নকল নিম্নমানের ও নিষিদ্ধ ওষুধ বিক্রি

 

জীবন রক্ষায় অনিবার্য ওষুধ যে বাংলাদেশে সব ক্ষেত্রে নিরাপদ নয়, তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। ওষুধ প্রস্তুত, আমদানি ও বিপণনের ব্যবসাটিও অন্য দশটি ব্যবসার মতো নয়। ওষুধ একটি সেবাপণ্য। কাজেই এ পণ্য প্রস্তুত, আমদানি ও বিপণনে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন অপরিহার্য। বাস্তবে তার যথেষ্ট অভাব। বাংলাদেশের বাস্তবতায় ওষুধের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। ওষুধ ভিন্ন ভিন্ন কোম্পানি থেকে ভিন্ন নামে যেমন বাজারে আসছে, তেমনি এসব ওষুধের মানেও ভিন্নতা রয়েছে। সব ওষুধ একই মানের নয়।

বাংলাদেশের অনেক ওষুধ নিয়েই প্রশ্ন তোলা যেতে পারে। আবার এলাকাভেদেও বাজারজাত করা হয় নিম্নমানের ওষুধ। দেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এমন অনেক ওষুধ পাওয়া যায়, যেগুলো শহরাঞ্চলে পাওয়া যাবে না। এসব ওষুধ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মানসম্মত হয় না। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে প্যারাসিটামলের কথা। এক প্যারাসিটামল নিয়েই অনেক প্রশ্ন আছে। প্যারাসিটামল সেবনে শিশুমৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। গুরু পাপে লঘু দণ্ড হলেও হয়েছে। সরকারি ওষুধ পরীক্ষাগারে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত মোট চার হাজার ৮৪৬টি ওষুধের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৫৩টি ওষুধের নমুনা মানসম্পন্ন নয় বলে জানা গেছে। প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে এসব ওষুধ বিপণন না করার জন্য বলা হয়েছে। এর পাশাপাশি সম্প্রতি নিষিদ্ধ ঘোষিত তিন ধরনের ওষুধ যে দোকানে পাওয়া যাবে, সেটি বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে ওষুধ নিয়ে দেশের মানুষকে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হয়। দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন কোম্পানি যেমন ভেজাল ওষুধ তৈরি করছে, পাশাপাশি বিদেশ থেকে ওষুধ বা ফুড সাপ্লিমেন্টের নামে যা আমদানি করা হয়, তার মান নিয়ে সন্দেহ আছে। এবার ওষুধ প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে অভিযানের ঘোষণা দেয়া হয়েছে তার বাস্তব প্রয়োগ দেখতে চাই আমরা। এর আগেও মাঝেমধ্যে ভেজাল ও নকল ওষুধের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়েছে। নকল ও ভেজাল ওষুধ উদ্ধার হলেও প্রকৃত দোষীদের অনেকেই থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। তা ছাড়া ওষুধ বিক্রির জন্য চিকিৎসকদের যে উপঢৌকনের রেওয়াজ গড়ে উঠেছে তাও ভয়াবহ।

ওষুধ সরাসরি মানুষের জীবন-মরণের সাথে সংশ্লিষ্ট। অধিক মুনাফার লোভে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ভেজাল হচ্ছে। নকল ও অনুপযোগী ওষুধ ছড়িয়ে পড়ছে দেশজুড়ে। দেশের ভেতরে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী যেমন এসব নকল ও ভেজাল ওষুধ বানিয়ে বাজারে ছাড়ছে, তেমনি আরেকটি চক্র চোরাই পথে বিভিন্ন দেশ থেকে নিয়ে আসছে অনুমোদনহীন নানা ওষুধ। দেশের মানুষের জীবন হয়ে পড়ছে বিপন্ন। ভেজাল ও নকল ওষুধ প্রতিরোধে সরকারকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। ওষুধ প্রশাসনের নজরদারি বাড়াতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে জবাবদিহিতা।