স্টাফ রিপোর্টার: ভারত থেকে গরু আসা বন্ধ থাকায় এবার ঈদুল আজহায় কোরবানির পশুর সঙ্কট হতে পারে বলে বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যাপক আলোচনা-গুঞ্জন চলে। কোরবানির পশুর দামও আকাশ ছোঁয়া হতে পারে বলে আশঙ্কা ছিলো। তবে মিয়ানমার থেকে গরুর কয়েকটি চালান আসায় এবং ভারত থেকেও গরু আসতে শুরু করায় দেশবাসীর কোরবানির পশু ও তার উচ্চমূল্য নিয়ে যে দুশ্চিন্তা ছিলো তা কাটতে শুরু করেছে। অবশ্য সরকারের তরফ থেকে বরাবরই বলা হয়েছে, কোরবানির জন্য দেশেই চাহিদানুযায়ী পশু রয়েছে। কোনো ধরনের সংকটের সম্ভাবনা নেই।
সরকারের এ দাবির প্রতিফলন পাওয়া গেছে দেশীয় খামারিদের তত্পরতা থেকে। তারা তাদের খামারে উত্পাদিত গরু বাজারজাত করার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। ক্রেতাদের আকর্ষণ করার জন্য তারা প্রচারণাও শুরু করেছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্নস্থানে খামারিরা কোরবানির পশুর পোস্টার ছাপিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে। সম্প্রতি মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র বলেছেন, ভারত থেকে গরু না এলেও ঈদে কোরবানির পশু সংকটের কোনো আশঙ্কা নেই। যে পরিমাণ পশু আমাদের মজুদ আছে, তার সরবরাহ ঠিক রাখতে পারলে চাহিদার পুরোটাই পূরণ করা সম্ভব। দামও স্বাভাবিক থাকবে বলে তিনি আশা করেন। তিনি বলেন, পশুর সবটাই দেশীয় উত্স থেকে পাওয়া যাবে।
রাজশাহী অঞ্চলের সবচেয়ে বড় পশুরহাট সিটি হাট-এর ইজারারদার আতিকুর রহমান কালুর সাথে আলাপকালে তিনিও জানান, এবার কোরবানির পশুর সংকট হবে না। তিনি বলেন, ঈদুল আজহার সপ্তাহ খানেক আগে কোরবানির পশুর হাট জমজমাট হয়। ঈদের এখনও দুই সপ্তাহ বাকি। কিন্তু সবকিছু দেখে মনে হচ্ছে হাট বসার আগেই গরু নিয়ে চলছে হা হুতাশ। আরে পশুর জন্য তো অপেক্ষা করতে হবে। ভারতীয় গরুর আমদানি কম হলেও, আশা করা যায় কোনো সংকট হবে না।
সরকারের হিসাব অনুযায়ী, এবছর সারা দেশে ৩০ লাখ গরু এবং ৬৯ লাখ ছাগল-ভেড়া কোরবানি হতে পারে।
রাজশাহী জেলা কাস্টমস সূত্র জানায়, রাজশাহীর সীমান্তের ১২টি পয়েন্ট দিয়ে গরু আসে। ওই সব পয়েন্ট দিয়ে গরু আসা কমলেও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। তবে দিন যতই গড়িয়েছে ততোই সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। জুলাই থেকে চলতি মাস পর্যন্ত এসব পয়েন্ট দিয়ে গরু, মহিষ ও ছাগল আমাদানির সংখ্যা প্রায় ৯০ হাজার ছাড়িয়েছে। চলতি মাসের শুরু থেকে যশোর সীমান্তের ৫টি করিডোর দিয়ে ভারতীয় গরু আসা শুরু হয়েছে। গত ৮ দিনে এসেছে ৬ হাজার ৩১৫টি গরু ও মহিষ।ভারত থেকে বাংলাদেশে গরু মহিষ আসে ২৮টি কড়িডোর দিয়ে। এরমধ্যে রাজশাহী অঞ্চলে ১২টি, যশোরে ৯, খুলনায় ৪, সিলেট ও চট্টগ্রামে ৩টি।
মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ জানান, বর্তমানে দেশে গরু মজুদ আছে আড়াই কোটি। এরমধ্যে গাভী বা বকনা এক কোটি ২০ লাখ। বাকি এক কোটি ৩০ লাখ এঁড়ে ও দামড়া। এই এক কোটি ৩০ লাখের মধ্যে একবছর বয়সী গরু রয়েছে ৬৫ লাখ। বাকি ৬৫ লাখ কোরবানি করা যেতে পারে, তবে সব গরু বাজারে আসবে না। কোরবানির জন্য ৪০ লাখ গরু এবং ৬৯ লাখ ছাগল-ভেড়া সরবরাহের পূর্ণ প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সরবরাহ নিশ্চিত করতে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট মাঠকর্মীরা ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ে আগে থেকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছে।