চুয়াডাঙ্গায় জেএমবির বোমা হামলা স্বাক্ষীর অভাবে দশ বছরেও নিষ্পত্তি হয়নি মামলা!

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় গত দশ বছরেও তেমন অগ্রগতি হয়নি ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট বহুল আলোচিত সিরিজ বোমা বিস্ফোরণের মামলাটি। মামলার ৪৬ জন সাক্ষীর মধ্যে বেশির ভাগ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ এখনও বাকি রয়েছে। আইনজীবীদের মতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সাক্ষীদের অনুপস্থিতির কারণে মামলার এ দীর্ঘসূত্রতা দেখা দিয়েছে।

এদিকে এ মামলার অন্যতম আসামি রকিব হোসেন ওরফে হাফেজ মাহমুদের নামে দেশে ২৯টি মামলা ছিলো। এর মধ্যে সে একটি মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ছিলো। গত বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে পালানোর পরদিন টাঙ্গাইলে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। অপর আসামি শায়খুল ইসলাম চুয়াডাঙ্গা জেলা কারাগারে বন্দী আছে। এ মামলার পরবর্তী ধার্য দিন রয়েছে আগামী ২ সেপ্টেম্বর।

জানা গেছে, ২০০৫ সালে ১৭ আগস্ট সারাদেশের সাথে চুয়াডাঙ্গায় সিরিজ বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ওই দিন চুয়াডাঙ্গা শহরের কোর্ট মোড়, সদর থানা, তথ্যঅফিস, রেলস্টেশন, মাছপট্টি চত্বরে বোমা বিস্ফোরণ ঘটে এবং শিল্পকলা একাডেমী চত্বর থেকে একটি তাজা বোমা উদ্ধার করা হয়। পুলিশ ঘটনার পর প্রতিটি জায়গা থেকে জেএমবির প্রচারপত্র উদ্ধার করে।

এদিকে ১৭ আগস্টের বোমা বিস্ফোরণে চুয়াডাঙ্গার দৌলাতদিয়াড় গ্রামের বাদল হোসেন (৫০) ও হাতিকাটা গ্রামের হিরক হোসেন (২৫) নামের দু ব্যক্তি বোমার আঘাতের ক্ষত দশ বছর ধরে বয়ে বেড়ালেও সরকারি, বেসরকারি ও সমাজের দানশীল কেউ সাহায্যে এগিয়ে না আসায় চরম দারিদ্রতার মধ্যে তাদের দিন কেটেছে। বোমা বিস্ফোরণে বাদলের ডান চোখ চিরতরে অন্ধ এবং হিরকের ডান চোয়ালের মাংস ঝলসে যায়। চিকিৎসা না পেয়ে হিরক গত দু মাস আগে মারা গেছে বলে জানিয়েছেন ওই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত বাদল হোসেন। সেই দুঃসহ স্মৃতি এখনও বয়ে বেড়াচ্ছেন বাদল।

বাদল হোসেন জানান, ২০০৫ সালে বোমা বিস্ফোরণে আহত হয়ে হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা করাতে সে সময়ে বেশ কিছু টাকা খরচ হয়। ওই সময়ে অনেকেই সাহায্যের কথা বললেও পরবর্তীতে কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়।

ঘটনার পর সদর থানার এসআই আব্দুল মোতালেব বাদী হয়ে সদর থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। জেলা গোয়েন্দা পুলিশের তৎকালীন এসআই এএইচএম কামরুজ্জামান খাঁন তদন্ত শেষে ২০০৭ সালের ৮ মার্চ জেএমবির খুলনা বিভাগীয় প্রধান রকিব হাসান ওরফে হাফেজ মাহমুদ, পিতা আব্দুস সোবহান সাং ফুলসেন্না, থানা- মেলান্দহ, জেলা জামালপুর এবং এসহার সদস্য শায়খুল ইসলাম ওরফে রাকিব ওরফে মুয়াজ পিতা আলতাফ হোসেন, গ্রাম- পঞ্চকরণ, থানা- মোড়েলগঞ্জ, জেলা- বাগেরহাটকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এএইচএম কামরুজ্জামান খাঁন বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-২ এ বিচারাধীন এই মামলায় মোট সাক্ষীর সংখ্যা ৪৬ জন। আদালতসূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত কয়েকজন সাক্ষী তাদের সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-২’র সহকারী সরকারি কৌসুলি (এপিপি) অ্যাড. বেলাল হোসেন জানান, মামলার ধার্য দিনে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সাক্ষীদের অনুপস্থিতির কারণে মামলাটি চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হতে বিলম্বিত হচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা কারাগারের জেলসুপার মো. আনোয়ারুজ্জামান জানান, আগামী ২ সেপ্টেম্বর এ মামলার পরবর্তী দিন ধার্য রয়েছে। মামলার একমাত্র আসামি শায়খুল ইসলাম জেলা কারাগারে বন্দী।

Leave a comment