দামুড়হুদার আরামডাঙ্গায় চুরি হওয়া টাকা উদ্ধার করতে জিনভর করা মহিলা কবিরাজ এনে বসানো হয় বার : খাওয়ানো হয় চালপড়া
দামুড়হুদা/কার্পাসডাঙ্গা প্রতিনিধি: দামুড়হুদা কার্পাসডাঙ্গার আরামডাঙ্গা গ্রামে চুরির অপবাদ সহ্য করতে না পেরে ছাবিকুন নাহার (২০) নামের এক কলেজছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। সে ওই গ্রামের আমির বিশ্বাসের মেয়ে এবং দামুড়হুদা আব্দুল ওদুদ শাহ ডিগ্রি কলেজের বিএ ১ম বর্ষের ছাত্রী। গত শুক্রবার বিকেলে ওই গ্রামের কামাল কসাইয়ের নিজ ঘর থেকে ১ লাখ ৩২ হাজার টাকা চুরি হয়ে যায়। অভিযোগের তীর ছোড়া হয় প্রতিবেশী ওই কলেজছাত্রীর দিকে। চুরি হয়ে যাওয়া টাকা উদ্ধার করতে জিনভর করা মহিলা কবিরাজ ডেকে শুক্রবার সন্ধ্যায় কামালের বাড়িতে বসানো হয় বার। অভিযুক্ত কলেজছাত্রীকে চালপড়াও খাওয়ানো হয়। গতকাল শনিবার সকালে চুরি হওয়া ১ লাখ ৩২ হাজার টাকার মধ্যে ১ লাখ ১৯ হাজার টাকা অন্যভাবে উদ্ধার হলেও বার বসিয়ে এবং চালপড়া খাইয়ে চোর ধরতে পারেনি ওই জিনভর করা মহিলা কবিরাজ। শেষমেষ চুরির অপবাদ সইতে না পেরে গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঘরের সিলিং ফ্যানের সাথে নিজের ওড়না পেচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে ছাবিকুন নাহার নামের ওই কলেজছাত্রী। এ ঘটনায় নিহত কলেজছাত্রীর পিতা থানায় অপমৃত্যু মামলা করলে পুলিশ দুপুর আড়াইটার দিকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে পাঠায়। সন্ধ্যায় লাশের ময়নাতদন্ত শেষে রাত ১০টার দিকে নিজ গ্রামের কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়।
এলাকা সূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার আরামডাঙ্গা গ্রামের রুহুল বিশ্বাসের ছেলে কামাল কসাইয়ের ঘর থেকে গত শুক্রবার বিকেলে ১ লাখ ৩২ হাজার টাকা চুরি হয়ে যায়। অভিযোগের তীর ছোড়া হয় প্রতিবেশী আমির বিশ্বাসের মেয়ে দামুড়হুদা আব্দুল ওদুদ শাহ ডিগ্রি কলেজের বিএ ১ম বর্ষের ছাত্রী ছাবিকুন নাহারের দিকে। ঘটনার পরপরই চোর ধরতে ডেকে আনা হয় দামুড়হুদার কুনিয়া চাঁদপুর থেকে বুলবুলি নামের এক জিনভর করা মহিলা কবিরাজকে। সন্ধ্যায় কসাই কামালের বাড়িতে বসানো হয় বার। ডেকে নেয়া হয় অভিযুক্ত ওই কলেজছাত্রীকে। দীর্ঘসময় ধরে ঝাড়ফুঁক শেষে ওই মহিলা কবিরাজ কর্তৃক পড়ে দেয়া চাল খাওয়ানো হয় কলেজছাত্রীকে। কিন্তু তাতেও চোর প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয় ওই জিনভর করা বুলবুলি নামের মহিলা কবিরাজ। উদ্ধার করতে পারেনি চুরি হয়ে যাওয়া টাকা।
এ বিষয়ে কামাল কসাইয়ের স্ত্রী ছালমা খাতুন বলেন, গত শুক্রবার বিকেলে সে আমাদের বাড়িতে আসে এবং মোবাইলফোনে চার্জ দেয়ার নাম করে ঘরে ঢোকে। মিনিট পনের পর ঘর থেকে নেমে তাড়াহুড়ো করে সে নিজ বাড়িতে চলে যায়। আমার সন্দেহ হলে আমি ঘরে ঢুকে দেখি ড্রয়ারে রাখা টাকা নেই। কামালের মা ছফুরা বেগম বলেন, ওই মেয়ে বেশ কিছু দিন আগে তার খালাবাড়ি থেকে সোনার গয়না চুরি করে ধরা পড়েছিলো। সুতরাং টাকা ওই মেয়েই চুরি করেছে।
গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কলেজছাত্রী ছাবিকুন নাহার কার্পাসডাঙ্গা বাজারে যাওয়ার উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হয়ে কামাল কসাইয়ের বাড়ির কাছে পৌঁছুলে কামাল কসাইয়ের বড় বোন শরিফা খাতুন তার পথরোধ করে এবং রাস্তার ওপর ওই টাকার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে ওই কলেজছাত্রীর কাছে থাকা একটি খামের মধ্য থেকে ৪৬ হাজার টাকা উদ্ধার হয়। এ ঘটনার পর তাকে রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় কামালের বাড়িতে এবং গাছের সাথে বেঁধে রেখে মারধরও করা হয়। এর কিছুক্ষণ পর স্থানীয় পত্রিকার এক সাংবাদিককে সাথে নিয়ে কামালের বাড়িতে হাজির হন সাইফুল ও মিন্টু নামের দু যুবলীগ নেতা। তাদের উপস্থিতিতে ওই কলেজছাত্রীর ঘরের মধ্য থেকে উদ্ধার হয় আরো ৭৩ হাজার টাকা।
বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেশীদের কটূক্তিসহ সমালোচনার মুখে পড়ে ওই কলেজছাত্রী। এরই এক পর্যায়ে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কলেজছাত্রী ছাবিকুন নাহার নিজ বাড়িতে ফিরে আসে এবং চুরির অপবাদ আর লোকলজ্জার ভয়ে ঘরের সিলিং ফ্যানের সাথে ওড়না পেচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে।
এ বিষয়ে নিহত কলেজছাত্রীর মা বিলকিছ বেগম বলেন, আমার মেয়ে ওই টাকা চুরি করেনি। তাকে জোর করে চোর সাব্যস্ত করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, জনসম্মুখে তাকে গাছের সাথে বেঁধে মারধর করার পর ওই চুরির অপবাদ সহ্য করতে না পেরে সে আত্মহত্যা করেছে। এ বিষয়ে দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি কামরুজ্জামান বলেন, ঘটনাটি জানার সাথে সাথে আমি ঘটনাস্থলে ছুটে যাই এবং উপস্থিত লোকজনের কাছ থেকে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। নিহত কলেজছাত্রীর পিতা দুপুর ১টার দিকে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়েরের পর দুপুর আড়াইটার দিকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে পাঠানো হয়। সন্ধ্যায় লাশের ময়নাতদন্ত শেষে রাত ৯টার দিকে লাশ নিজ বাড়িতে নেয়া হয় এবং রাত ১০টার দিকে নামাজে জানাজা শেষে নিজ গ্রামের কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়। দু ভাই-বোনের মধ্যে সে ছিলো বড়। একমাত্র ছোট ভাই উজ্জ্বল ৮ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত।