বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনে কেন্দ্রে জাতীয় শোকদিবসের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী
স্টাফ রিপোর্টার: আগাছা উপড়ে ফেলে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সংগঠন হিসাবে গড়ে তুলতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হাতে শিক্ষক লাঞ্ছিত হওয়ার এক দিন বাদে সোমবার আওয়ামী লীগ সমর্থিত সংগঠনটির এক অনুষ্ঠানে একথা বলেন দলীয় সভানেত্রী।
জাতীয় শোকদিবস উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা স্মরণে ছাত্রলীগের ওই আলোচনা সভায় শেখ হাসিনা বলেন, যারা আমাদের রাজনীতির সাথে জড়িত, তারা যেন জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে চলতে পারে। আমি আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগকে বলবো, কাজে-কর্মে যে আগাছা, তা উপড়ে ফেলে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সংগঠন গড়ে তুলতে হবে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর বিভিন্ন ঘটনায় সমালোচনার মুখে পড়ে ছাত্রলীগ। আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে অনেকেই এজন্য সংগঠনটিতে অনুপ্রবেশকারীদের দায়ী করছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, পরাজিত শক্তির দোসর ও চাটুকাররা এখনও কিছু আছে। বাবাকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, জাতির পিতা বলতেন, বাংলাদেশের মাটি ঊর্বর। এখানে চারা ফেলতেই যেমন গাছ হয়, তেমনি আগাছাও জন্মায়। অনেক সময় আগাছা প্রকৃত গাছকেই খেয়ে ফেলে। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। ছাত্রলীগের এ আচরণ আওয়ামী লীগের জন্য বিব্রতকর বলেও মন্তব্য করেছেন দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনে কেন্দ্রের আলোচনা সভায় ছাত্রলীগের সভাপতি মো. সাইফুর রহমান সোহাগ সভাপতিত্ব করেন। পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুলতানা শফি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ফখরুল আলম অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
ছাত্রলীগের এ অনুষ্ঠানে বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী আদর্শভিত্তিক রাজনীতির ওপর জোর দেন। রাজনীতিবিদরা যদি ঝুঁকি নিতে না পারে, আত্মত্যাগের প্রস্তুতি নিতে না পারে, তাহলে দেশের জন্য কিছু দিতে পারে না। আদর্শ নিয়ে রাজনীতি না করলে, জনগণকে কিছু দেয়া যায় না। তবে বাংলাদেশে এখন রাজনীতিবিদদের মধ্যে একটি অংশ অর্থ-সম্পদের মালিক হওয়াকেই প্রধান লক্ষ্য ঠিক করেছেন বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিকদের ন্যূনতম চাহিদা পূরণ করতেই আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার কাজ করে যাচ্ছে। জাতির পিতা এদেশের মানুষগুলোকে এতো গভীর ভালোবাসতেন। আমরা তো ছিটেফোঁটা ভালোবাসা পেয়েছি। আমার একটাই লক্ষ্য, আমি যেন এই মানুষগুলোর ন্যূনতম চাহিদা পূরণ করতে পারি। নিজের মায়ের কথা স্মরণ করতে গিয়ে শেখ হাসিনা বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে বলেন, আওয়ামী লীগ একটা পরিবারের মতো ছিলো। আর সকলের আদরের ভাবী ছিলেন তিনি। কারাবন্দি নেতাদের পরিবারের খরচও বেগম মুজিবের দেয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এমনও নেতা ছিলেন, যখন তিনি মাসের পর মাস জেলে, তখন তার পরিবারের বাজারের খরচ দিতেন আমার মা। আর ওই নেতাই জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের পর জিয়াউর রহমানের সাথে হাত মেলায়। হ্যাঁ, আমি খুনি মোশতাকের (মোশতাক আহমেদ) কথা বলছি। মোশতাকের স্ত্রী নিয়মিত আমার মাকে ফোন করতেন। আমার মা তাদের বাজারের টাকা পৌঁছে দিতেন। ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের অনেকেই পরিচিত ছিলো জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দু দিন আগেও তারা ওই বাড়িতে ভাত খেয়ে চলে গিয়েছিলেন। আমার বাবা কি ভেবেছিলেন যে, ওরাই ঘাতক হিসাবে ফিরে আসবে? ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের দায়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত সৈয়দ ফারুক রহমানের সাথে বঙ্গবন্ধু সরকারের অর্থমন্ত্রী আজিজুর রহমান মল্লিকের আত্মীয়তার (শ্যালিকার ছেলে) কথাও তুলে ধরেন তিনি। রশীদ (পলাতক খন্দকার আবদুর রশীদ) মোশতাকের আত্মীয়। ডালিমের (পলাতক শরিফুল হক ডালিম) স্ত্রী ও শ্বাশুড়ি তো আমাদের বাড়িতেই পড়ে থাকতেন। নূর (কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয়প্রাপ্ত নূর চৌধুরী) তো কামালের সাথে ওসমানী সাহেবের এডিসি ছিলো। আন্দোলন ও সংগ্রামের শিক্ষা মায়ের কাছ থেকে পাওয়ার কথাও জানান বঙ্গবন্ধুকন্যা। আমার মা আমাদের শান-শওকতের মধ্যে বড় করেননি। তিনি যে ত্যাগ করে গেছেন- তার তুলনা হয় না।