শিশুর হাতে ও পেটে গুলি

স্টাফ রিপোর্টার: মাগুরার পর এবার কুমিল্লায় মাদকব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীদের দু গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে লড়ছে তানভীর হাসান হূদয় নামে পাঁচ বছরের এক শিশু। সে সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রতিদিনের মতো আরবি পড়ার জন্য পাঞ্জাবি পরে স্থানীয় একটি মক্তবে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়েছিলো। এ সময় এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীদের দু গ্রুপে সংঘর্ষ চলছিলো। একপর্যায়ে আনোয়ার নামে একটি পক্ষের মাদক ব্যবসায়ী ওই বাড়িতে ঢুকে গেট লাগিয়ে দেয়। এ সময় নাজিম নামে অপর সন্ত্রাসী গেটের নিচে দিয়ে নাজিমকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে। এ সময় গুলি ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা শিশু হূদয়ের পেটের এক পাশ দিয়ে ঢুকে অপর পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। একটি গুলি শিশুটির বাম হাতে বিদ্ধ হয়।

গতকাল রোববার সকালে নগরীর শুভপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে শিশুটিকে রক্তাক্ত অবস্থায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে চিকিত্সাধীন রয়েছে। বিকালে কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো. শাহ আবিদ হোসেন হাসপাতালে ওই শিশুকে দেখতে গিয়ে চিকিত্সার জন্য তার নানা মফিজ উদ্দিনের হাতে ৫ হাজার টাকা প্রদান করেন এবং শিশুর যাবতীয় চিকিত্সা খরচ পুলিশের পক্ষ থেকে দেয়ার আশ্বাস দেন। গুলিবিদ্ধ শিশু হূদয় নগরীর শুভপুর এলাকার ভ্যানচালক আরিফ মিয়ার ছেলে। শিশুটির বাম হাতে বিদ্ধ গুলিটি বের করতে আজ সোমবার কুমেক হাসপাতালে অপারেশন করা হবে বলে চিকিত্সকরা জানিয়েছেন। এরপর কুমিল্লায় শিশু হূদয়ের পেটে গুলিবিদ্ধের এ ঘটনায় নগরীতে তোলপাড় শুরু হয়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৭ ডিসেম্বর নগরীর চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী পূর্ব চানপুরের ভাবনা পুকুরপাড় এলাকার মিজান মিয়ার পুত্র নাজিম ও তার সহযোগী পিন্টু কুমার দাসকে বিদেশি অস্ত্রসহ পুলিশ গ্রেফতার করে। তাদের গ্রেফতারের নেপথ্যে একই এলাকার প্রতিপক্ষ গ্রুপের সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী আনোয়ারের যোগসাজশ রয়েছে বলে নাজিম সন্দেহ করে আসছিল। এরই মধ্যে অস্ত্র মামলায় পুলিশ আদালতে নাজিমের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে। গত ৫ দিন আগে নাজিম জেলহাজত থেকে জামিনে বেরিয়ে আসে। অস্ত্রসহ তাকে গ্রেফতারের জের ধরে নাজিম ও তার সহযোগীরা রবিবার সকালে প্রতিপক্ষ গ্রুপের আনোয়ারের ওপর হামলা চালায়। উভয় গ্রুপ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় ১০-১২ রাউন্ড গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের একপর্যায়ে আনোয়ার দৌড়ে ভ্যানচালক আরিফের বাড়িতে ঢুকে গেট লাগিয়ে দেয়। শিশুর নানা মফিজ উদ্দিন ও মা মাহফুজা বেগম জানান, হূদয় মক্তবে যাওয়ার জন্য তাদের ঘরের সামনে দাঁড়িয়েছিল। এসময় সন্ত্রাসীদের গুলি হূদয়ের তলপেটের এক পাশ দিয়ে প্রবেশ করে অপর পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায় এবং তার বাম হাত গুলিবিদ্ধ হয়। সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।

শিশু হৃদয়ের বাবা আরিফ নগরীর গাংচর এলাকার তিব্বত কোম্পানির ভ্যানচালক। শুভপুর এলাকার তার বাড়িটি বিক্রি করে প্রায় একমাস পূর্বে একই এলাকার হাবিব মিয়ার বাড়ি ভাড়া নিয়ে পরিবার-পরিজনসহ বসবাস করে আসছে। এ সংঘর্ষে দুই গ্রুপের আরো তিনজন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। এদিকে বিকালে কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো. শাহ আবিদ হোসেনসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গুলিবিদ্ধ শিশু হূদয়কে দেখতে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যান।

কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি মো. খোরশেদ আলম জানান, এ ঘটনায় আহত শিশুর পিতা আরিফ মিয়া বাদী হয়ে নাজিমকে আসামি করে অজ্ঞাতনামা আরো ৪-৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো. শাহ আবিদ হোসেন জানান, সন্ত্রাসী নাজিম এর আগে অস্ত্রসহ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলো।