ঢাকা বরিশাল চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস
স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশের ওপর মরসুমি বায়ু সক্রিয় থাকার কারণে গত মঙ্গলবার বিকেল ৪টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। এছাড়া অতি ভারী বৃষ্টির কারণে সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকায় কোথাও কোথাও ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে টানাবর্ষণে রাজধানীতে জলাবদ্ধতা বেড়েই চলেছে। দেশের বড় নদীগুলোর পানি বিপদসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। বর্ষণ অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি হতে পারে বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাবে এমন আভাস দেয়া হয়েছে।
গতকাল বুধবারও ঢাকাসহ আশপাশের জেলায় ভারী বর্ষণ হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া কক্সবাজারে ১৭০ মিলিমিটার, রংপুরে ১০৭ মিলিমিটার, দিনাজপুরে ৭৮ মিলিমিটার, সিলেটে ১৩৫ মিলিমিটার এবং টেকনাফে ২৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা মাত্র ৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হলেও মধ্যরাতে শুরু হয় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, মরসুমি বায়ুর বর্ধিতাংশের অক্ষ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের কেন্দ্রস্থল হয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত। এর একটির বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মরসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরের অন্যত্র মাঝারি থেকে প্রবল অবস্থায় রয়েছে। ফলে ঢাকা, রংপুর, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে চট্টগ্রাম, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ এবং দেশের অন্যত্র মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, এবারের বর্ষা মরসুম বৃষ্টির মধ্যদিয়ে শুরু হয়েছিলো। বিদায় নিচ্ছে বৃষ্টি মধ্য দিয়েই। মরসুমের শেষভাগে এসেও বঙ্গোপসাগরে এবং দেশের স্থলভাগে মরসুমি বায়ু সক্রিয়। ফলে বৃষ্টি হচ্ছে নিয়মিত। দু দিন ধরে মরসুমি বায়ুর সক্রিয়তা বেড়ে যাওয়ায় দেশের অধিকাংশ স্থানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেড়েছে। টানা বর্ষণে ডুবে গেছে রাজধানীর অলিগলি রাজপথ। থইথই পানিতে যান ও জলজটে অচল হয়ে পড়েছে ঢাকা। শুধু রাজধানী ঢাকা নয়, চট্টগ্রাম ও সিলেট নগরীতেও একই চিত্র দেখা গেছে। গতকাল বুধবার ভোর থেকেই একটানা বৃষ্টি শুরু হয়, যা দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। মঙ্গলবারও বৃষ্টিতে দুর্ভোগ, যানজট আর জলাবদ্ধতায় বিপর্যস্ত নগরজীবনের চিত্রটা ছিলো ঠিক একই রকম।
আবহাওয়া অফিস জানায়, গতকাল সকাল ৬টা থেকে বুধবার পর্যন্ত রাজধানীতে ৫৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এর আগে গত ২৫ জুন দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে ৬৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছিলো আবহাওয়া অফিস। সেদিনও পরিস্থিতির এতো অবনতি হয়নি। কিন্তু গত মঙ্গলবার থেকে গতকাল বুধবার পর্যন্ত বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে রাজধানী ঢাকার জনজীবন। বিভিন্ন এলাকা সরজমিনে দেখা যায়, কাকরাইল-শান্তিনগর এলাকায় সড়কে হাটু পানি জমে গেছে। এতে যানবাহন আটকে পড়ে। সৃষ্টি হয় যানজটের। জলাবদ্ধতার কারণে অনেকগুলো সিএনজিচালিত অটোরিকশা রাস্তায় বিকল হয়ে পড়ে। অটোরিকশা পরিবর্তন করে অনেককে গন্তব্যে যেতে হয়েছে। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় মানুষকে অসহনীয় দুর্ভোগ পোয়াতে দেখা গেছে। মগবাজার, মৌচাক হয়ে মালিবাগ রেলগেট, রামপুরা ব্রিজ, মেরুল বাড্ডা, মধ্য বাড্ডা এলাকায় হাঁটুপানি জমে যায়। জমে যাওয়া পানির কারণে অটোরিকশা ও অন্য যানবাহন রাস্তায় আটকে পড়ে। মধ্য বাড্ডায় রাস্তার ওপর ময়লার ভাগাড় পানিতে মিশে একাকার হয়ে সড়কে চলাচলকারী যাত্রীদের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দেয়। নর্দ্দা, কালাচাঁদপুর থেকে বারিধারা পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়কে হাঁটু পরিমাণ পানি জমে গেছে। এতে যানবাহন আটকে পড়ে। দুর্ভোগে পড়ে অফিসগামী যাত্রীরা। ফলে রিকশায় বাড়তি ভাড়া দিয়ে অনেককে অফিস ও কর্মস্থলে যেতে দেখা গেছে। উত্তরার জসিম উদ্দিন রোড, এয়ারপোর্ট সড়ক, মহাখালী ফ্লাইওভারের নিচে, আইসিসিডিডিআরবি থেকে মহাখালী বাসস্টান্ড পর্যন্ত হাটু পানি জমে যায়। পানির সাথে রাস্তায় পড়ে থাকা ময়লা-আর্বজনা মিলে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা।
কমলাপুর রেলস্টেশন এলাকার সব সড়ক ও স্টেশনের প্রবেশ মুখ হাঁটুপানিতে তলিয়ে যায়। দুর্ভোগে পড়ে মালামাল নিয়ে আসা যাত্রীরা। পানি দ্রুত নেমে না যাওয়ায় যাত্রীরা চরম বিড়ম্বনার শিকার হন। ভিক্টোরিয়া পার্ক থেকে সদরঘাট টার্মিনাল পর্যন্ত, ঢাকা মেডিকেলের সামনের রাস্তা, গোলাপ শাহ মাজারের সামনে পানি জমে যায়। রাস্তায় থাকা ময়লা বৃষ্টির পানিতে মিশে দুর্ভোগ আরো বাড়িয়ে দেয়। সদরঘাটমুখি যাত্রীদের ময়লা পানি মাড়িয়ে ও বৃষ্টিতে ভিজে যেতে দেখা গেছে। কাকরাইল থেকে নয়াপল্টন হয়ে ফকিরাপুল, কমলাপুর পর্যন্ত পুরো রাস্তা ও আশপাশের গলি বৃষ্টিতে হাঁটু পরিমাণ পানি জমে আছে। মিরপুরের বিভিন্ন সড়ক বৃষ্টির পানিতে থই থই করতে দেখা যায়। টানা বৃষ্টিতে মিরপুরের কাজীপাড়া ও শেওড়াপাড়ার বিভিন্ন রাস্তা ডুবে যায়। কোথাও কোথাও দোকানপাট ও বাড়ির নিচতলায় পানি ঢুকে পড়ে। এসব এলাকায় ওয়াসার লাইনের উন্নয়নকাজ চলার কারণে বিভিন্নস্থানে রাস্তা কাটা থাকায় এলাকাবাসীকে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। কাজীপাড়ার ইব্রাহিমপুরের আশি দাগ মোড় এলাকায় এক বাড়িতে ভেতরে পানি ঢুকে পড়েছে। আর বাড়ির বাসিন্দারা বালতি দিয়ে সেই পানি বের করার চেষ্টা করছেন। মোহাম্মদপুর, লালমাটিয়া, ধানমন্ডি, পান্থপথ, গ্রিন রোডসহ বিভিন্ন এলাকার সড়কে যানবাহন থমকে ছিলো। অ্যাম্বুলেন্সগুলোকেও ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। ঢাকা ওয়াসার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুল আলম চৌধুরী বলেন, বিদ্যমান ড্রেনেজ ব্যবস্থায় ঘণ্টায় ১৫-২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হলে পানি নিষ্কাশন করা সম্ভব। হঠাৎ করে এর চেয়ে বেশি হলেই জলজট তৈরি হয়। আজ সে অবস্থা হয়েছে। এছাড়া আগের দু দিনে বেশি বৃষ্টিপাত হয়। অনেক এলাকায় আগে থেকেই জলজট ছিলো।
আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক শাহ আলম জানান, মরসুমি বায়ু শেষ হতে আরো বেশ কিছু দিন বাকি রয়েছে। এ সময়ে সারাদেশে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। তিনি জানান, দেশে মরসুমি বায়ু সক্রিয় থাকার কারণে গত কয়েক দিন যাবত মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ হচ্ছে। তা আগামী আরো কয়েক দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে অব্যাহত থাকবে।