স্টাফ রিপোর্টার: জঙ্গি দলের টার্গেট এখন শিক্ষিত উচ্চবিত্ত এবং প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান। ধর্মের সেবা করার নামে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রযুক্তি মনস্ক তরুণ-তরুণীদের দলে টানছে জঙ্গি সংগঠনগুলো। বিত্তশালী পরিবারের সন্তানরা বাবা-মায়ের আকাশছোঁয়া স্বপ্ন ভেঙে দিয়ে ভিড়ে যাচ্ছে উগ্রপন্থি জঙ্গিদের দলে। আগে জঙ্গি সংগঠনগুলোর তৎপরতা ছিলো মাদরাসাকেন্দ্রিক। তখন মাদরাসার ছাত্র ও শিক্ষকদের দলে টানা হলেও এখন নতুন কৌশল নিয়েছে জঙ্গি সংগঠনগুলো। এসব সংগঠনের নেতারা দলে টানছে আইনজীবী, শিক্ষক, প্রশাসনিক কর্মকর্তার সন্তান, ডাক্তার, প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন পেশার বিশিষ্টজনের সন্তানদের।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও এয়ার কমোডর (অব.) ইশফাক ইলাহী চৌধুরী বলেন, আগে ব্যক্তিবিশেষ বা নির্দিষ্ট দলের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদে পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ থাকলেও এবার অর্থায়নের অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন আইনজীবীর বিরুদ্ধেও। তিনি বলেন, আগে জঙ্গিদের মধ্যে আধুনিক শিক্ষার অভাব ছিলো। এখন দেখা যাচ্ছে ইংরেজি ও বিজ্ঞান শিক্ষায় দক্ষরাও নেতৃত্ব দিচ্ছে। সুপ্রিমকোর্টের ব্যারিস্টারও জঙ্গিবাদের সাথে জড়িত থাকায় গ্রেফতার হচ্ছে। এগুলো অশুভ ইঙ্গিত বলে মনে করেন তিনি। এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, জঙ্গিদের জন্য বিভিন্ন কৌশলে টাকা আসে। দেশের একটি ব্যাংক ছাড়াও বাইরের দেশ থেকে টাকা আসছে। শুরুতে জেএমবি বা জেএমজেবিকে সক্রিয় দেখা গেলেও দিনে দিনে প্রকাশ্যে আসতে থাকে অন্তত ডজনখানেক সংগঠনের নাম।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মুখপাত্র যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে উচ্চশিক্ষিতদের প্রশিক্ষিত জঙ্গিরা দলে টানার চেষ্টা করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিত তরুণ ও যুবকের জঙ্গি কার্যক্রমে প্রবেশ তারই নতুন মাত্রা। এটা রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি ঘরে ঘরে অভিভাবকদের আরও সজাগ ও সচেতন হতে হবে। তার সন্তান কোথায় যাচ্ছে, সে কী আদর্শ লালন করছে তা ভাবার ও যাচাই করার সময় এসেছে।
সূত্র জানায়, সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘাঁটি গেড়েছে উগ্রপন্থি দলের নেতারা। অপরাধ বিশ্লেষক ও নজরদারির সাথে জড়িতরা বলছেন, শিক্ষিত যুবকদের ব্রেনওয়াশ করে জিহাদি চেতনায় উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এজন্য বিদেশ থেকে ঘন ঘন ডেলিগেট আসছে। তারাও কৌশলে ইসলাম ধর্মের নানা দিক তুলে ধরে অত্যন্ত মেধাবী তরুণদের মগজ ধোলাই করছে। কথার জালে ফেলে কোমলমতি কিছু শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে। বিত্তশালী পরিবারের পাশাপাশি দরিদ্র ঘরের মেধাবী সন্তানদেরও দলে টানছে এরা। অনেক ক্ষেত্রে দরিদ্র পরিবারের মেধাবী ছাত্র বা ছাত্রীর শিক্ষার ব্যয়ভার নিজেরা বহন করছেন। শিক্ষার ব্যয় বহনের নামে কার্যত ওই ছাত্র বা ছাত্রীকে তারা কিনে ফেলছে। ভবিষ্যতে তারা এই চক্র থেকে আর বের হতে পারে না। ভয়াবহ এই জঙ্গি জালে প্রিয় সন্তান কখন জড়িয়ে পড়েছে প্রথম দিকে পরিবারের অন্য সদস্যরা তা জানতেও পারেন না। যখন বুঝতে পারেন তখন অনেক দেরি হয়ে যায়।
জানা গেছে, ২০১৩ সালের রাজিব খুনের পর আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সন্ধান পায় গোয়েন্দারা। আর চলতি বছর জঙ্গি কানেকশনে নতুন মাত্রা যোগ করে আইএস। সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সূত্রগুলো জানায়, উচ্চশিক্ষিত ও ধনাঢ্য পরিবারের সন্তানরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে বিশেষ সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন উইকার ব্যবহার করছে। এই সফটওয়্যার ব্যবহার করে নিজেরা সংগঠিত হচ্ছে। বাংলাদেশে অবস্থানরত আইএস’র প্রধান সমন্বয়কারী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম বেগ ও তার অন্যতম সহযোগী সাকিব গ্রেফতার হওয়ার পর এসব তথ্য জানতে পারেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। দীর্ঘদিন ধরেই আইএস কর্মীরা নিজেদের যোগাযোগের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম উইকার ব্যবহার করে আসছেন। এই সফটওয়্যারে ছয় মিনিট পরপর ডাটাগুলো নষ্ট হয়। আর তা পুনরুদ্ধার করা যায় না। বর্তমানে উচ্চপ্রযুক্তি জানা জঙ্গি সদস্যরা এ কৌশল ব্যবহার করছে।