কৃষ্ণনগর কলেজ থেকে বিএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। কৃষ্ণনগর কলেজেই তিনি মুসলিম লীগের ছাত্রসংগঠনের জেনারেল সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পান। পাটসহ নানা ব্যবসার সুবাদে তিনি খুলনার খালিশপুরে বসবাস করতেন। খুলনার দৌলতপুরে রয়েছে তার দৌলতপুর টেডার্স অ্যান্ড কোম্পানি। তিনি চুয়াডাঙ্গা রাহেলা খাতুন গার্লস একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা। তিনি তার মায়ের নামে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করা ছাড়াও নিজের নামেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে গেছেন।
মিঞা মো. মনসুর আলীর মৃত্য সংবাদ গতকাল ছড়িয়ে পড়লে চুয়াডাঙ্গার রাজনৈতিক মহলসহ বিভিন্ন মহলেই শোকের ছায়া নেমে আসে। চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান দুদু, চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির ১নং যুগ্মআহ্বায়ক মাহমুদ হাসান খান বাবু, যুগ্মআহ্বায়ক অ্যাড. ওয়াহেদুজ্জামান বুলা, যুগ্মআহ্বায়ক খন্দকার আব্দুল জব্বার সোনাসহ অনেকেই শোকবার্তায় মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে শোক সন্তুপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। শোকবার্তায় বলা হয়েছে, মরহুম মনসুর আলী চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গার উন্নয়নে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এলাকার জনগনের প্রতি ভালোবাসার কথা জনগণ মনে রাখবে। চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রদলও শোকবার্তায় মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেছে।
এদিকে রাহেলা খাতুন গার্লস একাডেমি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি শওকত আলী বিশ্বাস এক শোকবার্তায় বলেছেন, রাহেলা খাতুন গার্লস একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা বিশিষ্ট রাজনীতিক, সাবেক সংসদ সদস্য বিশিষ্ট সমাজসেবক বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা মিঞা মো. মনুসর আলীর মৃত্যুতে রাহেলা খাতুন গার্লস একাডেমির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শওকত আলী বিশ্বাস, প্রধান শিক্ষক আমিরুল ইসলামসহ সকল শিক্ষক-কর্মচারী ও ছাত্রীবৃন্দ শোকাহত। আমরা মরহুমের বিদেহী রুহের মাগফেরাত কামনা করছি। শোকাহত পরিবারের প্রতি জানাচ্ছি সমাবেদনা। মরহুমের প্রতি সম্মানার্থে বিদ্যালয়ে ১ দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে, মিঞা মোহাম্মদ মুনসুর আলীর মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে বিএনপি শিবিরে শোকের ছায়া নেমে আসে। মিঞা মুনসুর আলীর সাথে যারা এক সাথে রাজনীতি করেছেন, তাকে নিকট থেকে দেখেছেন-জেনেছেন তাদের অনেকেই শোকবিহ্বল হয়ে পড়েন। অনেক প্রবীণ নেতাকর্মীরা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন এ সংবাদ পেয়ে। মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করে শোকবার্তা পাঠিয়েছেন আলমডাঙ্গা পৌর মেয়র মীর মহিউদ্দীন। মরহুম মিঞা মোহাম্মদ মুনসুর ছিলেন গণতন্ত্রের জন্য নিবেদিত প্রাণ নেতা। তিনি স্বচ্ছ ও নিষ্কলুষ রাজনীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। তার মৃত্যুতে দেশ প্রকৃত দেশপ্রেমিক রাজনীতিক হারালো বলে তিনি শোকবার্তায় উল্লেখ করেছেন।