স্টাফ রিপোর্টার: প্রায় এক মাস আগে একটি সংঘবদ্ধ চক্র ঢাকার দক্ষিণখান এলাকার ব্যবসায়ী ফয়েজ আহম্মেদকে মালয়েশিয়ায় অপহরণ করে। অপহরণকারীরা দেশে ফয়েজের পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করে ২৮ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করে তাকে ছেড়ে দেয়। র্যাব এ অভিযোগ পাওয়ার পর দেশের তিন জেলা থেকে ওই চক্রের সাথে জড়িত সাতজনকে আটক করে। গতকাল শুক্রবার র্যাব-১১ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
র্যাব বলেছে, এ অপহরণের মূল পরিকল্পকের নাম লোকমান হোসেন। অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায়ে সহযোগিতা করার জন্য লোকমানের স্ত্রী শাকিলা আক্তার, বোন আলেয়া বেগম, ভগ্নিপতি আবুল কালাম আজাদ, ভাগনে আল আমিন আসিফ, দূরসম্পর্কের ভাই আব্দুল্লাহ, লোকমানের সহযোগী জনির মা মাহমুদা পারভীন ও মো. আওলাদ হোসেন নামের এক হুণ্ডি ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত বুধ ও বৃহস্পতিবার দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়।
র্যাবের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত ২৩ জুলাই ব্যবসায়ী ফয়েজ আহম্মেদ মালয়েশিয়া যান। সেখানে তাকে লোকমান, তার সহযোগী জনি ও এক মালয়েশীয় ব্যক্তি রাস্তা থেকে অপহরণ করে আটকে রাখেন। ১৭ দিন পর তারা বাংলাদেশে ফয়েজের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে মুক্তিপণ হিসেবে এক কোটি টাকা দাবি করেন। ঘটনা জানতে পেরে ফয়েজের পরিবার দক্ষিণখান থানায় জিডি করে। কিন্তু অপহরণকারীদের চাপের মুখে তারা প্রথমে অপহরণকারীদের ১৩ লাখ টাকা দেন। নারায়ণগঞ্জ শহরের ২ নং রেলগেট এলাকায় লোকমানের স্ত্রী শাকিলার কাছে ওই টাকা দেয়া হয়। কিন্তু অপহরণকারীরা পরে আরও ৫০ লাখ টাকা দাবি করে। পরে আরও দু দফায় লোকমানের বোন আলেয়ার উকিল ভাই আবদুল্লাহর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়।
অপহরণকারীরা মুক্তিপণের ২৮ লাখ টাকা আদায়ের পর গত ১৮ আগস্ট ব্যবসায়ী ফয়েজ আহম্মেদকে ছেড়ে দেয়। তিনি ১৯ আগস্ট মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরে তিনি জানান, মালয়েশিয়ায় বন্দী থাকা অবস্থায় তাকে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব আরও জানায়, গত ১৬ আগস্ট অপহৃতের পরিবার র্যাব-১১ এর কার্যালয়ে এসে অপহরণের বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করে। এরপর র্যাব এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে শুরু করে। একপর্যায়ে তারা আসামিদের শনাক্ত এবং ব্যাংক লেনদেনের বিষয়ে নিশ্চিত হয়। এরপর র্যাব গত বুধ ও বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও মুন্সিগঞ্জ থেকে ওই সাতজনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ১৪ লাখ ৯৯ হাজার ৮১৪ টাকাও উদ্ধার করা হয়।
র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান আরও বলেন, এটি একটি সুপরিকল্পিত অপহরণ। অপহৃত ফয়েজ আহমেদ ব্যবসায়িক কাজে দু বছর ধরে নিয়মিতভাবে মালয়েশিয়া যাতায়াত করতেন। আসামিরা দীর্ঘদিন ধরে তাকে অনুসরণ করে এবং তার পরিবারের সদস্যদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নিয়ে তাকে অপহরণ করে। তিনি আরও জানান, মূল অপহরণকারী লোকমান হোসেন, ফখরুদ্দীন আলী আহমেদ জনি ও মো. শরিফ এখনো মালয়েশিয়ায় পলাতক রয়েছেন।