অনৈতিক কাজের অভিযোগে গাংনীতে বাল্যবিয়ে : আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া

 

গাংনী প্রতিনিধি: কিশোর-কিশোরী জুটিকে অনৈতিক কাজে লিপ্ত থাকার অভিযোগে আটক করে বাল্যবিয়ে দিয়েছেন গ্রাম্য কয়েকজন মাতব্বর। বিনিময়ে বর-কনের পরিবারের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন কিছু নজরানা। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল সোমবার মেহেরপুর গাংনী উপজেলার ভবানীপুর গ্রামে। বিয়ে দিতে পেরে সমাজপতিরা মাতব্বরির ঢেকুর তুললেও বাধ সেধেছে প্রশাসন। অনৈতিক কাজ ও বাল্যবিয়ে এ দুটি অপরাধের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানালেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও গাংনী থানার ওসি।

জানা গেছে, ভবানীপুর গ্রামের জিন্নাত আলীর ছেলে শাকিল আহম্মেদের (১৫) একই গ্রামের শরিফুল ইসলামের মেয়ে স্থানীয় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী বিথী খাতুনের প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। গত শনিবার রাতে বিথীর পিতা-মাতা বাড়ির বাইরে থাকার সুযোগে শাকিল গিয়ে ওঠে বিথীর ঘরে। বিষয়টি টের পেয়ে প্রতিবেশীরা তাদের দুজনকে আপত্তিকর অবস্থায় আটক করে। খরব পেয়ে গ্রামের কয়েকজন শাকিলকে বেঁধে মারধর করে। লাল্টু মিয়া, গোলাম মোস্তফা, আনারুল ইসলাম ও নাহারুল ইসলামসহ কয়েকজন মিলে শাকিলের পরিবারকে চাপ প্রয়োগ করে বিয়েতে রাজি করায়। অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোর-কিশোরীকে বিয়ের পিড়িতে বসতে বাধ্য করায়। সেমতো বিথীর বাড়িতেই এক অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে বিয়ে দেয়া হয়। বাল্যবিয়েতে কাজী রাজি না হওয়ায় গ্রামের মাওলানা উমর আলীকে জোরপূর্বক বিয়ে পড়াতে বাধ্য করেন ওই সমাজপতিরা। দু লাখ টাকা (বাকিতে) দেনমোহর ধার্য করে শাদা কাগজে লিখিত নিয়ে বিয়ে সম্পন্ন হয়। এ সময় সমাজপতিসহ উভয় পরিবারের সদস্য ও গ্রামের কিছু মানুষের ভুরিভোজ করান কনের পরিবার। তবে বিয়ে রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হয়নি।

কাজিপুর ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত কাজি আব্দুল মালেক জানান, ওই সমাজপতিরা তাকে বিয়ে রেজিস্ট্রি করানোর জন্য চাপ দিলেও তিনি রাজি হননি। ব্যাল্যবিয়ে এ কারণে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন। স্থানীয় সূত্রে আরো জানা গেছে, ওই সমাজপতিরা পুলিশ ও সাংবাদিকদের ম্যানেজের কথা বলে বর-কনের পরিবারের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে ২০ হাজার টাকা। প্রশাসন ও সাংবাদিক ম্যানেজ করা হয়েছে বলেও তাদেরকে নিশ্চিত করেন তারা। তবে বিষয়টি পুলিশের কেউ জানেন না বলে জানিয়েছেন গাংনী থানার ওসি।

বাল্যবিয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল আমিন বলেন, কোনো অনৈতিক কাজে নাবালক-নাবালিকা ধরা পড়লে বিয়ে দেয়া তো সমাধান নয়। এতে সমাজ আরো কলুষিত হবে এবং এ ধরনের অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে। অনৈতিক কাজের সাথে তারা জড়িত থাকলে অবশ্যই আইনের চোখে অপরাধী। অপরদিকে বাল্যবিয়ে দ্বিতীয় অপরাধটি করেছেন সংশ্লিষ্টরা। বাল্যবিয়ের সাথে জড়িত সমাজপতি, বর-কনে পক্ষের অভিভাবক ও মাওলানাসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি। অভিযুক্ত সমাজপতিদের বিরুদ্ধে ইতঃপূর্বেও বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে উল্লেখ করে গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আকরাম হোসেন জানান, তারা দুটি অপরাধ করেছে। বাল্যবিয়ে দেয়া ও অনৈতিক কাজ ধামাচাপা দেয়ার অপরাধে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। তাছাড়া পুলিশ ও সাংবাদিকদের নাম ভাঙিয়ে টাকা নেয়ার বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।