কর্তাব্যক্তিরা যতো কথাই বলুন না কেন, মানুষ শঙ্কামুক্ত হতে পারছে না। প্রতিনিয়ত অসংখ্য খুনের ঘটনা ঘটছে আর মানুষের শঙ্কার পারদ কেবলই চড়ছে। এসব খুনের ঘটনা যেমন সাধারণ অপরাধীরা ঘটাচ্ছে, তেমনি জঙ্গি-সন্ত্রাসীরাও ঘটিয়ে চলেছে। সবচেয়ে সুরক্ষিত এবং কূটনৈতিকপাড়া হিসেবে পরিচিত গুলশানের রাস্তায় গত সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে তাভেলো সিসারো নামের এক ইতালীয় নাগরিককে। তিনি এখানে একটি আন্তর্জাতিক এনজিওতে কর্মরত ছিলেন। সেই রাতেই ইসলামিক স্টেট বা আইএসের একটি ওয়েবসাইটে হত্যার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেয়া হয়েছে। ঘটনার পরপরই যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ কয়েকটি দেশ বাংলাদেশে থাকা তাদের নাগরিকদের সতর্ক করে দিয়েছে এবং চলাফেরা সীমিত করতে বলেছে।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট দলের বাংলাদেশে আসার কথা থাকলেও তারা আসেনি। দেশটির পক্ষ থেকে জঙ্গি হামলার আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে। একটি নিরাপত্তা পর্যবেক্ষক দল বাংলাদেশ ঘুরে গেছে। তারা যাওয়ার পর সিদ্ধান্ত হবে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট দল আসবে কি-না। বাংলাদেশের উচ্চপর্যায় থেকে এসব আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এর আগে পাশ্চাত্যের বিভিন্ন গণমাধ্যমে নিরাপত্তা সূত্রের বরাত দিয়ে খবর পরিবেশন করা হয়েছিলো যে, সেপ্টেম্বরের শেষ দিক থেকে বাংলাদেশে থাকা পশ্চিমা স্বার্থসংশ্লিষ্ট স্থাপনা বা ব্যক্তির ওপর হামলা শুরু হতে পারে। ইতালীয় নাগরিকের ওপর হামলার ঘটনা এখন তাদের আশঙ্কাকেই সত্য প্রমাণ করছে। অবশ্য ওয়েবসাইটে আইএসের দাবি কিংবা এটি জঙ্গি হামলা কি-না, তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে বাংলাদেশে জঙ্গিদের যে অস্তিত্ব রয়েছে এবং মোটামুটি ভালোভাবেই রয়েছে, সেটি অস্বীকার করা যাবে না। বিভিন্ন স্থানে অস্ত্র-গোলাবারুদসহ জঙ্গি ধরা পড়া, আধুনিক অস্ত্রসহ প্রশিক্ষণ শিবির পাওয়া, একের পর এক মুক্তমনা ব্যক্তিকে হত্যা করা- এসব প্রমাণ তো উড়িয়ে দেয়া যাবে না। অস্বীকার করলেই সত্য কখনো মিথ্যা হয়ে যায় না। উটপাখির মতো বালিতে মুখ গুঁজে থাকলেও লাভ হয় না। বরং সত্য রূঢ় হলেও তাকে স্বীকার করে নেয়া এবং হুমকি মোকাবেলায় যথাযথ ব্যবস্থা নেয়াটাই এ মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি।
গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, নানা নামে বাংলাদেশে অর্ধ শতাধিক জঙ্গি সংগঠন তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এদের কোনো কোনোটি আল-কায়েদা, আইএস কিংবা তালেবানের সাথে সম্পৃক্ত বলেও অভিযোগ আছে। অন্যদিকে এ দেশে জঙ্গিদের নানাভাবে মদদ দেয়ার লোকেরও অভাব নেই। তাই এসব অপশক্তি আরো শক্তি সঞ্চয় করে দানব হয়ে ওঠার আগেই তাদের দমন করতে হবে। বাংলাদেশকে জঙ্গিমুক্ত রাখতে হলে শুধু কথায় নয়, কাজেও তার প্রমাণ দিতে হবে। দ্রুততম সময়ে ইতালীয় নাগরিকের হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে বিচারের আওতায় আনা হোক। খুনের আগে কেন গোয়েন্দারা তথ্য পেলো না? কেন এ ধরনের হত্যাকাণ্ড রোধ করা সম্ভব হলো না, তাও খতিয়ে দেখা দরকার।