ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: অভিজ্ঞ ডাক্তার-নার্স ছাড়াই ঝিনাইদহ মহেশপুর উপজেলার বিভিন্ন বাজারে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে বহু ক্লিনিক ও বেসরকারি হাসপাতাল। কাগজপত্র থাক আর না থাক, দিব্যি চলছে চিকিৎসালয় নামধারী এসব কসাইখানা। মহেশপুর শহর থেকে প্রায় ১৫-২০ কিলোমিটার দূরেও রয়েছে ক্লিনিক। এগুলোর কোনো খোঁজই রাখেন না সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ক্লিনিকগুলোর মধ্যে সিভিল সার্জন অফিস থেকে অনুমোদন জোগাড় করেছেন কয়েকটির কর্তৃপক্ষ। কিন্তু শর্ত পূরণ ছাড়া এগুলো কীভাবে অনুমোদন পেয়েছে, তা রহস্যজনক।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ক্লিনিক অনুমোদনের প্রথম শর্ত প্রতি ১০টি বেডের জন্য সার্বক্ষণিক একজন এমবিবিএস ডাক্তার, একজন ডিপ্লোমা নার্স ও একজন দক্ষ আয়া থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু বিভিন্ন ক্লিনিক ঘুরে দেখা গেছে, এ শর্ত মানে না কোনো ক্লিনিক। মহেশপুর উপজেলায় কতোগুলো ক্লিনিক ও হাসপাতাল আছে তা উপজেলা স্বাস্থ্য অফিস ফাইলে নেই। এমনকি কর্মকর্তারাও জানেন না সংখ্যা কতো। তবে ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন অফিসে আছে মাত্র ১৩টি ক্লিনিকের নাম। অনিয়মের কারণে বিভিন্ন এলাকায় ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলোতে ভ্রম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে জরিমানা করলেও মহেশপুরের ক্লিনিকগুলোতে আঁচড় পড়ে না। তাই ক্লিনিক মালিকরাও যা ইচ্ছে তা করার সুযোগ পান। গত ৬ মাসে সীমান্ত এলাকার কয়েকটি ক্লিনিকে ভুল অপারেশনের কারণে নবজাতকসহ ১০ মহিলার করুণ মৃত্যু হয়েছে। তবুও টনক নড়েনি কর্মকর্তাদের। ভুল অপারেশনের কারণে মৃত্যু হলেই ক্লিনিক মালিকের নিজস্ব লোকদের দিয়ে তড়িঘড়ি করে মীমাংসার মাধ্যমে লাশ দাফন করা হয়ে থাকে।
নেপা ইউনিয়ন পরিষদের কক্ষ দখল করে গড়ে উঠেছে কোহিনূর হাসপাতাল, নেপার মোড়ে গড়ে উঠেছে মা ও শিশু প্রাইভেট হাসপাতাল, পিয়ারলেস হাসপাতাল, একতা ক্লিনিক। জিন্নাহনগর বাজারে গড়ে উঠেছে মনোয়ারা প্রাইভেট হাসপাতাল, পদ্মপুকুর মোড়ে মায়ের দোয়া ক্লিনিক, ভৈরবা বাজারে জননী ক্লিনিক ও নার্সিং হোম এবং মডার্ন প্রাইভেট হসপিটাল। যাদবপুর বাজারে রয়েছে সজীব ক্লিনিক, সস্তা বাজারে শুভ ক্লিনিক, গুড়দাহ বাজারে মহিউদ্দিন ক্লিনিক, পুড়াপাড়া বাজারে সুমি ক্লিনিক, খালিশপুরে মুক্তি ক্লিনিক, লালন শাহ ক্লিনিক, মহেশপুরের পাতিবিলা গ্রামের রাস্তার পাশে গড়ে উঠেছে শুভ ক্লিনিক অ্যান্ড প্রাইভেট হসপিটাল, শহরের হাসপাতাল গেটে সালেহা ক্লিনিক, থানা মোড়ে সুমন ক্লিনিক, বালিকা বিদ্যালয় রোডে সীমা ক্লিনিক, মুক্তিযোদ্ধা অফিসের পেছনে গড়ে উঠেছে ঐশী ক্লিনিক।
ভৈরবা গ্রামের অনেকেই অভিযোগ করেন, এসব ক্লিনিকে ডাক্তার থাকেন না। রোগী এলে ডাক্তারকে ফোন করা হয়। তখন ডাক্তার তড়িঘড়ি এসেই রোগ নির্ণয় ছাড়াই অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান রোগীকে। নেপার মোড়ের মা ও শিশু প্রইভেট হাসপাতালের মালিক নামজুল আলম জানান, তার হাসপাতালে একজন নার্স, একজন আয়া আছেন। তবে কোনো ডাক্তার নেই। রোগী এলেই কেবল ডাক্তারকে ফোন করা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ক্লিনিক মালিক জানান, তার ক্লিনিকে নার্স আয়া দুজন আছেন। একজন করে ডাক্তার প্রতিদিন সকালে এসে রাউন্ড দিয়ে চলে যান। রোগী এলে খবর দেয়া হয় ডাক্তারকে। তিনি আরো জানান, শুধু তার কেন, কোনো ক্লিনিকেই ডাক্তার নেই। এমনকি ডিপ্লোমা নার্সও নেই। যদি কেউ বলে ডাক্তার-নার্স থাকার কথা, তবে সেগুলো অসত্য। মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডা. তাহাজ্জেল হোসেন বলেন, মহেশপুর উপজেলায় কতোটি ক্লিনিক আছে তা আমাদের জানা নেই। ক্লিনিকগুলো দেখভালের দায়িত্ব আমাদের নয়। সে কারণে ওদিকে নজর দিই না। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আমাদের নির্দেশ দিলেই কেবল আমরা সেখানে যাই; কিন্তু কোনো কিছু করার ক্ষমতা নেই বলে তিনি জানান। ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডা. আবদুস সালাম জানান, মহেশপুরে ১৩টি ক্লিনিকের লাইন্সেস আছে। রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় দুটি ক্লিনিক এখন বন্ধ রয়েছে। তা ছাড়া আর কোনো ক্লিনিক আছে কি-না তা আমার জানা নেই। তিনি বলেন, আপনাদের কাছে তালিকা থাকলে আমাকে দেন।