জানাজার আগ মুহূর্তে কবরস্থান থেকে লাশ পুনরায় নেয়া হয় হাসপাতালসহ ওঝা বাড়িতে

দামুড়হুদার মোক্তারপুরে সাপের দংশনে নিহত রেজাউল বেঁচে আছে বলে হইহুল্লোড়

 

বখতিয়ার হোসেন বকুল: দামুড়হুদার মোক্তারপুরে সাপের দংশনে রেজাউল হক (২৬) নিহত হয়েছেন। তিনি মোক্তারপুর মাঝপাড়ার মৃত ছুন্নত আলীর ছেলে। গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে ঘুমন্ত অবস্থায় বিষধর সাপ তার ঠোঁটের ওপর দংশন করে। এ ঘটনার পর গ্রাম্য ওঝাদের ডেকে দীর্ঘ সময় ধরে ঝাড়ফুঁক শেষে ভোর সাড়ে ৪টার দিকে নেয়া হয় দামুড়হুদার চিৎলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে তার মৃত্যু হয়। দুপুরে বাদ জুম্মা শেষে জানাজার নামাজ পড়ানোর আগে গ্রাম্য মহিলাদের দ্বারা ছড়িয়ে পড়ে গুজব। বেঁচে আছে বেঁচে আছে বলে শুরু হয় হইহুল্লোড়। জানাজার আগ মুহূর্তে স্বজনরা কবরস্থান থেকে লাশ নিয়ে পুনরায় ছুটে যান চিৎলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে। কর্তব্যরত চিকিৎসক আবারও তাকে মৃত ঘোষণা করে। এরপর ওই লাশ নিয়ে যাওয়া হয় মনোহরপুরের এক ওঝার বাড়িতে। শেষমেশ বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নিজ গ্রামের কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন করা হয়।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার মোক্তারপুর মাঝের পাড়ার মৃত ছুন্নত আলী ছেলে রেজাউল হক গত বৃহস্পতিবার রাতে নিজঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। পাশেই ঘুমিয়ে ছিলেন স্ত্রী পারুলা খাতুন। রাত ১২টার দিকে রেজাউল হঠাত ঘুম থেকে লাফ দিয়ে ওঠেন এবং বলেন তার ঠোঁটে সাপে কামড় দিয়েছে। রেজাউল ও তার স্ত্রীর ডাকাডাকিতে ঘুম থেকে জেগে ওঠেন পরিবারের লোকজন। পরিবারের লোকজন ওই ঘরের মধ্যে সাপ খোঁজা শুরু করলেও কোথাও সাপের সন্ধান মেলেনি। সাপের দেখা না মিললেও ডাকা হয় গ্রাম্য কয়েকজন ওঝাকে। তারা পালাক্রমে দীর্ঘ সময় ধরে ঝাড়ফুঁক করে। ঝাড়ফুঁকে কোনো কাজ না হওয়ায় শেষমেশ আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভোর সাড়ে ৪টার দিকে রেজাউলকে নেয়া হয় দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স তথা চিৎলা হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল সাড়ে ৬টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আবুল হোসেন। লাশ নেয়া হয় মোক্তারপুরস্থ নিজ বাড়িতে। লাশের গোসল শেষে নেয়া হয় গ্রাম্য কবরস্থানে। জুম্মার নামাজ শেষে স্থানীয় মুসল্লিরা যখন নিহতের নামাজের জানাজায় অংশ নেয়ার জন্য আসতে শুরু করে ঠিক তখন লাশ দেখতে আসাদের মধ্যে কয়েকজন বলে ওঠেন রেজাউল বেঁচে আছে। তার নাক মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে এবং সে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। এ কথা বলার সাথে সাথে নিহতের স্বজনরা খাটিয়াসহ লাশ নিয়ে পুনরায় ছুটে যান চিৎলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে আবারও মৃত ঘোষণা করে। চিকিৎসকের কথায় বিশ্বাস না করে লাশ নিয়ে ছুটে যান জীবননগর উপজেলার মনোহরপুরের এক কবিরাজের বাড়িতে। সে আর বেঁচে নেই কবিরাজের এ কথার পরই ওই লাশ শেষমেশ ফিরিয়ে নেয়া হয় মোক্তারপুরস্থ গ্রামে। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে জানাজা শেষে নিজ গ্রামের কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়। ৬ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে রেজাউল ছিলেন সকলের ছোট। তিনি দু বছর আগে জীবননগর উপজেলার সেনেরহুদা গ্রামে বিয়ে করেন। এদিকে স্বামীর অকাল মৃত্যুতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন স্ত্রী পারুলা খাতুন। বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছিলেন তিনি।