হাইড্রোজেন গ্যাস ভরা বাহারি বেলুন শিশুদের মনোরঞ্জনের জন্য ক্ষতিকর

 

শরিফুল ইসলাম রোকন: আলমডাঙ্গা শহরে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হচ্ছে হাইড্রোজেন গ্যাস ভরা রঙিন বেলুন। শিশুদের বায়না মেটাতে অভিভাবকরা বেলুন কিনে দিয়ে বিপাকে পড়ছেন। বেলুন ফেটে এর গ্যাসক্রিয়ায় অসুস্থ হচ্ছে শিশু-কিশোররা। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দ্রুত এগুলো বন্ধের দাবিতে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে সচেতন মহল।

জানা গেছে, আলমডাঙ্গা শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ও বিশেষ দিনের কোনো অনুষ্ঠানস্থলে প্রায়ই চোখে পড়ে বাহারি বেলুন বিক্রি। মাছ ও উড়োজাহাজ সাদৃশ্য রঙ-বেরঙের বেলুনে সহজেই আকৃষ্ট হচ্ছে শিশুরা। অভিভাবকরা তাদের শিশু সন্তানের বায়না মেটাতে হরহামেশাই কিনে দিচ্ছেন বেলুন। তবে এই শখ মেটাতে গিয়ে অনেকেই বিপত্তিতে পড়ছেন। প্রায়ই বেলুন ফেটে শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। আবার আগুন ধরার মতো ভয়াবহ পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হচ্ছে অনেকের।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বেলুনে হাইড্রোজেন গ্যাস ভরে ফোলানো হচ্ছে। এতে সহজেই উড়ছে বেলুন। এই হাইড্রোজেন গ্যাস তৈরিতে ব্যবহার হচ্ছে সালফিউরিক অথবা হাইড্রোক্লোরিক আ্যসিডও। সাথে মেশানো জিংক। উপজাত হিসেবে বের হচ্ছে হাইড্রোজেন গ্যাস। হাইড্রোজেন গ্যাস বাতাসের চেয়ে হালকা হওয়ায় বেলুন সহজেই উড়তে পারে। বেলুনে সাধারণত ব্যবহার করা হয় হিলিয়াম গ্যাস। কিন্তু এ গ্যাস অপেক্ষাকৃত বেশি দাম ও সহজলভ্য না হওয়ায় এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা ঝুঁকি নিয়ে অ্যাসিডের সাথে জিংকের মিশ্রণ ঘটিয়ে তৈরি করছে হাইড্রোজেন গ্যাস।

হাইড্রোজেন গ্যাস অতি দাহ্য বা সহজেই জ্বলে ওঠে। আচমকা কোনো বেলুন ফেটে গেলে পাশে ধূমপানরত কোনো ব্যক্তির সিগারেটের আগুন থেকেই ঘটতে পারে মারাত্মক অগ্নিকাণ্ড। যতোক্ষণ গ্যাস থাকবে ততোক্ষণ আগুন স্থায়ী হবে। শিশুরা খেলার সময় বেলুন ফেটে গেলে তা শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে মিশে রক্তে বুদবুদ তৈরি করে। এতে জ্বালা-যন্ত্রণা শুরু হয়। গ্যাস বেশি হলে অক্সিজেনের অভাবে মারাও যেতে পারে। বেলুনগুলো প্লাস্টিক ও জরি কাগজ দিয়ে তৈরি মনে হলেও ওগুলো আসলে পলিথিনেরই আরেকটি সংস্করণ। যা কোনোভাবেই পচনশীল নয়। দেশে এ ধরনের পলিথিনের ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু কীভাবে তা দিয়ে বেলুন তৈরি হচ্ছে এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করছে সচেতন মহল।

কয়েক দিন ধরে আলমডাঙ্গা শহরে ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, টাঙ্গাইল জেলা থেকে কয়েকজন এসে বাসা ভাড়া করে এসব বেলুন তৈরি করে বাজারের ফেরি করে দেদারছে বিক্রি করছে বেলুন। আলমডাঙ্গা শহরে বেলুন তৈরিকারক দুজন মালিক ঢাকা নারায়ণগঞ্জের জালাল ও নায়েব আলীকে বেলুন কীভাবে তৈরি করেন জিজ্ঞেসা করলে তারা বলেন, কাস্টিন ও সিলভারের গুড়ার সাথে পানি মিশিয়ে এ গ্যাস তৈরি করে বেলুন ফুলানো হয়। তারা বলেন, আমরা যা ব্যবহার করি তাতে কোনো ক্ষতি নেই। আমাদের একটি বেলুন আগে ১৮০ টাকা বিক্রি করতাম, এখন ৪০-৫০ টাকা বিক্রি করি। এই শহরে ৬-৭ জন বিক্রয় কর্মী আছে। তারা প্রতিদিন ৪-৫শ বেলুন বিক্রি করে।