আট বাংলাদেশির মৃত্যু : দু শতাধিক নিহতের আশঙ্কা

1440769254

মাথাভাঙ্গা মনিটর: ভূমধ্যসাগরের লিবিয়া উপকূলে গত বৃহস্পতিবার ইউরোপ অভিমুখি অভিবাসনপ্রত্যাশীদের দুটি নৌকাডুবিতে আট বাংলাদেশিসহ অন্তত ২০০ জন মারা গেছে। নিহত বাংলাদেশিদের মধ্যে আট মাস বয়সী এক শিশুসহ তিনটি শিশু রয়েছে। ডুবে যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৪৬ বাংলাদেশিসহ প্রায় ২০০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। নৌকা দুটিতে পাঁচ শতাধিক যাত্রী ছিলো।

নিহত বাংলাদেশিদের মধ্যে সাতজনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন- রমজান আলী (৫৮), সানোয়ারা খাতুন (৪২), ইউসুফ (৭), রিমা আবদুল আজিম (২), রাইসা আবদুল আজিম (৮ মাস), আবুল বাশার (৪৭) ও তার এক মেয়ে। লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কাউন্সিলর আশরাফুল ইসলাম গতকাল রাতে বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।

পাঁচ শতাধিক অভিবাসনপ্রত্যাশীকে নিয়ে ডুবে যাওয়া দুটি নৌকার ২০০ জন মারা যাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছে জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর)। তিউনিসিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশের লিবিয়া দূতাবাসের কর্মকর্তা চার্জ দি অ্যাফেয়ার্স মোজাম্মেল হক জানান, নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

মোজাম্মেল হক জানান, বাংলাদেশের ৩১ জনসহ পাঁচ শতাধিক অভিবাসনপ্রত্যাশী ইঞ্জিনচালিত দুটি নৌকায় করে ইতালি যাওয়ার চেষ্টা করছিল বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন। তবে নৌকার তলদেশে ফুটো থাকায় প্রায় এক ঘণ্টা যাওয়ার পর লিবিয়ার জুয়ারা শহরের কাছে ভূমধ্যসাগরে বৃহস্পতিবার নৌকা দুটি ডুবে যায়। এর মধ্যে প্রথম যে নৌকাটি থেকে সাহায্য চেয়ে সংকেত পাঠানো হয়, তাতে প্রায় ১০০ জন ছিল। আর দ্বিতীয় নৌকায় ছিলো ৪০০’র বেশি আরোহী।

মোজাম্মেল হক জানান, লাইফ জ্যাকেট পরে থাকায় বেশির ভাগ বাংলাদেশিকেই জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। তারা সারা রাত পানিতে ভেসে ছিলো, শুক্রবার ভোরে তাদের উদ্ধার করা হয়। পরে তাদের লিবিয়ায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

মোজাম্মেল হক জানান, দুর্ঘটনায় পড়া একটি পরিবারের সাথে দূতাবাসের কর্মকর্তাদের কথা হয়েছে। অন্য দুটি পরিবার সিরতে থেকে এসেছে, অন্যরা ত্রিপলিতেই বসবাস করতো। দীর্ঘদিন ধরে এই পরিবারগুলো লিবিয়াতে রয়েছে। সন্তানদের সবার জন্ম হয়েছে লিবিয়ায়। তবে দেশটির পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যাওয়ায় তারা সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার চেষ্টা করছিল। দূতাবাসের পক্ষ থেকে তাদের বারবার সতর্ক করার পরও তারা ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্রপথে সেখানে যাওয়ার চেষ্টা করে। এখন পরিবারগুলোর ইচ্ছা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে দূতাবাসের এই কর্মকর্তা জানান।

এদিকে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের মুখপাত্র উইলিয়াম স্পিনডলার জানান, নৌকা দুটিতে অন্তত ৫০০ মানুষ ছিলো, যারা ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টায় সমুদ্র পাড়ি দিয়েছিলো। লিবিয়ার উপকূলরক্ষীরা উদ্ধারকৃতদের তীরে আনার অভিযান অব্যাহত রেখেছেন। লিবিয়ার নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডুবে যাওয়া নৌকা দুটির আরোহীদের মধ্যে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ- পাকিস্তান, সিরিয়া, মরক্কো ও বাংলাদেশের নাগরিক ছিলো। রেড ক্রিসেন্টের কর্মকর্তা মোহাম্মদ আল-মিসরাতি বলেন, এ পর্যন্ত উদ্ধারকর্মীরা পানি থেকে ১৯৮ জনকে জীবিত এবং ৭৬টি মৃতদেহ উদ্ধার করেছেন। এখনো বহু মানুষ নিখোঁজ, তবে ঠিক কতজন তা আমরা নির্দিষ্ট করে বলতে পারছি না। অন্তত ১০০ মৃতদেহ উদ্ধার করে জুয়ারা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। উদ্ধার করা অবৈধ অভিবাসীদের মধ্যে ১৪৭ জনকে ত্রিপোলির পশ্চিমে সাবরাথায় একটি ডিটেনশন সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

লিবিয়ার উপকূলরক্ষীদের ব্যবহারের জন্য যে উদ্ধারযানগুলো আছে, সেগুলোতে উদ্ধারকাজের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নেই। জাতিসংঘ বলছে, সমুদ্রপাড়ি দেওয়ার জন্য অনুপোযোগী নৌকায় লিবিয়া থেকে ইতালিতে যাওয়ার চেষ্টাকালে চলতি বছর এ পর্যন্ত দুই হাজার ৪০০ জনের মতো অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যু ঘটেছে। এ সময়ে অন্তত এক লাখ অবৈধ অভিবাসী ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ইতালিতে পৌঁছাতে পেরেছে। আরো এক লাখ ৬০ হাজার মানুষ গ্রিস হয়ে ইউরোপে ঢুকেছে।