ধান্দাবাজ ওঝা-তান্ত্রিকদের অপচিকিৎসা পরিহার করে যখন সুচিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপতালে নেয়া হয় সাপে কাটা রোগী, তখন সেবার ব্রত নিয়ে মহান পেশায় নিয়োজিত চিকিৎসকের কি কর্তব্যে অবহেলা মানায়? মধ্যরাতে সর্প দংশিত রোগীকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়ার পর ভোরে মৃত্যুর পর সঙ্গত কারণেই এ প্রশ্ন উঠে এসেছে।
চিকিৎসা বিজ্ঞান অনেক এগিয়েছে। বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা বিতাড়িত করে চলেছে কুসংস্কারাচ্ছন্ন অন্ধকার। সচেতনতা গ্রামবাংলায় ওঝা-কবিরাজ তান্ত্রিক জিন ভূত ভর করেছে বলে ভণ্ডামি করা ভণ্ডদের অপতৎপরতা হ্রাস পেয়েছে। এরপরও যে কোথাও কোথাও কেউ কেউ প্রতারণার দোকান খোলার অপচেষ্টা করছেন না, তাও নয়। গতকালই দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের আলুকদিয়া আকন্দবাড়িয়ার এক নারীর ভণ্ডামির চিত্র তুলে ধরা হয়। অবশ্য প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে অভিযুক্তদের তরফে বলা হয়েছে, ওই নারী মানসিক ভারসাম্যহীনতায় ভুগছেন। জিনের কথা বলে দেয়া ওই নারীর চিকিৎসা বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই।
সাপে কাটা রোগী নিয়ে বহু ওঝা বিষ নামানোর নামে নানা নাটক করেছেন। বিষধর সাপে বিষ প্রয়োগ করা দংশিত রোগীকে বাঁচাতে পেরেছেন কি তারা? না। সাপে দংশন করলেও সব সময় সব সাপে বিষ প্রয়োগ করতে পারে না, আবার সকল সাপ বিষধরও নয়। দংশিত অথচ শরীরে বিষ ঢোকেনি এমন রোগীকে বাঁচিয়ে ওইসব ভণ্ড ওঝা-কবিরাজ কর্তৃত্ব ফলিয়েছেন। অবশ্য ওই ওঝা-কবিরাজের আর কি দোষ, প্রাচীনকালে তো ওরকমই অপচিকিৎসা ছিলো। আধুনিক বিজ্ঞান যে বহুদূর এগিয়েছে তা তো আর সকলে জানেন না। জানার পর অনেকেই সাপে কাটা রোগী নিয়ে আর প্রতারণার নাটকে মাতেন না, সচেতন ব্যক্তিরা সাপে কাটা রোগীকে ওঝা-কবিরাজ তান্ত্রিকের নিকটও নেন না। সরকারি হাসপাতালে নেন। কারণ, জেলা সদরের হাসপাতালে সাপে কাটা রোগীর সুচিকিৎসা নিশ্চিত করেছে সরকার।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের চিকিৎসকদের অধিকাংশই সুচিকিৎসা দিয়ে সুনাম কুড়িয়ে চলেছেন। কারো কারো বিরুদ্ধে যে দায়িত্বহীনতার অভিযোগ উত্থাপিত হচ্ছে না, তা নয়। যেমন দায়িত্বহীনতার অভিযোগ উত্থাতি হয়, তেমনই হাসপাতালে ওষুধপথ্য থেকেও অনেক সময় রোগীদের দেয়া হয় না বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। আবার শেষ হয়ে গেলেও যথাসময়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ওষুধাগার কর্তার নিকট আবেদন পৌঁছে দ্রুত বরাদ্দ নেয়াতেও থাকে আন্তরিকতায় ঘাটতি। তা না হলে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে থেকে সাপে কাটা রোগীকে রেফারই বা করতে হয়েছে কেন? কেনই বা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীকে মরতে হলো? এসব বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন অবশ্য গতকাল কয়েকজন সাংবাদিককে বলেছেন, হাসপাতালের স্টোরকিপার যথাসময়ে চাহিদাপত্র দিলে সঙ্কট হতো না। বিলম্বে জানার পর দ্রুত বাহক পাঠিয়ে বিশেষ বরাদ্দ নেয়া হয়েছে। ৪শ অ্যাম্পুল এন্টি স্নেকভেনম আজ সোমবার দুপুর নাগাদ চুয়াডাঙ্গা সদর আধুনিক হাসপাতালে পৌঁছুনোর কথা।
কোনো অজুহাত নয়। শুধু চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নয়, দেশের সকল জেলা সদরের হাসপাতালগুলোতে ও উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে সাপে কাটা রোগীর সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা দরকার। সাপে কাটলে মরবে না কেউ, এ নিশ্চয়তা দিতে না পারলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে সাপ সুরক্ষার তাগিদ কি দেয়া চলে? ভেবে দেখবেন ধর্মাবতা।