মাথাভাঙ্গা মনিটর: ব্রাজিল বিশ্বকাপ ফাইনালের পর এক বছরের ব্যবধানে কোপা আমেরিকার ফাইনালেও ব্যর্থতার পরিচয় দেন লিওনেল মেসি। বার্সেলোনার হয়ে একের পর এক গোল করে অসাধারণ সব কীর্তি গড়া মেসি জাতীয় দলের হয়ে নিজের সেরা পারফরম্যান্স প্রদর্শন করতে পারছেন না। শুরু থেকে দুর্দান্ত খেললেও চূড়ান্ত লড়াইয়ে এসে যেন বিবর্ণ হয়ে পড়ছেন তিনি।
বিশেষ করে দুটি বড় টুর্নামেন্টের ফাইনালে নিষ্প্রভ থাকায় একের পর এক সমালোচনার শিকার হন এই ক্ষুদে জাদুকর। মাত্রাতিরিক্ত সমালোচনার কারণে জাতীয় দলের হয়ে তিনি আর খেলবেন না বলে গুঞ্জন ওঠে। এমনকি কোচ জেরার্ডো মার্টিনো জানিয়েছেন, মেসির জায়গায় তিনি হলে আর্জেন্টিনার হয়ে খেলা ছেড়ে দিতেন। গত মাসের শেষ দিকে একই কথার প্রতিধ্বনি শোনা যায় মেসির জাতীয় দলের সতীর্থ কার্লোস তেভেজের কণ্ঠেও। তিনি জানিয়েছেন, মেসির জায়গায় হলে তিনি আর দেশের হয়ে খেলতেন না। আবার আরেক জাতীয় দল ও ক্লাব সতীর্থ হাভিয়ের মাসচেরানো জানিয়েছেন, মেসি যেই ধরনের চাপ ও সমালোচনার শিকার হচ্ছেন তাতে করে তিনি কখনো মেসি হতে চান না। সোমবার অবশ্য অন্য কয়েকজন আর্জেন্টাইন তারকার মতো সার্জিও আগুয়েরোও জানিয়েছেন, মেসি জাতীয় দলের হয়ে খেলা ছাড়বেন না, আরো কয়েক বছর খেলা চালিয়ে যাবেন। যেই মেসিকে নিয়ে এতো গুঞ্জন সেই তিনি এতোদিন চুপ ছিলেন। তবে গত বুধবার অবশেষে দেশের হয়ে খেলা-না খেলার বিষয়ে মুখ খুললেন তিনি। মেক্সিকোর বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ শেষে তিনি জানিয়েছেন, কোচ যতোদিন ডাকবেন ততোদিন তিনি দেশের হয়ে খেলে যেতে চান। এ সময় তিনি বিশ্বকাপ ও কোপা আমেরিকার ফাইনালে আর্জেন্টিনার হেরে যাওয়াটা হতাশাজনক ও দুঃখজনক হলেও এজন্য আলবিসেলেস্তেরা কৃতিত্বের দাবি রাখেন বলেও জানান।
এক সাক্ষাৎকারে লিওনেল মেসি বলেন, আমরা টানা দুটি ফাইনালে (বিশ্বকাপ ও কোপা) উত্তীর্ণ হয়েছি এবং সেটি এতো সহজ নয়। দুর্ভাগ্যবশত আমরা দুটির একটিও জিততে পারিনি। তবে আমি মনে করি, বিশ্বকাপ ও কোপা আমেরিকার ফাইনালে উঠে আমরা যেটি করে দেখিয়েছি সেটির জন্য আমাদের অনেক কৃতিত্ব পাওয়া উচিত। এটি ছোট কোনো ব্যাপার নয়। তবে বিশ্বকাপ ও কোপা আমেরিকার শিরোপা জিততে না পারার হতাশ লুকাননি মেসি, অবশ্যই সবাই দুটি শিরোপা অথবা দুটির যেকোনো একটি শিরোপা জিততে পারাটাই বেশি ভালোবাসতো। কিন্তু এটি সম্ভব হয়নি। আমি মনে করি আমাদের গায়ে অতিমাত্রায় সমালোচনা ছেঁটে দেয়া হয়েছে, আমি যেটির কোনো যৌক্তিক ও পর্যাপ্ত কারণ দেখছি না। যদিও আমরা কোনো ট্রফি জিতিনি, তথাপি যা করেছি তার জন্য আমরা অবশ্যই কৃতিত্বের দাবিদার।
এরপর দেশের হয়ে খেলা ছেড়ে দেয়ার গুঞ্জন অস্বীকার করেন চারবারের ফিফা বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারজয়ী এ তারকা, যতোদিন ম্যানেজার (কোচ) চাইবেন আমি ততোদিন দেশের হয়ে খেলে যাবো। দুটি শিরোপা জিততে না পারার হতাশা ও মাত্রাতিরিক্ত সমালোচনার পরও আমি আর্জেন্টিনার হয়ে খেলে যাচ্ছি। আমি মনে করি, আমরা (বড় কোনো শিরোপা জয়ের) খুব কাছাকাছি চলে এসেছি। সামনে আমাদের নতুন লক্ষ্য রয়েছে। আগামীতে শিরোপা জয়ের সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে আমাদের এবং এজন্য লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। আমি আবারও বলছি, কোচ যতোদিন আমাকে দলে চাইবেন আমি ততোদিন জাতীয় দলকে ‘না’ বলবো না।
প্রসঙ্গত ২০০৯-২০১২ টানা চারবার ফিফা বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারজয়ী লিওনেল মেসি ২০১৫ সালেও ফিফা বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতবেন বলেই মনে হচ্ছে। গেল মাসে উয়েফার বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জয় করা এই আর্জেন্টাইন ক্ষুদে জাদুকর গত মরসুমে বার্সেলোনার হয়ে ৫৭ ম্যাচে ৫৮ গোল করে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে কাতালান ক্লাবকে ট্রেবল জিতিয়েছেন। যে কারণে অধিকাংশ বোদ্ধারাই মেসির হাতে ব্যালন ডি’অর দেখছেন।