চুয়াডাঙ্গা বোয়ালমারীতে প্রেমিকের সাথে আটকের পর সালিস : পুলিশে দেয়ার পর বেকে বসে দুজনই
কামরুজ্জামান বেল্টু/উজ্জ্বল মাসুদ: চুয়াডাঙ্গা সদর থানা থেকে বাড়ি ফিরিয়ে নেয়ার ২৪ ঘণ্টার মাথায় বোয়ালমারীর ভোকেশনাল স্কুলের ছাত্রী সোমাইয়া রিপার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পরশু বুধবার সন্ধ্যায় তাকে ও তার প্রেমিক নাগদাহের বিপুলকে নিজ নিজ বাড়ি ফিরিয়ে নেয়া হয়।
কথা ছিলো পূর্ণ বয়স হলে বিয়ে হবে। সোমাইয়া রিপার পিতা যেমন এ কথা দিয়েছিলেন, তেমনই রিপার প্রেমিক নাগদাহের বিপুল হোসেনের পিতা আনিছুর রহমানও অঙ্গিকার করেছিলেন। বলেছিলেন তোমরা বড় হও। এ প্রতিশ্রুতি পেয়ে রিপা যেমন বাড়ি বোয়ালমারী ফিরতে রাজি হয়, তেমনই বিপুলও ফেরে তার পিতার সাথে। চুয়াডাঙ্গা সদর থানা থেকে এদের বাড়ি ফিরিয়ে নেয়ার পরদিন গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ঘর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে রিপার মৃতদেহ। সে তার ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে দাবি করেছেন পরিবারের সদস্যরা। পুলিশ লাশ হেফাজতে নিয়ে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের ঠাণ্ডা ঘরে রেখেছে। আজ দাফন কাজ সম্পন্ন করা হতে পারে।
রিপার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে অনেকেই লাশ দেখতে ভিড় জমায়। সচেতন সমাজের অনেকেই প্রশ্ন তুলে বলে, রিপার এ অপমৃত্যুর জন্য দায়ী কে? তাকে তার প্রেমিকসহ ধরে যারা সালিস করে থানায় দিয়েছিলো তারা? নাকি রিপাকে বাড়ি ফিরিয়ে ঘরে আটকে রাখার কারণেই আত্মঘাতী হয়েছে সে? ওরা যখন অপ্রাপ্ত বয়সে এক ঘরে অবস্থান করে ধরা পড়েছে তখন না বুঝিয়ে সালিস করার বৈধতা কতোটুকু? এসব প্রশ্নের জবাব খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি তুলেছে কেউ কেউ।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের মোমিনপুর ইউনিয়নের বোয়ালমারী গ্রামের হাশেম আলীর মেয়ে সোমাইয়া রিপা নীলমণিগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভোকেশনাল বিভাগের ১০ম শ্রেণির ছাত্রী। একই শ্রেণির ছাত্র পার্শ্ববর্তী আলমডাঙ্গা উপজেলার নাগদাহ গ্রামের আনিছুর রহমানের ছেলে বিপুল হোসেন। বিদ্যালয়েই এদের মধ্যে প্রেমসম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত ৩১ আগস্ট সোমবার সোমাইয়া রিপা ও তার ছোটভাইকে বাড়িতে রেখে তাদের মা ও বাবা আলমডাঙ্গা বড় গাংনী বড় মেয়ের বাড়ি বেড়াতে যান। রাত ৮টার দিকে স্থানীয় কয়েকজন রিপার বাড়ি থেকে আটক করে তার প্রেমিক বিপুল হোসেনকে। আটকারীরা জানায়, দুজনকে অপত্তিকর অবস্থায় ধরা হয়েছে। তাৎক্ষণিক সালিস বসানো হয়। কেউ তোলে বিয়ের দাবি, কেউ কেউ রিপার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এক পর্যায়ে ভেস্তে যায় সালিস। দুজনকেই তুলে দেয়া হয় পুলিশের হাতে। চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ দুজনকে থানায় নিয়ে বাসিয়ে রাখে। উভয় পক্ষের অভিভাবকদের খবর দেয়া হয়। গত মঙ্গলবার দুজনকেই তাদের অভিভাবকেরা বাড়ি ফিরিয়ে নিতে চাইলে তারা বেকে বসে। বলে, বিয়ে না করে বাড়ি ফিরবো না। বিয়ে করতে মেয়ের বয়স আঠারো হতে হয়, রিপার বয়স ১৬ বছরই পার হয়নি। বিয়ে হবে কীভাবে? রিপা ও বিপুল জানায়, যতোদিন বিয়ের বয়স না হবে ততোদিন জেলহাজতেই থাকবো।
রিপা ও বিপুল বিয়ের জন্য বেকে বসলে উভয়ের অভিভাবকের পক্ষে বিয়ে দেয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়া শুরু হয়। বলা হয়, বিয়ের বয়স হলেই বিয়ে দেয়া হবে। প্রয়োজনে বাড়ি যাওয়ার পর কাবিননামা হবে বলেও প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। গত বুধবার সন্ধ্যায় রিপা ও বিপুল নিজ নিজ অভিভাবকের সাথে বাড়ি ফেরে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে নিজ ঘরের আড়ার সাথে ওড়না দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে রিপা। রিপার মা আখলিমা খাতুন এ দাবি করে বলেছেন, সকালে খেয়েছে। দুপুরের খাবার দুজন এক সাথে খাবো ভেবে বিকেলে যখন মেয়েকে ডাকি। তখন সাড়া না পেয়ে জানালা দিয়ে দেখি ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলছে মেয়ে। ঘরের দরজা ভেতর থেকে আটকানো ছিলো। দরজা ভেঙে মেয়েকে উদ্ধার করে নেয়া হয় হাসপাতালে। চিকিৎসক বলেন, আনেক আগেই মারা গেছে। খবর পেয়ে পুলিশ মৃতদেহ হেফাজতে নেয়। রিপার পিতাপক্ষ ময়নাতদন্ত ছাড়ায় মৃতদেহ দাফনের অনুমতি চেয়ে আবেদন করে। পুলিশ সুরতহাল রিপোর্ট করতে না পেরে আপত্তি তোলে। ফলে মৃতদেহ রাখা হয় হাসপাতালের লাশ রাখা ঘরে।
গতরাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত প্রেমিক বিপুল হোসেনকে হাসপাতালে প্রেমিকার মৃতদেহের পাশে আসতে দেখা যায়নি। বিপুল সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে গেলে একাধীকসূত্র বলেছে, থানা থেকে বিপুলকে বাড়ি ফিরিয়ে নেয়ার পর থেকেই রিপার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। রিপার মৃত্যুর খবর গতকাল তাকে দেয়া হয়েছে কি-না তাও অবশ্য নিশ্চিত করে জানা সম্ভব হয়নি।