সেলাইয়ের সুচ দুরস্ত, দাঁত খোঁচানোর চিকন কাঠিটাও তৈরি করতে পারি না আমরা, তখন বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা প্রতিবেদনে আমাদর জন্য সুখবর থাকবে কেন? সামষ্টিক অর্থনীতি ও অবকাঠামোর মতো মৌল ভিত্তিগুলো খানেকটা জোরদার হলেও দক্ষতা বৃদ্ধিতে পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ।
এবারের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা প্রতিবদনে দেখা গেছে, এক বছরের ব্যবধানে প্রতিবেশী ও সমমানের অর্থনীতির দেশ ভারত ৭১ থেকে ৫৫-তে উঠে এসেছে। ৬৮ নম্বরের ভিয়েতনাম এখন ৫৬ নম্বরে। শ্রীলঙ্কা ৭৩ থেকে ৬৮-তে উঠেছে। তাই ১৪০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের ১০৯ থেকে ১০৭-এ উত্তরণকে সামান্যই বলতে হয়। ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ বিবেচনায় ১০৬ দেশের পেছনে পড়ে থাকাও ইতিবাচক কিছু নয়! সার্বিক বিচারে সূচক খানেকটা উঠলেও আপেক্ষিক বিচারে তা হতাশাব্যঞ্জক। ১৬ সমস্যার আলোকে সূচকটি নির্ধারিত হয়। এর প্রথম ছয়টিতে কোনোই পরিবর্তন আসেনি। এগুলো হচ্ছে অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, দুর্নীতি, অক্ষম আমলাতন্ত্র, সরকারের স্থিতিশীলতা নিয়ে সংশয়, ঋণ প্রাপ্তিতে সীমাবদ্ধতা ও সরকারি নীতির সমন্বয়হীনতা। শিক্ষিত শ্রমশক্তির অভাব, মূল্যস্ফীতি, অপরাধ ও চুরি এবং দুর্বল স্বাস্থ্যসেবা- এ চারটি সমস্যার মাত্রা আগের তুলনায় কমলেও পরিবর্তনটি সামান্য।
এবার বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীন সূচকের ২৮ নম্বরে অপরিবর্তিত থাকা বাংলাদেশসহ অন্য উদীয়মান ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য বড় চিন্তার কারণ বলেই মনে করছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। আমরা চীনের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি বৃদ্ধির আশা করছি। দেশটি থেকে অনেক কারখানা বাংলাদেশে স্থানান্তর করা হবে বলেও প্রত্যাশা রয়েছে। সিপিডি মনে করছে, চীন স্থবিরতা থেকে বেরোতে না পারলে আমাদের প্রত্যাশা পূরণ হবে না। বার্তাটি আমরা যতো দ্রুত অনুধাবন করতে পারবো ততোই মঙ্গল। কিছুদিন আগেই বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়। এখন আমরা মধ্যম আয়ে উন্নীত হওয়ার লড়াইয়ে রয়েছি। এছাড়া জাতিসংঘের সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনে সফল হওয়ার পর বাংলাদেশ এবার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ নিচ্ছে। এমন এক সময়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ নিয়ে নেতিবাচক কোনো সংবাদই কাম্য হতে পারে না। ভারত এক লাফে ১৬ ধাপ এগোতে পারে, বাংলাদেশ কেন পারে না? অগ্রগতির পথে বাধাগুলো তো চিহ্নিত! তাহলে কেন সেগুলো গুঁড়িয়ে দিতে পারি না! কেন প্রতিবন্ধকতার সামনে বারবার অসহায় আত্মসমর্পণ!
সাফল্যের পথে প্রতিবেশীরা এগিয়ে যাবে, আমরা পিছিয়ে থাকবো- এ খুবই গ্লানিকর। যে বাধাগুলো আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশকে সঙ্কীর্ণ করে রাখছে সেগুলো রাতারাতি দূর করা সম্ভব নয়। কিন্তু অপসারণ অভিযান শুরুটা তো করতে হবে! সব জঞ্জাল বলিষ্ঠ নেতৃত্বে সরিয়ে সক্ষমতা অর্জনে শুরু হোক পথ চলা।