স্টাফ রিপোর্টার: পবিত্র কাবা শরিফ থেকে ৯ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে মিনা। পায়ে হেঁটে, আবার কেউবা গাড়িতে চড়ে পৌঁছে গেছেন হাজিরা। তাদের দেহ মোড়ানো এহরামের শ্বেত শুভ্র দুই খণ্ড কাপড়। ধনী-গরিব, আশরাফ-আতরাফ সকলেরই দীন বেশ। তাদের ভীতু-কম্পিত হূদয়মথিত কণ্ঠে উচ্চারিত তালবিয়া। লাব্বাইক! আল্লাহুম্মা লাব্বাইক!! লা শারিকা লাকা লাব্বাইক!! ইন্নাল হামদা, ওয়ান নির্মাতা, লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক (আমি হাজির! ও আল্লাহ! আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সমস্ত প্রশংসা এবং নিয়ামত শুধু তোমারই, বিশ্ব-সমগ্র সাম্রাজ্যও শুধুই তোমার, তোমার কোনো শরিক নেই)। এ অমিয় ধ্বনি মিনা উপত্যকার আকাশ-বাতাসে স্বর্গীয় আবহ রচনা করে চলেছে।
মিনায় আজ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় এবং সকাল অবধি অবস্থান করবেন তারা। এখানে তালবিয়া, জিকির-আসকার নফল নামাজ দোয়া-আমলের মধ্যদিয়ে সময় অতিবাহিত করছেন হাজিরা। অতঃপর ৯ জিলহজ ফজরের পর হাজিরা যাত্রা করবেন নতুন গন্তব্যে। যেখানে হবে হজের মূল পর্ব সেই আরাফাতের ময়দানে। মিনা থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে আরাফাতের এই দিগন্ত-বিস্তৃত প্রান্তরে ৯ জিলহজ (বাংলাদেশে ৮ জিলহজ) সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করবেন। মক্কা শরিফের অদূরে এই আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের দিনকেই হজের দিন বলা হয়। আরাফাত থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে মুজদালিফায় রাত যাপন ও পাথর সংগ্রহ করবেন হাজিরা। সেখানে যত রাতই হোক মাগরিব ও এশার নামাজ একসাথে আদায় করবেন তারা। পরদিন ভোরে সেখান থেকে আবার মিনায় ফিরবেন। মিনায় এসে জামারায়ে আকাবায় (বড় শয়তানকে) কঙ্কর বা ছোট পাথর মারা, কোরবানি ও মাথা মুড়িয়ে বা চুল ছেঁটে কাবা শরিফ ফিরে তাওয়াফ করবেন।
মিনা এখন তাঁবুর শহর। যেদিকে চোখ যায়, তাঁবু আর তাঁবু। এসব তাঁবুতে থাকছেন তারা। এ সময় মিনায় আগুন জ্বালানো নিষেধ। কারণ এতে তাঁবুতে আগুন লেগে যেতে পারে। ফলে এতো লোকের খাবারও বাইরে থেকে রান্না করে নিয়ে আসতে হয়। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এসব তাঁবুতে বাতি আছে, আছে বাথরুম। কিছুদূর পর পর আছে খাবারের দোকান। এই দোকানগুলো বছরে পাঁচদিনের জন্য খোলা থাকে। মোয়াল্লেমের কাছ থেকে দরপত্রের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা দোকান নেন। অল্প সময়ের দোকান বলে জিনিসপত্রের দামও কয়েক গুণ। বেশির ভাগ দোকানি ভারতীয় ও পাকিস্তানি। হাজিদের সেবায় মিনায় কিছু দূর পর পরই রয়েছে হাসপাতাল। সেখানে চলছে সার্বক্ষণিক সেবাদান। হাজিদের যেন কষ্ট না হয় সে জন্য মিনায় যাওয়ার সব রাস্তা যানজটমুক্ত রাখা হয়েছে। হজের এই পাঁচদিন ছাড়া মিনার পুরো এলাকা খালি পড়ে থাকে। চারপাশের প্রবেশদ্বারও তখন বন্ধ করে দেয়া হয়। বন্ধ করে দেয়া হয় বৈদ্যুতিক সংযোগ, পানির লাইন, টেলিফোন সংযোগ। হজের দুদিন আগে মিনা এলাকার ফটক খোলা হয়। হজের দুদিন পর আবার সব বন্ধ করে দেয়া হয়। এখন দিন-রাত হেলিকপ্টারে টহল দেয়া হচ্ছে, কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না আল্লাহর মেহমানদের। তাঁবুগুলো দেখতে একই রকম হওয়ায় অনেক হাজির পক্ষে পথঘাট ঠিক রেখে নিজের তাঁবুতে যাতায়াত কঠিন হয়। এর জন্য এখানে আছে স্কাউট, হজ গাইড। বাংলাদেশ হজ কার্যালয়ের পক্ষ থেকে হাজিদের সহায়ক আরাফাত, মিনার তাঁবু নম্বর-সংবলিত মানচিত্র বিতরণ করা হয়েছে।