গাংনী প্রতিনিধি: আবারো আলোচনা-সমালোচনায় মেহেরপুর গাংনী উপজেলার বাওট সোলাইমানী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সেই কর্তৃপক্ষ। সভাপতি নির্বাচনে তুমুল বিতর্কের পর এবার গোপনে অফিস সহকারী নিয়োগে বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। এনিয়ে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি গ্রামবাসীর রোষানলে পড়েছেন। গ্রামে বিরাজ করছে চরম উত্তেজনা। তবে কঠোরহস্তে অনিয়ম দমনের ঘোষণা দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার।
অভিযোগে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী নিয়োগের লক্ষ্যে গত ১৭ সেপ্টেম্বর একটি স্থানীয় ও ১৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম। প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয় পরিচালনা পর্যদের সভাপতি নিয়ামত আলী ও সহকারী প্রধান শিক্ষক সোহারেব হোসেনের পছন্দের প্রার্থী নিয়োগ দেয়ার লক্ষ্যে প্রক্রিয়া শুরু হয়। নিয়োগ প্রত্যাশী কয়েকজন ও গ্রামবাসীর মধ্যে তীব্র প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধের দাবিতে গ্রামের একজন শিক্ষা অফিসসহ বিভিন্ন দফতরে লিখিত আবেদন করেন। এ ব্যাপারে মামলারও প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।
অফিস সহকারী পদে আবেদনের সুযোগ বঞ্চিত বাওট গ্রামের হারেজ আলীর ছেলে শমসের আলী ও ঈমান আলীর ছেলে সাহাবুল ইসলাম জানান, এলাকায় খুঁজে পাওয়া যায়না এমন দুটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে তা আটকে রাখেন প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি। জাতীয় পত্রিকায় ১৮ সেপ্টেম্বর ও স্থানীয় পত্রিকায় ১৭ সেপ্টেম্বর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়। এতে দেখা যায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ১০ দিনের মধ্যে তিনশত টাকার পোষ্টাল অর্ডারসহ আবেদন করতে হবে। কিন্তু বিদ্যালয়ের নোটিশ বোর্ড, পরিচালনা পর্যদ সদস্য, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসসহ সংশ্লিষ্ট কোথাও বিজ্ঞপ্তি খুঁজে পাননি তারা। গত ২৪ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয়ের ওয়েব সাইটে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। তখন বিষয়টি নজরে পড়ে সকলের। কিন্তু লাভ হয়নি। ঈদের ছুটি থাকায় পোস্টাল অর্ডার সংগ্রহ করে তাদের পক্ষে আবেদন সম্ভব হয়নি। প্রধান শিক্ষক, সভাপতি ও সহকারী প্রধান শিক্ষকের নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে তাদের পছন্দের প্রার্থী নিয়োগ দিতেই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশে টালবাহানা করেছেন বলে অভিযোগ আবেদনের সুযোগ বঞ্চিতদের।
শুধু গোপনে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ নয় পরিচালন পর্যদের বেশ কয়েকজন সদস্যকে অন্ধকারে রেখে নিয়োগ প্রক্রিয়া করা হয়েছে বলে জানান কয়েকজন সদস্য। পরিচালনা পর্যদের সদস্য মোলাম হোসেন ও মফিজুল হক ঠাণ্ডু এ প্রসঙ্গে জানান, সদ্য গঠিত পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের পরিচিতি সভার জন্য ঈদের আগে একটি সভা আহ্বান করা হয়। সভার এজেন্ডায় বিদ্যালয়ের জমির পিলার স্থাপন ও দোকানঘরের ভাড়ার বিষয়ে আলোচনা ছিলো। নিয়োগের বিষয়ে কোনো এজেন্ডা কিংবা আলোচনা হয়নি। সভাপতি নিয়ামত আলী ও প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম তাদের পছন্দের প্রার্থী নিয়োগের লক্ষ্যে রেজুলেশনে এজেন্ডা গোপন করেছেন। নিয়োগ বাণিজ্যের গন্ধ পেয়েছেন বলে অভিযোগ তাদের। নিয়োগ নীতিমালা লঙ্ঘন করেন বেশিরভাগ সদস্যদের অন্ধাকারে রেখেই প্রক্রিয়া করা হয়েছে বলেও জানান তারা।
এদিকে ২৪ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয়ের ওয়েব সাইটে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর থেকেই গ্রামবাসীর তীব্র রোষানলে পড়েছেন সভাপতি, প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক। নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলের দাবি গ্রামবাসী বেশ জোরেসোরে উত্থাপন করলেও তাতে কর্ণপাত করছেন না তারা। গ্রামের কয়েকজন অভিযোগে জানান, সহকারী প্রধান শিক্ষক সোহারেব আলী স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে বেশিরভাগ শিক্ষক ও কমিটির সদস্যদের তার কথামতো চলতে বাধ্য করেন। প্রধান শিক্ষক ও সভাপতিতে পেছন থেকে নাটাইয়ের মতোই টানেন তিনি। কিছুকিছু ক্ষেত্রে প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির নমনীয়তা থাকলেও সোহারেব আলীর কারণে তা বাস্তবায়ন করতে পারেন না। কিন্তু প্রধান দায়িত্বে না থাকায় সোহারেব সব সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। গ্রামের মানুষের মাঝে চলমান ক্ষোভ ও রোষানল সৃষ্টির জন্য সোহারেবকেই দায়ি করেছেন গ্রামের অনেকেই।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি নিয়ামত আলী জানান, কাগজপত্রের সব কাজ করেছেন প্রধান শিক্ষক। নিয়মতান্ত্রিকভাবেই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ মিথ্যা।
প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম জানান, বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর পত্রিকা তার কাছে পৌছাতে দেরি হওয়ায় দেরিতে ওয়েব সাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। এদিকে গ্রামের বর্তমান পরিস্থিতি ও নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিষয়ে কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল আমিন। তিনি বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দ্রুত পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অভিযোগ সঠিক হলে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলপূর্বক দায়িদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। বাওট সোলাইমানী মাধ্যমিক বিদ্যালয়েল নব গঠিত পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি নির্ধারণ নিয়েও অভিযোগ ওঠে। নির্বাচনী তফশিল গোপন করে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক জোগসাজশে নিয়ামত আলীকে সভাপতি নির্ধারণ করেছিলেন। এ বিষয়ে গত জুলাই মাসে বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন বর্তমান সদস্য মোলাম হোসেন। অফিস সহকারী পদে নিয়োগের জন্য ছাতিয়ান গ্রামের খেদু শেখের ছেলে তারিকের কাছ থেকে টাকা গ্রহণ করা হয়েছে বলেও অভিযোগে জানিয়েছিলেন মোলাম হোসেন। নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগে এর আগে সভাপতির বিরুদ্ধে মামলাও করেছিলেন গ্রামের মহিবুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। মামলায় দীর্ঘদিন ধরে কমিটির কার্যক্রম ঝুঁলেছিলো। সেই সভাপতিকে আবারো সভাপতি নির্ধারণ করায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছেন গ্রামবাসী।